ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

যেভাবে সুপ্রিম কোর্টে জালিয়াতি ঠেকানো যেতে পারে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৪ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৮
যেভাবে সুপ্রিম কোর্টে জালিয়াতি ঠেকানো যেতে পারে

ঢাকা: জামিনের জন্য কোনো আবেদনই করেননি। অথচ উচ্চ আদালতের জামিনের আদেশ চলে গেছে কারাগারে। আর মুক্তি পেয়ে চম্পট দেয় আসামি। অথবা ধর্ষণ পরীক্ষার প্রতিবেদন বানিয়ে কিংবা হাজার হাজার ইয়াবাকে কেবল শত ইয়াবা দেখিয়ে জামিনের আবেদন করে। আর এসব জালিয়াতিতে মামলা সংশ্লিষ্টব্যক্তিদের পাশাপাশি জড়িত আদালতের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী।

সম্প্রতি এ রকম একটি জালিয়াতির ঘটনা আদালতের নজরে আসলে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে একটি ‘উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অনুসন্ধান কমিটি’ গঠন করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এ আদেশ মোতাবেক কমিটি গঠনের পর তদন্ত করে প্রতিবেদন দেন।

ওই প্রতিবেদনে কিছু জড়িত ব্যক্তির নাম এবং কিছু সুপারিশ তুলে ধরে কমিটি।

সুপারিশে বলা হয়, মামলার (মোশন মামলা) নম্বর পড়ার সময় ফাইলিং শাখার এন্ট্রি রেজিস্ট্রারে আইনজীবীর সদস্য নম্বর উল্লেখ করলে তাকে শনাক্তকরণ সম্ভব হবে। মোশন দরখাস্ত এফিডেভিট করার সময় ডেপোনেন্টের ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি সংরক্ষণ, মামলার ফাইলিং ও এফিডেভিট শাখায় আইনজীবী ও আইনজীবীদের সহকারী শনাক্তকরণের জন্য ডাটাবেস তৈরি করে সফটওয়্যার ইনস্টল করা যেতে পারে।

একজন বেঞ্চ অফিসার/সহকারী বেঞ্চ অফিসার জামিনাদেশ টাইপ করে সেটি পিডিএফ ফাইলে কনভার্ট করে দেবেন। এতে এ কপিটি পরবর্তীতে শাখা থেকে আদেশের সঠিকতা যাচাই কাজে ব্যবহার হতে পারে। আদালত থেকে মোশন দরখাস্ত ফৌজদারি মিস শাখায় পাঠানোর বিষয়ে একটি ‘পিয়ন বুক’ ব্যবহার সঙ্গত হবে। তবে একাধিক পিয়ন বুক থাকলেও সেখানে যেন দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাই এন্ট্রি দেন।

জামিনাদেশের ইস্যু কপি প্রস্তুত ও সই করার সময় যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করে সংশ্লিষ্ট বিচারপতিদের সই মিলিয়ে দেখতে হবে। কোর্ট থেকে শাখায় মামলার (মোশন) নথিসহ অন্যান্য নথি গ্রহণকারীর একটি প্রাপ্তি রেজিস্ট্রার সংরক্ষণ করতে হবে।

সব রেজিস্টার খাতা যথাযথভাবে প্রত্যয়নপূর্বক সংরক্ষণ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট বিচারপতিদের দফতরের রেজিস্টার খাতাগুলো বেঞ্চ অফিসারকে দিয়ে এবং শাখার রেজিস্টার খাতাগুলো সংশ্লিষ্ট সহকারী রেজিস্ট্রার দিয়ে প্রত্যয়ন করতে হবে।

শাখায় শৃঙ্খলা বজায় রাখা ও জবাবদিহিতার স্বার্থে শাখার সুপারিনটেনডেন্টদের মধ্যে নথিতে সই করা, নথি গ্রহণ করা, টাইপ করা ও নথি যথাযথভাবে র‌্যাকে রাখাসহ বিভিন্ন বিষয় তদারকির জন্য সহকারী রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে আলাদা কর্মবণ্টন প্রস্তুত করতে হবে।

সিভিল রুল শাখার আদলে ফৌজদারি মিস কেস শাখাটি বিভাগ অনুযায়ী পৃথক করে অধিক সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী পদায়ন করা যেতে পারে এবং প্রতিটি বিভাগের রেকর্ড সংরক্ষণের দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যেতে পারে।

শাখায় এক টেবিল থেকে অন্য টেবিলে নথি মুভমেন্টের সময় রেজিস্ট্রারে শুধুমাত্র এন্ট্রি দেওয়া হয়, কিন্তু গ্রহণকারীর সই নেওয়া বা রিভিস দেখানো হয় না। ফলে নথি খোঁজার ক্ষেত্রে গ্রহণকারী অস্বীকার করলে নথি গ্রহণের বিষয়ে তাকে জবাবদিহির আওতায় আনা যায় না। কাজেই ফাইল গ্রহণকারীর সই রাখা বাধ্যতামূলক করতে হবে।

বর্ণিত জালিয়াতির ঘটনায় ফৌজদারি মিস (বিবিধ) শাখার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

এছাড়া জড়িত ও দায়ী আইনজীবী, আইনজীবীর সহকারী, সুবিধা পাওয়া আসামিসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা যেতে পারে। এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন নির্দেশনা জারি করতে পারে বলে অভিমত দেন কমিটি।

সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের তত্ত্বাবধানে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অনুসন্ধান কমিটিতে চেয়ারম্যান ছিলেন হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মো. গোলাম রব্বানী। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন-হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) মো. আব্দুছ সালাম এবং সহকারী রেজিস্ট্রার (প্রশাসন) সোহাগ রঞ্জন পাল।

আদালতে এ প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর তা বাস্তবায়ন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের স্পেশাল অফিসার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বাস্তবায়ন শুরু হয়ে গেছে। অলরেডি সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়েছে। বিভিন্ন শাখায় প্রধান বিচারপতি ভিজিট করছেন। সর্বোপরি এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৫ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৮
ইএস/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।