ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৯
খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ

ঢাকা: জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন পর্যবেক্ষণসহ খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। তবে আবেদনকারী (খালেদা জিয়া) যদি সম্মতি দেন তাহলে বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী তার অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্টের (বায়োলজিকস) পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
এর আগে খালেদা জিয়ার মেডিক্যাল বোর্ডের প্রতিবেদনের ওপর এবং তার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি হয়।



আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আর দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান। খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও জয়নুল আবেদীন।  

তিনি বলেন, এই আদালতের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। আমরা মানবিক কারণে খালেদা জিয়ার জামিন চাইছি। খালেদা জিয়া সুস্থ মানুষ ছিলেন। কিন্তু আমরা দেখলাম, তার অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে।

আদালতে জয়নুল আবেদীন বলেন, খালেদা জিয়ার আত্মীয়-স্বজন তার সাথে দেখা করেছে। আমরা তো আর পারি না। আমাদের দেখা করতে দেয় না। আত্মীয়-স্বজন দেখা করে এসে বলেছে, তার অবস্থা খারাপের দিকে। তিনি ভালো মানুষ জেলে গেলেন।  

‘এখন তার অবস্থা খারাপের দিকে। খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা দরকার। এজন্য মানবিক দিক বিবেচনা করে তার জামিন আবেদন করেছি। ’

তিনি বলেন, তারা (মেডিক্যাল বোর্ড) তো বলেনি খালেদা জিয়া হাঁটাচলা করতে পারে। তার স্টেজ ক্রিপলে (পঙ্গুত্ব) আছেন। ছয় মাসেও তার অবস্থার উন্নতি হয়নি। হয়তো পরের ছয় মাসে আরও খারাপ হবে। অবস্থা তো আর এমন না যে, তিনি (খালেদা জিয়া) জামিন পেলে পালিয়ে যাবেন।  

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, তার (খালেদা জিয়া) এক মামলায় ১০ বছরের সাজা হয়েছে। অন্য মামলায় সাত বছর হয়েছে। তারা আবেদনে বলেছেন-১৯৯৭ সালে একবার ও ২০০২ সালে একবার হাঁটু প্রতিস্থাপন করেছেন তিনি। তাহলে তো ন্যাচারালি তার হাঁটা রেস্টিকটেড হবে।

‘অরফানেজ মামলায় যেমন দ্রুত আপিল শুনানি করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এটাতেও দিতে পারেন। ’

খুরশীদ আলম খান বলেন,  আবেদনকারীর পক্ষে কয়েকটি মামলার উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের হচ্ছে অবৈধ সম্পত্তির মামলা। আর এটা হলো ক্ষমতার অপব্যবহারের। তিনি প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হয়ে চ্যারিটির নামে টাকা আত্মসাত করেছেন। হাইকোর্ট অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করে জামিন দেননি।

তিনি আরও বলেন, মেডিক্যাল বোর্ড যদি উনার সম্মতি  না পান তাহলে চিকিৎসায় বোর্ড আর ডাক্তারের কী করার আছে? উনি তো সহযোগিতা করছেন না। এটাতে উনার  একটা সমস্যা আছে। ডাক্তাররা উনাকে টাইম টু টাইম সব কিছু অবহিত করছেন। কিন্তু উনি তাতে সম্মতি দিচ্ছেন না।  

সব দিক বিবেচনা করে তার জামিন আবেদন খারিজের আর্জি জানান খুরশীদ আলম খান।  

এর আগে সকাল সোয়া ১০ টায় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতির বেঞ্চে আপিল শুনানি শুরু হয়। এ সময় সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মেডিক্যাল বোর্ডের পাঠানো প্রতিবেদন আদালতের কাছে পেশ করেন।  

গত ২৮ নভেম্বর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জানতে মেডিক্যাল বোর্ডের রিপোর্ট চান। যা ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে আপিল বিভাগে দাখিল করতে বলা হয়।  

একই সঙ্গে ৫ ডিসেম্বর আদেশের জন্য দিন রাখা হয়। তবে ওইদিন রিপোর্ট পাঠানো হয়নি। এরপর আদালত কোনো ব্যর্থতা ছাড়াই ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়ে শুনানি ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুলতবি করেন।

