ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

৭ দিনের মধ্যে গঠন করতে হবে লেকহেডের ম্যানেজিং কমিটি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০১৭
৭ দিনের মধ্যে গঠন করতে হবে লেকহেডের ম্যানেজিং কমিটি

ঢাকা: জঙ্গি কার্যক্রমে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগে বন্ধ করে দেওয়া রাজধানীর ধানমন্ডি ও গুলশানের লেকহেড স্কুলে সাত দিনের মধ্যে ম্যানেজিং কমিটি গঠনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্‌হাব মিঞার নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার আখতার ইমাম।

সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

পরে রাশনা ইমাম বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে সাত দিনের মধ্যে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠন করতে হবে। এই কমিটিতে সেনাবাহিনীর দুজন প্রতিনিধিকে রাখতে বলা হয়েছে। দুই সেনা প্রতিনিধির মধ্যে শিক্ষা কোরের কর্মকর্তাকে স্কুলটির অধ্যক্ষ করতে বলা হয়েছে। এই কমিটি স্কুলটির নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম নিশ্চিত করবে। আশা করছি সাতদিনের মধ্যে স্কুলটি খুলে যাবে। অনিশ্চয়তা কেটে গেলো। ।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, লেকহেড স্কুলটির অনেক অনিয়ম। এটির গভর্নিংবডি নেই, শিক্ষকদের বিজ্ঞাপন দিয়ে নিয়োগ করা হয়নি ইত্যাদি, ইত্যাদি। এছাড়া স্কুলটির বিরুদ্ধে সরকারের সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো- স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা এবং অনেক প্রাক্তন শিক্ষক, বর্তমান শিক্ষক, কিছু অভিভাবকের সাথে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা আছে।

তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে আমরা আদালতের কাছে কিছু ক্লাসিফাইড তথ্য দিয়েছি। এর ভিত্তিতে দেশের সর্বোচ্চ আদালত আদেশ দিয়েছেন আগামী সাত দিনের ভেতরে শিক্ষা সচিবের অধীনে ঢাকার ডিভিশনাল কমিশনারকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি কমিটি করার জন্য।

এই কমিটি স্কুল পরিচালনার ব্যাপারে দেখভাল করবে। এই কমিটি সেনাবাহিনীর শিক্ষা কোরের কর্মকর্তাদের ভেতর থেকে একজনকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেবে। সাত দিনের মধ্যে এসব হলেই স্কুলটি আবার চালু করা যাবে।

স্কুল খোলার বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল গ্রহণ (আপিলের অনুমতি) করা হয়েছে। এখন আপিল শুনানি হবে। কোন কোন গ্রাউন্ডে শুনানি করবো ইতিমধ্যে সে নোট আদালতে জমা দিয়েছি।  

এর আগে গত ৬ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব সালমা জাহান বাংলানিউজকে বলেছিলেন, ‘স্কুলটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোগ আসছিলো। তদন্তের পর আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। ’

স্কুলটির কার্যক্রম বন্ধের বিষয়ে ঢাকার জেলা প্রশাসককে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলেও জানান যুগ্ম সচিব।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘ঢাকা মহানগরীর ধানমন্ডি ও গুলশানে অবস্থিত লেকহেড গ্রামার স্কুলটির মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না থাকায় এবং ধর্মীয় উগ্রবাদে অনুপ্রেরণা দেওয়া, উগ্রবাদী সংগঠন সৃষ্টি, জঙ্গি কার্যক্রমে পৃষ্ঠপোষকতাসহ জাতীয়/স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করায় প্রতিষ্ঠানটির সব কার্যক্রম বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

এরপর স্কুলটির মালিক খালেদ হাসান মতিন ও ১২ শিক্ষার্থীর অভিভাবক রিট করেন। পরে স্কুলটির কার্যক্রম বন্ধের পর এ সিদ্ধান্ত কেন আইনগত কর্তৃত্ব-বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, বন্ধ করে দেওয়া লেকহেড স্কুলের মালিককে স্কুলটি খোলা ও পরিচালনা করতে দেওয়ার জন্য কেন বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হবে না মর্মে গত ৯ নভেম্বর রুল জারি করেন হাইকোর্ট। স্কুলটির মালিক খালেদ হাসান মতিন ও ১২ শিক্ষার্থীর অভিভাবকের রিট আবেদনে প্রেক্ষিতে ওই রুল জারি করা হয়।

এরপর ১৪ নভেম্বর হাইকোর্ট ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্কুল খুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পর চেম্বার বিচারপতির আদালত হাইকোর্টের রায় স্থগিত করে নিয়মিত বেঞ্চে পাঠান। আপিল বিভাগ ১৯ নভেম্বর স্কুলের কেউ জঙ্গিবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কি-না, সে বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ।

সে অনুসারে গত বৃহস্পতিবার অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতে বলেছেন, রিপোর্টটি এসে পৌঁছেছে। তারা এটা দেখার সুযোগ পাননি। দেখে এ বিষয়ে শুনানি করবেন। তখন আদালত তাদের একদিন সময় দেন। বিষয়টি আবার রোববার (৩ ডিসেম্বর) শুনানির জন্য দিন ঠিক করেন আপিল বিভাগ। সে অনুসারে রোববার (৩ ডিসেম্বর) আপিল বিভাগে শুনানি হয়। ওই দিন ৫ ডিসেম্বর এ বিষয়ে আদেশের জন্য দিন ধার্য করা হয়।

পরে রোববার ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, শুনানি শেষ হয়েছে। আদেশের জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করেছেন আদালত। অ্যাটর্নি জেনারেল স্কুলের ম্যানেজমেন্ট এবং শিক্ষক শিক্ষিকার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়েছেন। আমরাও গত বৃহস্পতিবার একটি প্রতিবেদন দিয়েছিলাম। তবে অ্যাটর্নি জেনারেলের প্রতিবেদনে কি আছে আমরা জানি না।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার স্কুলের পরিচালনা পর্ষদ (ম্যানেজমেন্ট) ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের যাবতীয় তথ্য সুপ্রিম কোর্টে উপস্থাপন করা হয়েছে

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫,২০১৭
ইএস/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।