বুধবার (১৯ জুন) আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ না দিয়ে শুনানির জন্য পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স ন্যূনতম ১২ বছর ৬ মাস এবং ১৩ বছর নির্ধারণ নিয়ে করা পৃথক ১৫টি রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ১৯ মে রোববার এ রায় ঘোষণা করেন বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ ।
ওই রায়ে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট আইন, ২০১৮ এর সংজ্ঞা সংক্রান্ত ২ ধারার ১১ উপধারা অবৈধ ঘোষণা করেছেন। এছাড়া রায় পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধদের সম্মানী পরিশোধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
ওইসব রিটের আইনজীবীরা হলেন, ওমর সাদাত, এ বি এম আলতাফ হোসেন, মো. জাহাঙ্গীর জমাদ্দার, নারগিস তানজিমা, সেলিনা আক্তার চৌধুরী, শরীফ আহমেদ, ইউনুছ আলী আকন্দ, শুভ্রজিত ব্যানার্জী ও এআরএম কারুজ্জামান কাকন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান।
ওইদিন রায়ের পরে ওমর সাদাত সাংবাদিকদের বলেছিলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধা হিসেবে চিহ্নিত এবং মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেয়ে আসছিলেন, কোনো রকম কারণ দর্শানের নোটিশ ব্যতিরেকে তাদের ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাদের অমুক্তিযোদ্ধা বলা হয়।
‘বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় যাদের বয়স ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ১২ বছর ৬ মাস হয়নি তারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবেন না। ’
ওমর সাদাত আরও বলেন, আমরা সমস্ত আইন-কানুন কোর্টের সামনে পেশ করি, কোর্ট সমস্ত দেখে রায় দিয়েছেন। সংবিধান এবং বঙ্গবন্ধুর ভাষণেও দেখবেন তিনি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে মুক্তিযুদ্ধ ঝাঁপিয়ে পড়তে বলেছিলেন। সেখানে বয়সের কোনো বিধান ছিল না। আমাদের যিনি বীর প্রতীক ছিলেন শহীদুল ইসলাম লালু, মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল ১০ বছর। বঙ্গবন্ধু তাকে কোলে তুলে নিয়েছিলেন এবং বীর প্রতীক খেতাব দিয়েছিলেন। সরকারের এই সিদ্ধান্তের কারণে বীর প্রতীক তো নন-ই, তিনি আজ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেও বিবেচিত হবেন না।
তিনি আরও বলেন, আদালত অত্যন্ত উষ্মা প্রকাশ করেছেন এবং এক পর্যায়ে আবেগ-প্রবণ হয়ে কেঁদে ফেলেন। আদালত বলেন যে, যেটার ওপর ভিত্তি করে আমাদের দেশ গঠন হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধাদের যদি আমরা অস্বীকার করি তাহলে দেশ হিসেবে আমরা সামনে আগাতে পারবো না। আদালত মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স সংক্রান্ত সকল গেজেট বাতিল করেছেন এবং বকেয়াসহ তাদের সমস্ত পাওনা ফেরত দিতে বলেছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে এই আইনজীবী বলেন, কোর্ট এখানে বলেছেন শুধু বাংলাদেশে না, পৃথিবীর কোথাও মুক্তিযোদ্ধাদের বয়সের ফ্রেমে বাঁধা যায় না। মুক্তিযুদ্ধ মানুষ আবেগ দিয়ে করে, দেশ প্রেম থেকে করে। আদালত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের উদাহারণ টেনে বলেছেন, ৭-৮ বছর বয়সী যোদ্ধা সে সময় ছিল। বাংলাদেশে বই আছে শিশু মুক্তিযোদ্ধাদের ওপরে।
আইনজীবীরা জানান, ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর ‘মুক্তিযোদ্ধা এর সংজ্ঞা ও বয়স নির্ধারণ’ করে গেজেট জারি করা হয়।
ওই গেজেটে বলা হয়, ‘মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নতুনভাবে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তারিখে ন্যূনতম ১৩ বছর হতে হবে। এরপর ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি একটা পরিপত্রের মাধ্যমে সে গেজেট সংশোধন করে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়স হতে হবে ১২ বছর ৬ মাস। ওই দুটি গেজেটের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে মুক্তিযোদ্ধার হাইকোর্টে পৃথক পৃথক রিট দায়ের করেন।
১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স ন্যূনতম ১২ বছর ৬ মাস নির্ধারণ করে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সংশোধিত পরিপত্র কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এবং মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নতুনভাবে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তারিখে ন্যূনতম ১৩ বছর হতে হবে-সরকারের জারি করা এমন গেজেট কেন অবৈধ ও বেআইনি হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৯
ইএস/এমএ