প্রতিবেদনে প্রধান আসামি জেল হাজতে রয়েছেন উল্লেখ করে বলা হয়, বাকি আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
প্রতিবেদনে পুলিশ সুপার টুটুল চক্রবর্তী বলেন, মামলার পর থেকে গ্রেফতার এড়ানোর লক্ষ্যে আত্মগোপনে থাকা আসামিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামিদের গ্রেফতারের স্থানীয় এলাকায় একাধিক সোর্স নিয়োগ করেন। সোর্সের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মোতাবেক ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে জানা যায় যে, আসামিরা পল্টন ও মতিঝিল থানা এলাকায় অবস্থান করছেন। সে তথ্য মোতাবেক আসামিদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে উল্লাপাড়া থানার পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা পল্টন ও মতিঝিল থানা পুলিশের সহায়তায় আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য ব্যাপক পুলিশি অভিযান চালায়।
‘প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেখা যায় যে, আসামিরা ঘনঘন তাদের অবস্থান পরিবর্তন করছেন। পুলিশি তৎপরতার কারণে ১ নম্বর আসামি মো. আব্দুর রশিদ ১০ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির হয়ে বর্তমানে জেলহাজতে আটক আছেন। মামলাটির সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ওই আসামিকে ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। ’
এর আগে এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন ০৮ ডিসেম্বর আদালতে বিষয়টি নজরে আনেন আইনজীবী ইশরাত হাসান। ওই দিন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানতে চান। সে অনুসারে সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার ও উল্লাপাড়ার স্থানীয় পুলিশের পক্ষে প্রতিবেদন দেওয়া হয়।
দৈনিক ইত্তেফাকে ৭ ডিসেম্বর ‘মাছকাঁটা বটি দিয়ে গৃহবধূর মাথার চুল কেটে দিলো আ’লীগ নেতা’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনা হয়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় দুই সন্তানের জননীর মাথার চুল বটি দিয়ে কেটে দিয়েছেন এক আওয়ামী লীগ নেতা। ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূর বাড়ি উধুনিয়া ইউনিয়নের গজাইল গ্রামে। ’
অভিযুক্ত ব্যক্তি উপজেলার উধুনিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আব্দুর রশিদ। ঘটনার সময় তার সঙ্গে ৪ সহযোগী ছিলেন বলে জানা গেছে।
গত ২৫ নভেম্বর রাতে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় ওই গৃহবধূ নিজেই বাদী হয়ে ২ ডিসেম্বর উল্লাপাড়া মডেল থানায় ওই আওয়ামী লীগ নেতা ও তার ৪ সহযোগীর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০/৩০ ধারায় একটি মামলা (নম্বর-২) করেন। এ মামলার অপর আসামিরা হচ্ছেন- গজাইল গ্রামের মোজাহারের ছেলে মুনসুর (৩৮), বাহের প্রামাণিকের ছেলে আব্দুস সালাম (৪৫), নাসির উদ্দিন (৪০) ও শহীদুল ইসলাম (৩২)।
এ মামলা দায়ের করার পর থেকে আসামিরা ভুক্তভোগীকে হুমকি দিয়ে আসছে। একের পর এক হুমকির ভয়ে ওই গৃহবধূ পার্শ্ববর্তী তরফ বায়রা গ্রামে বাবার বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
আর অভিযোগ উঠেছে, ঘটনার পর থেকে গ্রেফতার এড়াতে ওই আওয়ামী লীগ নেতা ও তার সহযোগীরা আত্মগোপনে থেকে প্রভাবশালীদের মাধ্যমে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী গৃহবধূ বলেন, গত ২৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় আমি আমার এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের খোঁজে বের হই। পথিমধ্যে একই গ্রামের মৃত আবেদ আলীর ছেলে সাইফুল ইসলামের বাড়ির পাশে উধুনিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও গজাইল গ্রামের মৃত বেলায়েত সরকারের ছেলে মো. আব্দুর রশিদ ও তার ৪ সহযোগী আমার পথরোধ করে। এরপর সাইফুল ইসলামের সঙ্গে আমাকে আপত্তিকর অবস্থায় আটক করেছে বলে চিৎকার শুরু করে।
‘এ সময় গ্রামের লোকজন ছুটে এলে তাদের সামনে আমাকে বিবস্ত্র করে মারপিট করে। এতেও তারা ক্ষ্যান্ত হয়নি। কয়েকশ’ লোকের সামনে মাছকাঁটার বটি দিয়ে আমার মাথার চুল কেটে উল্লাস করে। ওই সময় আমি তাদের কাছে নানা কাকুতি-মিনতি করলেও তারা বিন্দুমাত্র সাহায্য না করে নির্দয়ভাবে আমার মাথার চুল কেটে দেয়। ’
ওই গৃহবধূ আরও বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রশিদ দীর্ঘদিন ধরে আমাকে নানাভাবে কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। এতে আমি রাজি না হওয়ায় এবং আমার বাড়ির ডিস সংযোগ বারবার কেটে দেওয়া নিয়ে তার সঙ্গে পূর্ব বিরোধের জের ধর সে এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে। আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সবার সামনে মাথার চুল কেটে নির্যাতন করা হয়েছে।
‘এতে আমি সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়েছি। এ ঘটনার পর থেকে আমি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছি এবং ভেঙে পড়েছি। রাতে ঠিকমতো ঘুমাতেও পারছি না। এমনকি সমাজে মুখ দেখাতে পারছি না। লজ্জা ও ঘৃণায় বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না। ফলে এক রকম নিজ বাড়িতে অবরুদ্ধ হয়ে গৃহবন্দি হয়ে পড়ে রয়েছি,’ যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৯
ইএস/এমএ