ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

মর্মাহত বাসেত মজুমদার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৩ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০১৭
মর্মাহত বাসেত মজুমদার আবদুল বাসেত মজুমদার

ঢাক‍া: এক ব্যবসায়ী হত্যা চেষ্টা মামলায় চট্টগ্রাম নগর পুলিশের তালিকাভূক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী আব্দুল কুদ্দুস কসাই ওরফে কানা কুদ্দুসের জামিন শুনানির সময় আইনজীবীর ভূমিকা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে মর্মাহত হয়েছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার।

বৃহস্পতিবার (০৮ জুন) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্ট‍া পরিষদের এই সদস্য বলেন, ‘গত মঙ্গলবার (০৬ জুন) হাইকোর্টের সাত নম্বর এনেক্স কোর্টে এ আগাম জামিনের আবেদনের প্রেক্ষিতে যে ঘটনা ঘটেছে, তা বিভিন্ন পত্রিকায় বিকৃতভাবে প্রকাশ করায় আমি তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি’।

‘দীর্ঘ ৫০ বছরের ওকালতি জীবনে এ ধরনের ঘটনা আমাকে আগে কখনো সম্মুখীন হতে হয়নি’ উল্লেখ করে বার ‍কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘মূল ঘটনা হলো, জুনিয়র আইনজীবী রেজাউল করিম আমাকে একটি আগাম জামিনের আবেদনের শুনানির জন্য অত্যন্ত পীড়া-পীড়ি করেন।

শেষ পর্যন্ত তার অনুরোধে এই মামলাটির শুনানি করি’।
 
বাসেত মজুমদার বলেন, ‘বিচারপতি মো. মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি এ এন এম বসির উল্লাহ’র হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানিকালে বলেন, ‘অপরাধ অত্যন্ত গুরুতর, তাকে আগাম জামিন দেবো না, তাকে জেলে পাঠিয়ে দেবো এবং পুলিশকে বললেন, ব্যবস্থা করার জন্য। আমি মক্কেলের পক্ষে বিনয়ের সঙ্গে আবেদন করলাম যে, দয়া করে এই রোজার মাসে তাকে ক্ষমা করে দেন। এ সময় কোর্টের সঙ্গে কিছু কথাবার্তা হয়। এক পর্যায়ে কোর্টের কথাবার্তায় আমার কাছে মনে হলো যে, কোর্ট বোধহয় তাকে ক্ষমা করেছেন। এখানে উল্লেখ্য যে, কিছুদিন থেকে আমি অনুভব করছি যে, আমার কথা শুনতে একটু অসুবিধা হচ্ছে’।
 
‘তাই কোর্ট থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশের জিজ্ঞাসায় আমি বলেছি, মনে হয় কোর্ট বিষয়টি ক্ষমা করে দিয়েছেন। এই বলে আমি অন্য কোর্টে চলে গেলাম’।
 
তিনি বলেন, ‘পরে আমাকে সংবাদ দিলেন, কোর্টে আসার জন্য। সে মতে কোর্টে এলে বিচারপতি আমাকে বলেন, আমি তো ওকে ছাড়ি নাই। আপনি তাকে ছাড়তে বললেন কেন? আমি বললাম, যা হোক, বোধহয় আমার হয়তো শুনতে অসুবিধা হয়েছে’।
 
‘এ পর্যায়ে বিচারপতি আমাকে আদেশ দিলেন, জুনিয়রকে নিয়ে আসার জন্য। পরে জুনিয়রকে খবর দিয়ে নিয়ে এলাম এবং বিচারপতি তাকে আদেশ দিলেন, মক্কেলকে নিয়ে আসার জন্য। জুনিয়র কিছুক্ষণ পরে মক্কেলকে নিয়ে এলেন এবং আদালত আসামিকে জেলখানায় পাঠিয়ে দিলেন। এ ঘটনা বিকৃতভাবে পত্র-পত্রিকায় উপস্থাপনে আমি অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছি’।

বিফ্রিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক বশির আহমেদ প্রমুখ।
 
মঙ্গলবার বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি এ এন এম বসির উল্লাহ’র হাইকোর্ট বেঞ্চ সন্ত্রাসী আব্দুল কুদ্দুস কসাই ওরফে কানা কুদ্দুসের জামিন নামঞ্জুর করে তাকে পুলিশে দিতে বলেন।

ওই দিন সংশ্লিষ্ট আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ এ কে এম মনিরুজ্জামান কবির সাংবাদিকদের বলেন, একজন ব্যবসায়ী হত্যা চেষ্টা মামলায় চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী আব্দুল কুদ্দুস হাইকোর্টে স্বশরীরে আগাম জামিন নিতে এসেছিলেন। আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে পুলিশের হাতে সোপর্দের নির্দেশ দেন। কিন্তু পুলিশকে বিভ্রান্ত করে আসামির আইনজীবী কৌশলে সন্ত্রাসী কুদ্দুসকে আদালত চত্বর থেকে বের করে দেন।
 
বিষয়টি নজরে আনার পর আইনজীবীকে তলব করেন হাইকোর্ট। তাৎক্ষণিকভাবে এজলাসকক্ষে উপস্থিত হওয়ার পর আদালত তাকে ভর্ৎসনা করে দ্রুত আসামিকে পুলিশের জিম্মায় দিতে নির্দেশ দেন।
 
এ অবস্থায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন ও সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন আদালতকক্ষে এসে আইনজীবীর পক্ষে ঘটনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। পাশাপাশি আসামিকে হাজির করারও প্রতিশ্রুতি দেন।
 
প্রতিশ্রুতি অনুসারে আসামিকে ডেকে এনে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হলে ওই আইনজীবী এজলাসকক্ষ থেকে বের হওয়ার অনুমতি পান বলেও জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল।

শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত আব্দুল কুদ্দুস কসাই ওরফে কানা কুদ্দুস চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামি থানার জালালাবাদ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

সম্প্রতি বায়েজিদ বোস্তামি এলাকার ব্যবসায়ী নাজিমুদ্দিনকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। এ ঘটনায় গত ১২ এপ্রিল বায়েজিদ বোস্তামি থানায় কুদ্দুসহ ২৮ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। এ মামলায় আগাম জামিন নিতে হাইকোর্টে এসেছিলেন আসামি কুদ্দুস।

২০১৫ সালের ০১ সেপ্টেম্বর বায়েজিদ থানার শেরশাহ কলোনি এলাকায় গুলি করে হত্যা করা হয় যুবলীগ নেতা মেহেদী হাসান বাদলকে। এ ঘটনায় নিহত মেহেদীর স্ত্রী মোবাশ্বেরা মিশু বাদী হয়ে ২২ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলারও আসামি কানা কুদ্দুস।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৩ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০১৭
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।