ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

আদালতে মুচলেকা দেবে বিজিএমইএ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০১ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৮
আদালতে মুচলেকা দেবে বিজিএমইএ বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহম‍ান/

ঢাকা: হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকার বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) (বিজিএমইএ) ভবন ভাঙতে সুনিদিষ্ট সময় চেয়ে বুধবার (২৮মার্চ) সকালে আদালতে মুচলেকা দেবে কর্তৃপক্ষ।

‘বহুতল ভবনটি ভাঙতে এবারের পর আর সময় চাইবে না’- বিজিএমইএ) এমন মুচলেকা দিলে তাদের সময় আবেদন বিবেচনা করবেন আপিল বিভাগ। এমন আদেশ দিয়ে মঙ্গলবার (২৭ মার্চ) প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ মামলাটি নট টুডে (আজকে নয়) রাখেন।

আদালতে বিজিএমইএর পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম।  

আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহম‍ান বিকেলে বাংলানিউজকে বলেন, আদালত আমাদের কাছে আন্ডারটেকিং (মুচলেকা) চেয়েছে, আমার সোমবার সকালে আন্ডারটেকিং দিবো এবং এক বছর সময় চাইবো।

এর আগে বহুতল ভবন ভাঙতে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে তৃতীয়বারের মতো আরও একবছর সময় চেয়ে আবেদন করা হয়। পরে ২৫ মার্চ এ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে এই বিষয়ে আদেশের জন্য ২৭ মার্চ দিন ঠিক করেছিলেন আপিল বিভাগ।  

শুনানির শুরুতেই বিজিএমইএর আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকীকে উদ্দেশ্য করে আদালত  বলেন, ‘আপনারা তো বারবার আসেন। ইউ আর প্লেয়িং উইথ কোর্ট অর্ডার। এটা সো আনফরচ্যুনেট। আপনার নিজেরও তো বিষয়টি নিয়ে আদালতে দাঁড়াতে দ্বিধা হওয়ার কথা। আমাদের লজ্জা লাগে। আদালতের প্রেসটিজ চলে যাবে আর আপনি আপনার ক্লাইন্টের জন্য আসবেন এটা হতে পারে না। আদালতের আদেশ পালন করা কি দরকার ছিল না? সময় কতবার নিয়েছেন, এরপর আবার বলবেন আবার আসবেন। বারবার আসতেই থাকবেন। ’  
 
উত্তরে কামরুল হক সিদ্দিকী বলেন, ‘এ পর্যন্ত তিনবার সময় চাওয়া হয়েছে। ’ তখন আদালত বলেন, ‘ভবন ভাঙতে এ পর্যন্ত কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?’  জবাবে কামরুল হক সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা তো স্পেস খুঁজছি, কি পদক্ষেপ নিয়েছি সেটা আবেদনেও আছে। ’
 
এ সময় আদালত বলেন, ‘যে স্টেপ নিয়েছেন তাতে তো মনে হচ্ছে পাঁচবছর সময় লেগে যাবে। আবারও সময় চাইতে আসবেন!’  
 
জবাবে কামরুল হক সিদ্দিকী বলেন, ‘সমস্যায় পড়লে তো আদালতে আসতে হয়। ক্লাইন্টের জন্যই তো আমাকে সময়ের আবেদন করতে হয়। এটা তো আমার প্রফেশনাল ডিউটি। ’
 
এসময় আদালত বলেন, ‘প্রফেশনাল ডিউটি সেকেন্ডারি। প্রথম হচ্ছেআদালতের ডিউটি। আপনারা (বিজিএমইএ) খুব বুদ্ধিমান। কারণ এক সঙ্গে কোথাও এত বড় স্পেস পাবেন না। আর তখন কোর্টে আসবেন সময়ের জন্য। এ বুদ্ধি নিয়ে তো থাকেন। বিজিএমিইএর অফিস কত স্কয়ার ফিট?
 
