ঢাকা: রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে চাঞ্চল্যকর সগিরা মোর্শেদ খুনের ঘটনায় অভিযোগ গঠনের উপর আংশিক শুনানি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশের আদালতে এ শুনানি হয়।
এদিন তিন আসামির আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী অব্যাহতির (ডিসচার্জ) আবেদনের উপর শুনানি করেন। এই তিন আসামি হলেন- নিহত সগিরা মোর্শেদের ভাসুর ডা. হাসান আলী চৌধুরী, তার স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা ওরফে শাহীন, হাসান আলীর শ্যালক আনাস মাহমুদ ওরফে রেজওয়ান।
শুনানিতে এহসানুল হক সমাজী বলেন, প্রথমত, পূর্ববর্তী বিচারে এই মামলায় বাদীসহ সাতজন সাক্ষ্য দেন। এই আসামিদের নাম তাদের বক্তব্যে আসেনি। ওই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে যে অধিকতর তদন্ত ও সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিলের যে আদেশ দেন সেটি আইনসিদ্ধ হয়নি। দ্বিতীয়ত, ডা. হাসান ও তার স্ত্রীর কাছ থেকে নেওয়া ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি নেওয়াটা ছিল ত্রুটিপূর্ণ। কারণ একই সময়ে দু’জনকে জবানবন্দি রেকর্ডের জন্য একই ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করা হয় এবং খুব স্বল্প সময়ের ব্যবধানে তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। এটা আইনসিদ্ধ হয়নি।
তাছাড়া তারা তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন। তৃতীয়ত, এই আসামিদের বিরুদ্ধে ৩০২ ধারাসহ অন্য কোনো অভিযোগের গ্রহণযোগ্য প্রমাণ নেই। তাই আসামিদের বিরুদ্ধে এই মামলার কার্যক্রম অব্যাহত রাখার যৌক্তিক কোনো কারণ বিদ্যমান নেই। এসব যুক্তি দেখিয়ে অব্যাহতির আবেদন নিয়ে শুনানি করেছি।
এরপর আরেক আসামি ভাড়াটে খুনি মারুফ রেজার আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান অব্যাহতির আবেদনের উপর শুনানির জন্য সময় আবেদন করেন। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ২ ডিসেম্বর অভিযোগ গঠন বিষয়ে শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
গত ৯ নভেম্বর আসামিপক্ষ দু’টি আবেদন করে। তার মধ্যে একটি আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল অসুস্থ থাকায় সময় চেয়ে আবেদন। অপরটি হলো আসামি মারুফ রেজা অপ্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে তার বিচার শিশু আইনে করার আবেদন নামঞ্জুর বিষয়ে হাইকোর্টে একটি রিভিশন আবেদন করা হয়েছে। তাই এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশ দাখিলে আরেকটি সময় আবেদন করে।
আদালত হাইকোর্টের আদেশ দাখিল ও অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য ২৬ নভেম্বর দিন ধার্য করেন। এরই মধ্যে মারুফ রেজার করা আবেদন হাইকোর্টে খারিজ হওয়ায় বৃহস্পতিবার অভিযোগ গঠন শুনানি শুরু হয়।
এ ঘটনার ৩০ বছর পর ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চারজনের বিরুদ্ধে গত ১৪ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। এক হাজার ৩০৯ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৫৭ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন- নিহত সগিরা মোর্শেদের ভাসুর ডা. হাসান আলী চৌধুরী, তার স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা ওরফে শাহীন, হাসান আলীর শ্যালক আনাস মাহমুদ ওরফে রেজওয়ান ও ভাড়াটে খুনি মারুফ রেজা। এছাড়া পূর্ববর্তী অভিযোগপত্রে মন্টু ঘোষের নাম ছিল।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই সগিরা মোর্শেদ সালাম ভিকারুননিসা নূন স্কুল থেকে মেয়েকে আনতে যাচ্ছিলেন। বিকেল ৫টার দিকে সিদ্ধেশ্বরী রোডে পৌঁছামাত্র মোটরবাইকে আসা ছিনতাইকারীরা তার হাতের সোনার চুড়ি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তিনি দৌড় দিলে তাকে গুলি করা হয়। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই সগিরা মোর্শেদ সালাম মারা যান।
ওইদিনই রমনা থানায় অজ্ঞাত পরিচয়দের বিরুদ্ধে মামলা করেন সগিরা মোর্শেদ সালামের স্বামী সালাম চৌধুরী।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০২০
কেআই/এএ