কাঁঠালবাড়ী ঘাটে ফেরিতে অ্যাম্বুলেন্সে স্কুলছাত্র তিতাস ঘোষের মৃত্যুর ঘটনার রিট শুনানিতে বুধবার (৩১ জুলাই) বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. জহির উদ্দিনি লিমন।
শুনানিতে আদালত বলেন, পৃথিবীর সব জায়গায় অ্যাম্বুলেন্স, অগ্নিনির্বাপনে ফায়ার সার্ভিস ও নিরাপত্তার জন্য পুলিশের গাড়ি যেতে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। আমাদের এখানে কি হয়? ভিআইপি কারা ও ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স দিয়েছেন কি?
তখন আইনজীবী জহির উদ্দিন লিমন বলেন, দেশে ভিভিআইপি শুধু রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। আদালত বলেন, ‘ইয়েস। ’
তখন এ আইনজীবী বলেন, ভিআইপিরা শুধু নিরাপত্তা সুবিধা পাবেন। নৌ পরিবহন আইন অনুসারে তারা ফেরি বা জাহাজে ওঠার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন, তবে কোনোভাবেই জাহাজ বা ফেরি থামিয়ে রাখতে পারবেন না।
এসময় আদালত বলেন, ভিআইপি থাকলেও অ্যাম্বুলেন্স অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আগে যেতে দেওয়া হয়ে থাকে কেননা এর সঙ্গে একজন মানুষের জীবনের প্রশ্ন জড়িত। এরা ভিআইপি নন। এরা সার্ভেন্ট অব দ্যা স্টেট (প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী)। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে আলাদাভাবে দেখা হয়। তাদের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয় থাকে। এটা অন্য কারো ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। জরুরি সেবা অ্যাম্বুলেন্স, অগ্নিনির্বাপনে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের গাড়ি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যেতে দেওয়ার বিধানও আছে।
এক পর্যায়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বলেন, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি একজন যুগ্ম সচিব। ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুসারে ২২ নম্বর ক্রমিকে আছেন। ওই ঘটনায় একাধিক তদন্ত কমিটি হয়েছে। তদন্তে বেরিয়ে আসবে দায় কার। সেদিন সরকারের কোনো কর্মসূচিও ছিল না। ওই ঘটনায় কেউ ক্ষমতার অপব্যবহার করে থাকলে সেটা তার ব্যক্তিগত দায়।
পরে আদালত ঘটনা তদন্ত করে তিন সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলে জনপ্রশাসন সচিবকে নির্দেশ দেন।
অতিরিক্ত সচিবের নিচে নয় এমন পদমর্যাদার কর্মকর্তার নেতৃত্বে এ তদন্ত করাবেন জন প্রশাসন সচিব।
একইসঙ্গে তিতাসের পরিবারকে কেন তিন কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ২৮ আগস্ট পরবর্তী দিন রেখেছেন আদালত।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) মানবাধিকার সংগঠন লিগ্যাল সাপোর্ট অ্যান্ড পিপলস রাইটস’র চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জহির উদ্দিন লিমন জনস্বার্থে এ রিট করেন।
রিটের বিবাদীরা হচ্ছেন- নৌপরিবহন সচিব, সড়ক পরিবহন ও সেতু সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান, যুগ্ম-সচিব আবদুস সবুর মণ্ডল, মাদারীপুরের ডিসি, পুলিশ সুপার, কাঠালবাড়ী ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক সালাম হোসাইন মিয়া ও কাঁঠালবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নড়াইল কালিয়া পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তিতাস ঘোষ (১১) গুরুতর আহত হয়। ওই সময় তাকে খুলনার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তার পরিবার আইসিইউ সম্বলিত একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) তাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন।
রাত ৮টার দিকে কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌ-রুটের শিবচরের কাঁঠালবাড়ী ১ নম্বর ভিআইপি ফেরিঘাটে পৌঁছায় অ্যাম্বুলেন্সটি। তখন কুমিল্লা নামে ফেরিটি ঘাটে যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় ছিল। সরকারের এটুআই প্রকল্পের যুগ্ম-সচিব আবদুল সবুর মণ্ডল পিরোজপুর থেকে ঢাকা যাবেন-তাই ওই ফেরিকে অপেক্ষা করার জন্য জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ঘাট কর্তৃপক্ষকে বার্তা পাঠানো হয়।
তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর ফেরিতে ওঠে অ্যাম্বুলেন্সটি। কিন্তু এর মধ্যে মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে মাঝপদ্মায় অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যায় স্কুলছাত্র তিতাস।
বাংলাদেশ সময়: ২৩২৭ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৯
ইএস/জেডএস