তবে এ গেজেট নিয়ে যারা সমালোচনা করছেন তারা অবশ্যই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত সমালোচনা করছেন বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
সোমবার (১১ ডিসেম্বর) জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্যের জন্য জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালা ২০১৭ এর গেজেট জারি করে আইনমন্ত্রণালয়।
বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি সংবাদ সম্মেলন করে। এর নেতৃত্বে ছিলেন সভাপতি জয়নুল আবেদীন ও সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। দু’জনই বিএনপির উচ্চপদস্থ নেতা। এর কিছুক্ষণ পর সমিতির সিনিয়র সহ সভাপতি অজি উল্লাহও ব্রিফিং করেন। যিনি সরকার সমর্থক হিসেবে পরিচিত।
এদিকে অ্যাটর্নি জেনারেলও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
সমিতি অডিটোরিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জয়নুল আবেদীন বলেন, নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকিরর শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় যে গেজেট প্রকাশ করেছে তা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী। তাই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ৭ জানুয়ারির মধ্যে সমিতির পক্ষ থেকে পুনরায় গেজেট প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
গেজেটের সমালোচনা করে তিনি বলেন, অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরি ও শৃঙ্খলা বিধি যে প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ করা হয়েছে সেই প্রক্রিয়াটি সংবিধান বহির্ভূতই নয়, তা অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্খিত। এর মাধ্যমে বিচার বিভাগকে আজ ধ্বংসের দারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
তবে এ সংবাদ সম্মেলনের সঙ্গে একমত পোষণ না করে সমিতির সভাপতির কক্ষের সামনে অজি উল্লাহ বলেন, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিকে বিচার কর্মে নিয়োজিত এবং বিচার বিভাগে দায়িত্বপালনরত ব্যক্তিদের শৃঙ্খলা বিধিসহ সব রকমের আচার-আচরণ সংক্রান্ত সব কিছু করার ক্ষমতা সংবিধান দিয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির উপরই চূড়ান্ত ক্ষমতা থাকবে।
তিনি বলেন, আপিল বিভাগের বিচারপতিদের সঙ্গে পরামর্শ করেই এ বিধিমালা প্রণয়ন করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। ইতোপূর্বে আইনমন্ত্রী বলেছেন, বিধিমালা নিয়ে যে ত্রুটি বিচ্ছুতি ছিল তা নিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিদের সঙ্গে বসে নিরসন করা হয়েছে।
এদিকে এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এই গেজেটা আজ (বুধবার) সকালে উপস্থাপন করতে গিয়েছিলাম। আদালত বলেছেন ২ জানুয়ারি উপস্থাপন করতে। কারণ আজকে সব বিচারপতি ছিলেন না।
তিনি বলেন, আমি যতখানি জানি এই গেজেটটি প্রণয়নের আগে আইনমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের বিচারপতিদের সঙ্গে, এটা নিয়ে কথাবার্তা বলেছেন এবং তাদের সম্মতি অনুসারে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। আর এই গেজেট সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতিসহ অন্যান্য যারা বিরূপ মন্তব্য করছেন তারা সঠিকভাবে মন্তব্যগুলো করছেন না। তাদের মন্তব্যগুলো সঠিক না।
‘তার কারণ হলো, রাষ্ট্রপতি প্রজাতন্ত্রের সবাইকে নিয়োগ করেন। নির্বাহী বিভাগের কর্মচারীদের, প্রধান বিচারপতিকে, অন্যান্য বিচারপতিদের নিয়োগ দেন এবং পার্লামেন্টের সেশনও তার আদেশে শুরু এবং সমাপ্ত হয়। রাষ্ট্রপতিকে যদি এই বিচারপতিদের শৃঙ্খলাবিধির দায়িত্ব থেকে বা তার কর্তৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয় এবং সুপ্রিম কোর্টই যদি সব করে, তাহলে তা সংবিধানের স্পিরিটের বাইরে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে, যত আইন বা রুলস হয় এগুলো সংবিধানের অনুচ্ছেদের পরিপন্থি হলে এটা চলবেনা। সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে, রাষ্ট্রপতি এদেরকে (জুডিশিয়াল সার্ভিস সদস্যদের) নিয়োগ করবেন। এবং এদের শৃঙ্খলা ও অন্যান্য ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি পদক্ষেপ নিবেন তবে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে। এই রুলস প্রণয়নও তারই ধারাবাহিকতায় সে রকম বিধান রেখে এটা করা হয়েছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে মাহবুবে আলম বলেন, এটা অবশ্যই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সমালোচনা। তার কারণ হলো এ গেজেটের বিভিন্ন ধারায় সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে আলোচনার কথা আছে।
**ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর ঘটবে না: হাইকোর্ট
বাংলাদেশ সময়: ২২০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৭
ইএস/এসএইচ