‘৬০ হাজার স্কয়ার ফিট,’ জবাবে বলেন কামরুল হক সিদ্দিকী।
 
তখন আদালত বলেন, ৬০ হাজারের স্কয়ার ফিটের ভবন পাবেন কোথাও? আর কোর্ট কি অর্ডার বাস্তবায়নের কথা বলে দেবে? কোর্ট শুধু আদেশ দেবে। আর আদেশ পালন না হলে কনটেম্পট রুল দেবে।
 
‘শেষ এক বছরে কি স্টেপ নিয়েছেন?’ জবাবে আইনজীবী বলেন, ‘১১০ কাঠা জমি আমরা পারচেস করেছি। ’
 
তখন আদালত বলেন, ‘এভাবে তো পাঁচ বছর লাগবে। কারণ এখন বলছেন, পাইলিং হচ্ছে। কয়দিন পর বলবেন বেজমেন্ট হচ্ছে। ’
 
কামরুল হক বলেন, না, মাই লর্ড; বেশি সময় লাগবে না। ’ আদালত বলেন, ‘তাহলে আপনাদের আন্ডারটেকিং দিতে হবে যে, আর সময় চাইবেন না। তাহলে আমরা বিবেচনা করতে পারি। ’  
 
কামরুল হক বলেন, ‘তাহলে সময় দেন। ’ এ সময় আদালত বলেন, ‘তাহলে নট টু ডে রাখলাম। ’
 
গত বছরের ৮ অক্টোবর বহুতল ভবন ভাঙতে বিজিএমইএকে সাত মাস সময় দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
ওইদিন আদালতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

গত বছর এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১২ মার্চ ভবন ভাঙতে বিজিএমইএকে ছয়মাসের সময় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ।

ওইসময় শেষ হওয়ায় একই বছরের ২৩ আগস্ট আরও এক বছর সময় চেয়ে এ আবেদন জানায় বিজিএমইএ। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে ৮ অক্টোবর সাত মাস সময় দেন আপিল বিভাগ। পরে এ সময় শেষ হওয়ার আগেই ফের একবছর সময় চেয়েছে বিজিএমইএ।

১৯৯৮ সালের ২৮ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। নির্মাণ শেষ হলে ২০০৬ সালের ০৮ অক্টোবর ভবনটির উদ্বোধন করেন সে সময়কার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এরপর থেকে এটি বিজিএমইএর প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

কিন্তু রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই কারওয়ান বাজার সংলগ্ন বেগুনবাড়ী খালে বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে উল্লেখ করে ২০১০ সালের ২ অক্টোবর একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওইদিনই প্রতিবেদনটি আদালতে উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ডি এইচ এম মনির উদ্দিন।

পরদিন ০৩ অক্টোবর বিজিএমইএ ভবন কেন ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে স্বতঃপ্রণোদিত (সুয়োমোটো) রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

২০১১ সালের ০৩ এপ্রিল বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলের রায়ে বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। ভবনটি নির্মাণের আগে ওই স্থানের ভূমি যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থায় ফিরিয়ে আনতেও নির্দেশ দেন বিজিএমইএকে।

একই বছরের ০৫ এপ্রিল বিজিএমইএর আবেদনে হাইকোর্টের রায় ছয়মাসের জন্য স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। পরবর্তী সময়ে স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরও বাড়ান সর্বোচ্চ আদালত।

হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর লিভ টু আপিল করে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। ২০১৬ সালের ০২ জুন তা খারিজ হয়ে যায়।

পরে একই বছরের ০৮ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৩৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত রায় প্রকাশিত হওয়ার পর রিভিউ আবেদন জানায় বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ।

গত বছরের ০৫ মার্চ বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে কতো সময় লাগবে- তা ০৯ মার্চের মধ্যে আদালতে আবেদন করতে বলেছিলেন আপিল বিভাগ।  

ওইদিন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে ভবন ভাঙার রায় বহাল ও ভবন ভাঙতে ছয়মাস সময় দেন। পরবর্তীতে আরও একদফা সাত মাস সময় দেন।  

**মুচলেকা দিতে হবে বিজিএমইএকে 
বাংলাদেশ  সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৮
এমএফআই/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।