ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

রাসেলকে কিস্তিতে বাকি ৪৫ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ 

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৭ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৯
রাসেলকে কিস্তিতে বাকি ৪৫ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ  পা হারানো রাসেল ও গ্রিনলাইনের একটি বাস।

ঢাকা: রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ফ্লাইওভারের ওপর গ্রিনলাইন পরিবহনের বাসচাপায় পা হারানো প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারকে অবশিষ্ট ৪৫ লাখ টাকা প্রতি মাসে ৫ লাখ করে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

টাকা কমানো এবং কিস্তিতে বাকী টাকা দেওয়ার সুযোগ চেয়ে গ্রিনলাইনের করা আবেদনের পর বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার (২৫ জুন) এ আদেশ দেন।

প্রতি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে ওই অর্থ রাসেলকে দিয়ে ১৫ তারিখের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খোন্দকার শামসুল হক রেজা ও আইনজীবী উম্মে কুলসুম স্মৃতি। গ্রিনলাইনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অজি উল্লাহ।

আইনজীবী অজি উল্লাহ টাকা কমানো এবং কিস্তিতে টাকা শোধ বিষয়ক একটি আবেদন উপস্থাপন করলে আদালত বলেন, আপনারা কতো টাকা দিয়েছেন?

জবাবে অজি উল্লাহ বলেন, ৫ লাখ টাকার চেক এবং চিকিৎসাবাবদ সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিয়েছি।

তখন আদালত বলেন, আপনারা অসহায় এ ছেলেটার একটা ব্যবস্থা করতে পারতেন। কোনো না কোনোভাবে সহযোগিতা করতে পারতেন। আপনারা হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গেছেন। সেখানে নাকচ হয়েছে। এখন রিজেকশনের ক্ষমতা আমাদের নেই।

আদালত আরও বলেন, মানুষ হিসেবেও ছেলেটির জন্য আপনি (গ্রিনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষ) কিছুই করেননি। আপনাদের আচরণও শোভনীয় হয়নি। এখন ক্ষতিপূরণের অর্থের পরিমাণ পরিবর্তন করার কোনো সুযোগ নেই। আর ঘটনা যে অবহেলাজনিত ছিলো তা নয়, বিষয়টা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিলো।

আজকে (মঙ্গলবার) রাসেলকে কোনো টাকা দিয়েছেন এমন প্রশ্নে গ্রিনলাইনের আইনজীবী বলেন না।

এ সময় খন্দকার সামসুল হক রেজা বলেন, তারা আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করেনি। আগের বক্তব্যের সঙ্গে এখন তারা টোটালি ডিনাই করছেন। নতুন গল্প বলছেন । তাদের যে ব্যবসা প্রতিদিন তাদের এক কোটি টাকা ইনকাম হয়।

তখন আদালত গ্রিনলাইনের আইনজীবীকে বলেন, আপানারা তো দেওলিয়া হয়ে যাননি। কিছু টাকা দিলে কী হতো? ছেলেটার সামনে এখনো অনেক সময় পড়ে আছে।

একপর্যায়ে আদালত আরও বলেন, যদি আপনার আদেশ লঙ্ঘন করেন, তাহলে আমরাও অন্য ব্যবস্থা নেবো। কোনোভাবে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ কমানোর সুযোগ নেই। আদালতের আদেশ লঙ্ঘনের জন্য যে ফন্দি-ফিকির করে, সরকার তাকে কীভাবে পেট্রোনাইজ করে আমরা দেখবো। আপনারা হরতাল ধর্মঘটে যেতে পারেন। যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। আমাদের নির্দেশ পালন না করলে আমরা ব্যবস্থা নেবো।

আপনারা যথেষ্ট বেয়াদবি করেছেন। আমরা অনেক সহ্য করেছি। কারণ আমরা শপথ নিয়েছে, রাগ,অনুরাগ, বিরাগের ঊর্ধ্বে থাকতে। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করবো। আপনারা মনে রাখবেন সেও (রাসেল) একজন গাড়িচালক, পরিবহন শ্রমিকের বাইরের কেউ নন।

এদিকে আদালতে রুলের জবাব দাখিল করেছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)।

গতবছরের ২৮ এপ্রিল মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে কথা কাটাকাটির জেরে গ্রিনলাইন পরিবহনের বাসচালক ক্ষিপ্ত হয়ে প্রাইভেটকার চালকের ওপর দিয়েই বাস চালিয়ে দেন। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারের (২৩) বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

এ ঘটনায় হাইকোর্টে রিট আবেদনটি দায়ের করেন সংরক্ষিত আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতি। এ রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ১৪ মে রাসেলকে কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট।

সম্প্রতি রাসেলের পক্ষ থেকে আদালতে জানানো হয়, এখন পর্যন্ত বাস কর্তৃপক্ষ তার কোনো খোঁজ-খবর নেয়নি। পরে গত ১২ মার্চ হাইকোর্ট রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার আদেশের পাশাপাশি রাসেলের অন্য পায়ে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হলে এবং কাটাপড়া বাম পায়ে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃত্রিম পা লাগানোর খরচও গ্রিনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে দিতে বলা হয়েছিলো। এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গিয়ে ৩১ মার্চ বিফল হয় গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষ।

১০ এপ্রিল রাসেল সরকারকে পাঁচ লাখ টাকার চেক দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে বাকি ৪৫ লাখ টাকা দিতে গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষ এক মাস সময় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

পরে চিকিৎসার জন্য খরচ দিলেও অবশিষ্ট টাকা দেননি। এরপর ১৫ মে হাইকোর্ট ওই টাকা দিতে ২২ মে পর্যন্ত সময় দেন। কিন্তু এই সময়েও তারা কোনো যোগাযোগ করেনি। এরপর আদালত এক মাস সময় দিয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ২৫ জুন দিন ঠিক করেন।   

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৯/ আপডেট: ১৯৩২ ঘণ্টা
ইএস/একে/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।