গত ৫ ডিসেম্বর আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছিলেন, বিএসএমএমইউ-এর ভিসি জানিয়েছেন, কিছু টেস্ট হয়েছে, কিছু বাকি আছে। তাই প্রতিবেদন দিতে সময় দরকার।  

এরপর আদালত কোনো ব্যর্থতা ছাড়াই ১১ ডিসেম্বর মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়ে শুনানি ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুলতবি করেন।
 
এ সময় খালেদার জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন প্রতিবেদন রোববার বা সোমবার (৮ ও ৯ ডিসেম্বর) দিতে নির্দেশনার আবেদন জানান। কিন্তু তারিখ পরিবর্তন করেননি আদালত। এর পরপরই বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা আদালত কক্ষে হইচই শুরু করেন। একপর্যায়ে বিচারপতি এজলাস কক্ষ ত্যাগ করেন। কিন্তু এজলাসে অবস্থান করে স্লোগান দিতে থাকেন আইনজীবীরা।
 
বিরতির (বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টা) পর ফের আদালত বসলে জয়নুল আবেদীন শুনানি করতে চান। কিন্তু আদালত তাতে সায় দেননি। এর মধ্যে হট্টগোলের কারণে অন্য মামলার শুনানিও ব্যাহত হয়। এ সময় বিএনপিপন্থি ২/১ জন সিনিয়র আইনজীবী আদালত কক্ষ থেকে বের হতে চাইলে জুনিয়রদের বাধার মুখে পড়েন।
 
ওইদিন আপিল বিভাগের বিচারকাজ শেষ হওয়ার নির্ধারিত সময়সীমা দুপুর সোয়া ১টার দিকে এজলাস কক্ষ ত্যাগ করেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির বেঞ্চ। পরে আইনজীবীরাও বের হয়ে যান।
 
এর আগে ২৫ নভেম্বর জামিন আবেদনের শুনানির জন্য আপিল বেঞ্চ ২৮ নভেম্বর দিন ঠিক করেন। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড পেয়ে বন্দি রয়েছেন খালেদা জিয়া। আপিলের পর হাইকোর্টে যা বেড়ে ১০ বছর হয়।

পরে ২০১৮ সালের ১৮ নভেম্বর খালাস চেয়ে আপিল বিভাগে খালেদা জিয়া জামিন আবেদন করেন। তবে সেই আবেদন এখনো আদালতে উপস্থাপন করেননি তার আইনজীবীরা।

গত বছরের ২৯ অক্টোবর পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের সাত নম্বর কক্ষে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত- ৫’র বিচারক মো. আখতারুজ্জামান (বর্তমানে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি) জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন।

একই সঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সাজা হয়েছে মামলার অপর তিন আসামিরও।
 
দণ্ডপ্রাপ্ত অপর তিন আসামি হলেন-সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র প্রয়াত সাদেক হোসেনখোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
 
গত বছরের ১৮ নভেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এর বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। পরে গত ৩০ এপ্রিল জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাত বছরের দণ্ডের বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে অর্থদণ্ড স্থগিত এবং সম্পত্তি জব্দ করার ওপর স্থিতাবস্থা দিয়ে দুই মাসের মধ্যে ওই মামলার নথি তলব করেছিলেন।

পড়ুন>>খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শেষ
 
এরপর ২০ জুন বিচারিক আদালত থেকে মামলার নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। ৩১ জুলাই বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ তার জামিন আবেদন খারিজ করে দেন।
 
পরে ১১ সেপ্টেম্বর ফের জামিন আবেদন ফেরত দেন বিচারপতি ফরিদ আহমেদ ও বিচারপতি এএসএম আব্দুল মোবিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
 
২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা করা হয়। ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
 
তদন্ত শেষে ২০১২ সালে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদাসহ চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম শেষ হলে দুদকের পক্ষে এই মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণা করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৯/আপডেট: ১৫০৩ ঘণ্টা
ইএস/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।