সোমবার (০৯ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান একুশে পদকপ্রাপ্ত পদার্থবিদ্যার প্রথিতযশা এই অধ্যাপক।
ছেলে প্রকাশক ও ব্লগার অভিজিত রায় হত্যা মামলার বাদী হিসেবে সম্প্রতি সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন।
এ পর্যন্ত এই মামলায় সাতজন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য বুধবার (১১ ডিসেম্বর) দিন ধার্য রয়েছে।
গত ২৮ নভেম্বর মামলার বাদী হিসেবে সাক্ষ্য দিতে হুইল চেয়ারে করে আদালতে আসেন অধ্যাপক অজয় রায়। বিচারক নিজের চেয়ারের পাশে বসিয়ে বয়সের ভারে ন্যুব্জ এই অধ্যাপকের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন।
সাক্ষ্যে অধ্যাপক অজয় রায় বলেছিলেন, ‘আমার দুই ছেলের মধ্যে অভিজিৎ ছিল বড়। সে খুবই মেধাবী ছিল। সে বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে পাস করেছে। পরে সিঙ্গাপুরে বায়োটেকনোলজি বিষয়ে পিএইচডি করেছে। অভিজিতের স্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পেলে সেখানেও কিছুদিন ছিল সে। ’
তিনি বলেন, ‘অভিজিৎকে মারার সময় তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা বাঁচানোর চেষ্টা করে। এ সময় সন্ত্রাসীরা তাকেও আঘাত করে। এতে তার স্ত্রীর ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও পরে স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। ’
সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর গোলাম ছারোয়ার খান জাকির বাংলানিউজকে বলেন, অধ্যাপক অজয় রায় প্রথম তিন তারিখ সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আসতে পারেননি। পরে গত ২৮ অক্টোবর তিনি মামলায় সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন। এই বয়সে কষ্ট করে আদালতে এসে বিচারকাজে সহযোগিতা করায় আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞ।
পড়ুন>>অধ্যাপক অজয় রায়ের জীবনাবসান
তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছিলাম ঘৃণ্য এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করতে। বাদী সাক্ষ্য দেওয়ার দেড় মাসেরও কম সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষে সাতজন সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। বুধবারও সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ রয়েছে। তাই বিচারকাজ দ্রুততার সঙ্গেই এগিয়ে যাচ্ছে।
‘কিন্তু দুঃখজনক হলো, বিচারটা শেষ পর্যন্ত অধ্যাপক অজয় রায় দেখে যেতে পারলেন না। শেষ জীবনে তার হয়তো এই আঁফসোসটা ছিল। তবে বিচারে দোষীরা সর্বোচ্চ দণ্ড পেলে তার বিদেহী আত্মা কিছুটা শান্তি পাবে। সেই চেষ্টা আমরা রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে চালিয়ে যাবো। ’
অভিজিৎ হত্যা মামলার আসামিরা হলেন- বরখাস্ত হওয়া মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে শাহাব, মোজাম্মেল হোসেন ওরফে সাইমুম, আরাফাত রহমান ওরফে সিয়াম, শফিউর রহমান ফারাবী, আকরাম হোসেন ওরফে আবির ওরফে আদনান।
এ মামলায় চলতি বছরের ১৩ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম। এরপর গত ১ আগস্ট অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন আদালত।
বিচার শুরুর পর ১১ সেপ্টেম্বর, ৬ ও ১৭ অক্টোবর তিন দফায় আদালতে হাজির হননি অধ্যাপক অজয় রায়। বাদীর সাক্ষীর মাধ্যমেই সাধারণত মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। তাই তিন দফায় বাদীর অনুপস্থিতির কারণে সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া পিছিয়ে যায় দেড় মাস।
সেই সময় সাক্ষ্য দিতে না যাওয়ার কারণ হিসেবে একটি গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অজয় রায় বলেছিলেন, ‘পুত্র হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে সাক্ষ্য দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। সাক্ষ্য দেওয়া হবে বেদনাদায়ক, যা আমি সইতে পারবো না। ’
শেষ পর্যন্ত সাক্ষ্য দিতে এসেছিলেন তিনি। তবে সাক্ষ্য দিয়ে যাওয়ার স্বল্প সময়ের মধ্যেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন অজয় রায়।
২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত সোয়া ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে জখম করে সন্ত্রাসীরা।
আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত সাড়ে ১০টার দিকে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় অধ্যাপক অজয় রায় শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৯
কেআই/এমএ