ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

পি কে কাণ্ড: এস কে সুর ও শাহ আলমকে গ্রেফতার না করায় হাইকোর্টের বিস্ময়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২১
পি কে কাণ্ড: এস কে সুর ও শাহ আলমকে গ্রেফতার না করায় হাইকোর্টের বিস্ময়

ঢাকা: হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ নিয়ে বিদেশে পালিয়ে থাকা প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ আসার পরও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী ও নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে গ্রেফতার না করায় দুদকের ভূমিকায় বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।

পিকে হালদারকে গ্রেফতারে পদক্ষেপ সংক্রান্ত স্বপ্রণোদিত হয়ে জারি করা রুল শুনানিতে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার (১৫ মার্চ) এমন মন্তব্য করেন।

সাবেক ডেপুটি গর্ভনর এস কে সুর চৌধুরী ও নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম এবং বিভিন্ন আসামির ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা আগামী ৬ এপ্রিলের মধ্যে জানাতে দুদককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে পি কে হালদারের বিদেশ যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে দুদক কি পদক্ষেপ নিয়েছে তাও একই সময়ের মধ্যে লিখিতভাবে জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আদালত পরবর্তী আদেশের জন্য ৬ এপ্রিল দিন ধার্য করেছেন।  

আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মো. আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিনউদ্দিন মানিক।  

বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার তানজিব উল আলম ও ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ।  

শুনানির একপর্যায়ে আদালত দুদক আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এস কে সুর চৌধুরী ও শাহ আলমের বিষয়ে কি করেছেন? কেন তাদের গ্রেফতার করছেন না? আপনারা না পারলে বলুন। আমরা আদেশ দেবো।  

আদালত আরও বলেন, এ ধরনের ব্যক্তিদের ডেকে মেহমানদারি করতে পারেন না। অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।  

এদিকে পি কে হালদার বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার দিনে বেনাপোল সীমান্তে দায়িত্বরত ইমিগ্রেশন পুলিশের ৫৯ জন সদস্যের নামের তালিকা হাইকোর্টে দাখিল করা হয়।

এ প্রতিবেদন দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, দুদক থেকে দেওয়া চিঠি বেনাপোল সীমান্তে ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর বিকেল ৫টা ৪৭ মিনিটে ইমেইলযোগে পাঠানো হয়। এই চিঠি পাওয়ার দুই ঘণ্টা ৮ মিনিট ৩০ সেকেন্ড আগেই বিকেল ৩টা ৩৮ মিনিটে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যান পি কে হালদার।  

তিনি বলেন, দুদক চিঠি দেওয়ার আগে এ ধরনের জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ফোন করতে পারতেন। কিন্তু তা করেনি। ওভার ফোনে জানালেও ব্যবস্থা নিতে পারতো এসবি।  দুদক চিঠি প্রস্তুত করছে এটা হয়তো জেনে গিয়েছিলেন পি কে হালদার। আমরা মনে করি, পি কে হালদারের বিষয়ে দুদকে অবহেলা ছিল।  

রাষ্ট্রপক্ষের এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে দুদক আইনজীবী বলেন, আমাদের কাছে ডকুমেন্টস আছে। ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর পি কে হালদারসহ ২৪ জনের বিষয়ে এসবিকে চিঠি দেওয়া হয়। এসপি সদর দপ্তর চিঠি গ্রহণ করে ২৩ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টায়। এই চিঠি তারা পেয়েছে কিনা সেজন্য তা ২৩ অক্টোবর দুপুর ২টা ৪৩ মিনিটে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শককে (এসবি) হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে জানানো হয়। এরপরও প্রায় এক ঘণ্টা পর পি কে হালদার বেনাপোল সীমান্ত পার হয়েছেন।  

তিনি বলেন, এখানে দুদকের কোনো অবহেলা নেই। আর সরকারি অন্য কোনো সংস্থাকেও দোষারোপ করছি না।  পি কে হালদারের বিরুদ্ধে ২৮ অক্টোবর অভিযোগ এসেছে। এর আগে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছিল না। দুদক নিজ উদ্যোগেই এসবিকে তার বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে চিঠি দেয়। দুদক সন্দেহ করেই পি কে হালদারের নাম তালিকায় দেয়। দুদক তার নাম দেবার পরই পি কে হালদার লাইমলাইটে এসেছে।

এ সময় আদালত বলেন, এসবি লিখিতভাবে প্রতিবেদন দিয়েছে। দুদক লিখিতভাবে দিন। আমরা দেখতে চাই এখানে কার গাফিলতি রয়েছে।

১৮ নভেম্বর দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনে ‘পি কে হালদারকে ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইবে দুদক’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে গত ১৯ নভেম্বর তাকে বিদেশ থেকে ফেরাতে এবং গ্রেফতার করতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়ে স্বপ্রণোদিত আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় ১৫ ফেব্রুয়ারি পাসপোর্ট জব্দ থাকার পরও প্রশান্ত কুমার হালদার কিভাবে বিদেশে পালিয়ে গেলো তা জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮২১ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২১
ইএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।