বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) ঘণ্টাব্যাপী শুনানি শেষে জামিন প্রশ্নে রুল জারি করতে গেলে আইনজীবীরা আবেদন ফেরত নেন।
আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।
পরে জেড আই খান পান্না সাংবাদিকদের বলেন, আমরা মর্মাহত। এখন অন্য কোনো বেঞ্চে আবেদনটি নিয়ে যাবো।
এর আগে সোমবার (৫ আগস্ট) সকালে বাংলানিউজকে মিন্নির জামিন আবেদনের কথা জানিয়েছিলেন জেড আই খান পান্না।
গত ৩০ জুলাই বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আসাদুজ্জামান জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।
২৬ জুন প্রকাশ্য দিবালোকে বরগুনা সরকারি কলেজ রোডে স্ত্রী মিন্নির সামনে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফকে। পরে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিফাতের মৃত্যু হয়। হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড ২ জুলাই ভোরে জেলা সদরের বুড়িরচর ইউনিয়নের পুরাকাটা ফেরিঘাট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। এর মধ্যে কয়েকজন আসামিও গ্রেফতার হন।
পরে ১৬ জুলাই সকালে বরগুনার মাইঠা এলাকার বাবার বাসা থেকে মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বরগুনার পুলিশ লাইনে নিয়ে আসা হয়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রিফাত হত্যাকাণ্ডে মিন্নির সম্পৃক্ততার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় ওইদিন রাত ৯টার দিকে মিন্নিকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ।
পরদিন ১৭ জুলাই বিকেলে মিন্নিকে আদালতে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। বিকেল সোয়া ৩টার দিকে শুনানি শেষে বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সিরাজুল ইসলাম গাজী পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। কিন্তু ওইদিন মিন্নির পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিল না।
রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন ১৯ জুলাই বিকেল ৫টার দিকে বরগুনা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে মিন্নি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২২ জুলাই প্রথমবার মিন্নির জামিনের আবেদন করেন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মাহবুবুল বারী আসলাম। পরে ওইদিনই শুনানি শেষে আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।
এরপর (২৩ জুলাই) মিস কেস দাখিল করে বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আসাদুজ্জামানের আদালতে ফের জামিনের আবেদন করেন মিন্নির আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মাহবুবুল বারী আসলাম। পরে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নথি তলব করে (৩০ জুলাই) এ জামিন শুনানির দিন ধার্য করেন আদালত। শুনানির পর ৩০ জুলাই জামিন নাকচ করেন আদালত।
শুনানিতে জেড আই খান পান্না বলেন, মিন্নির জামিনের জন্য আবেদন করেছি। মিন্নির কাছ থেকে জোর করে অবৈধভাবে জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। আদালতে তার পক্ষে কোনো আইনজীবী দাঁড়াতে পারেনি। এজন্য কোর্টও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা আছে, আসামির সহযোগিতার জন্য আইনজীবী লাগবে।
তিনি বলেন, মূল চারজনকে ধরার ক্ষেত্রে অগ্রগতি নেই। (এসময় তিনি কালের কণ্ঠসহ দু’টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। ) আমরা একজন নারী হিসেবে জামিন চাচ্ছি।
এসময় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার এএম মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, টিভি, পত্রপত্রিকায় হত্যাকাণ্ডের চিত্র এসেছে। এর পিছনে আবার ষড়যন্ত্র কিসের। একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শীকেই আসামি করা হয়েছে। মামলাটিকে ভিন্নখাতে নিতে মিন্নিকে আসামি করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মমতাজউদ্দিন ফকির বলেন, ঘটনার অন্তরালে অনেক ঘটনা রয়েছে। ১৫ জনের জবানবন্দি আছে। এরমধ্যে চারজন মিন্নির নাম বলেছে। এছাড়া নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির আগে বিয়ে হয়েছিল। এসময় তিনি আদালতে কাবিননামা দাখিল করেন। রিফাত শরীফের সঙ্গে বিয়ের পরও গোপনে নয়ন বন্ডের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেছে মিন্নি। এছাড়াও ফোন কল রেকর্ড রয়েছে। সিডি রয়েছে। মামলা তদন্তানাধীন।
এক পর্যায়ে আদালত বলেন, ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি লাগবে। সেটা আছে কি? জেড আই খান পান্না বলেন, না। পুলিশ দেয়নি। অভিযোগপত্র দাখিল না হওয়া পর্যন্ত ওটা দেবে না। আদালত বলেন, ১৬৪ ধারা জবানবন্দি না দেখে (পর্যালোচনা না করে) কিছু দেওয়া যাবে না। জেড আই খান পান্না বলেন- আমি (মিন্নি) পালিয়ে যাবো না। আদালত বলেন, আমরা রুল (কেন জামিন দেওয়া হবে না মর্মে) দেই। এরমধ্যে ১৬৪ ধারার জবানবন্দি নিয়ে আসুন। এরপর জামিনের আবেদনের ওপর শুনবো।
জবাবে জেড আই খান পান্না বলেন- সে তো নারী। এই যুক্তিতেই জামিন হতে পারে।
আদালত বলেন, ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি লাগবে। অন্যথায় আবেদন ফেরত নিতে পারেন। এরপর জেড আই খান পান্না জামিনের আবেদন ফেরত নেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০১৯
ইএস/এএ