ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

সেই দিনমজুরদের জামিন বহাল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০২১
সেই দিনমজুরদের জামিন বহাল

ঢাকা: করোনায় প্রণোদনা দেওয়া হবে- প্রতারক চক্রের এমন ফাঁদে পড়ে অর্থ লোপাটের অভিযোগে গ্রেফতার কুড়িগ্রামের পাঁচ দিনমজুরকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।

রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) আপিল বিভাগের অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ‘নো অর্ডার’ আদেশ  দেন।

ফলে তাদের জামিন বহাল রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন। দিনমজুরদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শিশির মনির।

গত ৬ অক্টোবর ওই পাঁচজনকে এক বছরের জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেই জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।   

পাঁচ দিনমজুর হলেন- বিধবা ফুলমনি রানি, রণজিৎ কুমার, প্রভাস চন্দ্র, কমল চন্দ্র রায় ও নিখিল চন্দ্র বর্মন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন যুক্ত করে এ জামিন আবেদন কর হয়। আইনজীবী শিশির এ দিনমজুরদের পক্ষে টাকা না নিয়ে মামলাটি পরিচালনা করেছেন।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের নওদাবস গ্রামের বাসিন্দা রণজিৎ কুমার, প্রভাস চন্দ্র, কমল চন্দ্র রায়, সুবল চন্দ্র মোহন্ত। সহজ-সরল দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ। তাদের কাছে হঠাৎ একদিন এসে হাজির হন স্বপন নামে এক ব্যক্তি। তাদের সরকারি সহায়তা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলেন স্বপন। বলেন সহায়তা আসবে ব্যাংকে, তাই সোনালী ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে।  

স্বপনের কথায় রাজি হয়ে যান রনজিৎ কুমার আর প্রভাস চন্দ্ররা। নিজের নামটুকুও লিখতে না পারা এসব কৃষকের নামে সোনালী ব্যাংক নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) শাখায় খোলা হয় সঞ্চয়ী হিসাব।

এরপর কাগজপত্র স্বাক্ষর করতে হবে বলে তাদের পাঁচজনকে ঢাকায় নিয়ে যান স্বপন। সেখানে অনেক কাগজে সই নিয়ে বাড়িতে ফেরত পাঠান।  

কিছুদিনের মধ্যে রণজিৎ কুমারের সঞ্চয়ী হিসাবে ৪৮ লাখ ৪৫ হাজার ৭২০ টাকা, প্রবাস চন্দ্র রায়ের হিসাব নম্বরে ৬৫ লাখ ৭২ হাজার ১২০ টাকা, সুবল চন্দ্রের হিসাব নম্বরে ৪০ লাখ ৭১ হাজার ৭২০ টাকা, কমল চন্দ্রের হিসাব নম্বরে ৪২ লাখ ৪৯ হাজার ৮৮০ টাকা ও ফুলমণি রানির হিসাব নম্বরে ৪৮ লাখ ৭০ হাজার ৫২০ টাকা জমা হয়।

তবে এত টাকা জমা হওয়ার খবর ওই কৃষকরা পাননি। গাড়ি ভাড়ার টাকা ছাড়া তেমন কোনো অর্থ সহায়তাও স্বপন মিয়া তাদের দেননি। সরকারি সহায়তা পাওয়ার আশায় তারা দিন গুনছেন।

গত ১ জুলাই গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের একটি ভুয়া অ্যাডভাইস দাখিলের মাধ্যমে জালিয়াতি করে সোনালী ব্যাংক থেকে ২ কোটি ৪৬ লাখ ৯ হাজার ৯৬০ টাকা তুলে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে নয়জনের নামে মামলা হয়েছে। গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানায় মামলাটি করেন সোনালী ব্যাংক শ্রীপুর থানা হেডকোয়ার্টার শাখার ব্যবস্থাপক রেজাউল হক। সেই মামলায় নয়জনের মধ্যে পাঁচজন হলেন- রণজিৎ কুমার, প্রবাস চন্দ্র, কমল চন্দ্র, ফুলমণি রানী ও সুবল চন্দ্র। মামলায় অভিযুক্ত অন্য ব্যক্তিরা হলেন- গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বজলুর রশিদ, অফিসের অডিটর আরিফুর রহমান, মাস্টাররোলে কর্মরত তানভীর ও ঢাকার উত্তরখান জামতলা এলাকার শাহেনা আক্তার।

গত ২ জুলাই দুপুরের দিকে সবার বাড়িতে হাজির পুলিশ! কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই রণজিৎ কুমার, প্রভাস চন্দ্র রায়, কমল চন্দ্র রায়, ফুলমণি রানিকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পুলিশ।

আইনজীবী শিশির মনির জানান, পরে সুবল চন্দ্রও গ্রেফতার হন। নিম্ন আদালতে তাদের জামিন নামঞ্জুরের পর উচ্চ আদালতে আবেদন করা হয়।  

আরও পড়ুন...
** কুড়িগ্রামের সেই ৫ দিনমজুরের হাইকোর্টে জামিন
** দিনমজুরদের জামিন স্থগিত চায় রাষ্ট্রপক্ষ 


বাংলাদেশ সময়: ১২৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০২১
ইএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।