ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘বোমার শব্দে বিল্ডিংগুলো কেঁপে ওঠে’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৯
‘বোমার শব্দে বিল্ডিংগুলো কেঁপে ওঠে’ হামলার পর হলি আর্টিজান বেকারি। ফাইল ফটো

ঢাকা: ‘হলি আর্টিজানে গুলির খবর শুনে আমি সেখানে যাই। সেখানে যাওয়ার পর বিকট শব্দে একটা বোমা ফোটে। আমি থাকা অবস্থায় দুইটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। বোমার শব্দে বিল্ডিংগুলো কেঁপে ওঠে। আমি তখন গেটের সামনে ছিলাম।’

বুধবার (২৩ জানুয়ারি) ঢাকার সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমানের আদালতে এভাবেই সাক্ষ্য দিয়েছেন স্প্যানিশ রেস্তোরাঁ গুলশানের হলি আর্টিজানের মালিক সাদাত মেহেদী।

এদিন তিনি ছাড়াও আরও তিনজন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন।

তারা হলেন- রেস্তোরাঁর মালিক সাদাত মেহেদীর স্ত্রী সামিরা আহম্মেদ, লেকভিউ ক্লিনিকের ক্যান্টিনের ম্যানেজার আব্দুল হাকিম ও হলি আর্টিজানের শেফ মো. আকাশ খান।  

সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত আগামী ২৯ জানুয়ারি পরবর্তী দিন ধার্য করেন। সাদাত মেহেদী জবানবন্দিতে বলেন, ‘২০১৬ সালের ১ জুলাই রাত সাড়ে আটটার দিকে হলি আর্টিজান রেষ্টুরেন্টের ম্যানেজার সেজাদ আমাকে ফোন দেয়। সে আমাকে জানায়, রেষ্টুরেন্টের ভিতর দুর্বৃত্তরা আল্লাহু আকবর বলে গুলি করছে। তখন আমি আরেকটি রেষ্টুরেন্ট ইজুগিতে ছিলাম।  তখন আমি সাথে সাথে হলি আর্টিজানে ছুটে যাই। সেখানে গিয়ে পুলিশের গাড়ি দেখতে পাই। ’ 

তিনি বলেন,  ‘আমি সেখানে যাওয়ার পর বিকট শব্দে একটা বোমা ফোটে। এরপর আমার সামনে দিয়ে আহত দুইজনকে পুলিশ হাসাপাতালে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর আবার গুলি শুরু হয়। আমি সেখানে থাকা অবস্থায় দুইটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। বোমার শব্দে বিল্ডিংগুলো কেঁপে ওঠে। তখন কে কি করবে  ঠিক পাচ্ছিল না। যেন যুদ্ধের মত অবস্থা শুরু হয়ে যায়। ’

হলি আর্টিজানের মালিক সাদাত বলেন, এ ঘটনায় আমার পাঁচ বন্ধু মারা গেছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৯ জন ইতালীয়, সাতজন জাপানি, তিনজন বাংলাদেশি এবং একজন ভারতীয় নাগরিক ছিলেন।

অপর সাক্ষী আব্দুল হাকিম জবানবন্দিতে বলেন, ঘটনার দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে একটা বিকট শব্দে বোমার আওয়াজ শুনতে পাই। বোমার আওয়াজ শুনে নিরাপত্তার দুই প্রহরী নূর আলম ও হোসেন মেইন গেট দিয়ে ভিতরে চলে যায়। এরপর সেখানকার সবাই দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। এরপর আমি লেকভিউ ক্লিনিকের ভিতর একটা নিরাপদ জায়গায় চলে যাই।   
  
এ মামলায় আসামিরা হলেন- হামলার মূল সমন্বয়ক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে র‌্যাশ, ঘটনায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী নব্য জেএমবি নেতা হাদিসুর রহমান সাগর, নব্য জেএমবির অস্ত্র ও বিস্ফোরক শাখার প্রধান মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী, হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজ, শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ।

আসামিদের মধ্যে প্রথম ছয়জন কারাগারে আছেন। এদিন তাদের কারাগারে খেকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার অপর দুই আসামি এ মামলায় পলাতক থাকলেও অন্য মামলায়  পলাতক আসামি মামুনুর রশিদ ওরফে রিপনকে গত ১৯ জানুয়ারি রাতে গাজীপুরের বোর্ডবাজারের একটি বাস থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

এরপর তাকে রাজধানীর সবুজবাগ থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলায় ৫ দিনের  রিমান্ডে নেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত তাকে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়নি।

মামলাটিতে গত বছর ৮ আগস্ট আট আসামির  বিরুদ্ধে দাখিল করা চার্জশিট গ্রহণ করেন আদালত। ওই ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় মামলার অভিযোগ থেকে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজা করিমকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

এর আগে গত ২৩ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ূন কবির মামলার চার্জশিট জমা দেন।  

পরে গত বছরের ২৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার কাজ শুরু করেন আদালত।  

বাংলাদেশ সময়: ২০২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৯
এমএআর/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।