ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

সেই আইনজীবীকে পেশা থেকে বিরত রাখার আদেশ স্থগিত

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০২২
সেই আইনজীবীকে পেশা থেকে বিরত রাখার আদেশ স্থগিত

ঢাকা: মানিকগঞ্জে ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও সহযোগীদের নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের পর আইনজীবী মাহাবুবুল ইসলামকে ১৫ দিনের জন্য পেশা থেকে বিরত থাকতে আইনজীবী সমিতির দেওয়া সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট।

একইসঙ্গে জেলা জজের চিঠি এবং পুরো ঘটনাটি তদন্ত করে তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে রেজিস্ট্রার জেনারেলকে বলা হয়েছে।

 

মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন।

রুলে মানিকগঞ্জ জেলা জজের চিঠি পাঠানোর পর ওই আইনজীবী ১৫ দিনের জন্য পেশা থেকে বিরত থাকতে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ব ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

চার সপ্তাহের মধ্যে আইন সচিব, দুদকের চেয়ারম্যান, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল, বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও সচিব, মানিকগঞ্জ জেলা জজ, দুদকের মানিকগঞ্জ অফিসের উপপরিচালক, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।  

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আশরাফুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।   

এর আগে সোমবার (২৪ অক্টোবর) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আশরাফুল ইসলাম আশরাফ এ রিট দায়ের করেন।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, গত ১৯ অক্টোবর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য মাহাবুবুল ইসলামকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন সমিতির সভাপতি জামিলুর রশিদ খান ও সাধারণ সম্পাদক নূরতাজ আলম বাহার। লিখিত এই নোটিশ ১৫ কার্যদিবসের জন্য তাকে আইন পেশা থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

জানা যায়, ‘ঘুষ, দুর্নীতি আর ন্যায়বিচার এক সঙ্গে চলে না’—এই শ্লোগান সংবলিত লিফলেট বিতরণ ও সহযোগীদের নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করার জন্য মাহাবুবুল ইসলামকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে নির্দেশনা পাওয়ার পর পরই তিনি আবারও রাজপথে দাঁড়িয়ে এর প্রতিবাদ করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ অক্টোবর জেলার আদালত প্রাঙ্গণে মাহাবুবুল ইসলামের নেতৃত্বে মানিকগঞ্জ বারের কয়েকজন আইনজীবী বিচার বিভাগে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। কর্মসূচিতে তারা দাবি করেন, অ্যাফিডেভিট করতে নির্দিষ্ট ফি থেকে অতিরিক্ত ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। ১ হাজার টাকার কমে কোনো নকল সরবরাহ করা হচ্ছে না। রেকর্ড রুম থেকে নথি পেতে হলে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়। জেলার বিচার বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য বিচার প্রার্থীদের মামলা খরচ অনেক বেড়ে যায়।

লিখিত নোটিশে বলা হয়, মাহাবুবুর ইসলাম ও তার সহযোগী আইনজীবীদের কর্মকাণ্ডে বার ও বেঞ্চের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। তারা জেলা আইনজীবী সমিতির গঠনতন্ত্রের দ্বাদশ অধ্যায়ের ২০ এর ‘ক’ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করেছেন।

মানিকগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জামিলুর রশিদ খান বলেন, আমরা সবাই ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে। আইনজীবী মাহাবুবুল ইসলাম প্রতিবাদের নামে সিঙ্গাইর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। এর প্রেক্ষিতে গত রোববার (১৬ অক্টোবর) সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ বিষয়টি জানতে চেয়ে সমিতিকে এক পত্র দিয়েছেন। এ কারণে সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আইনজীবী মাহাবুবুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ’

এ দিকে ১৯ অক্টোবর বিকেলে নোটিশ পাওয়ার পর পরই প্রতিবাদে আদালত চত্বরের সামনে শহীদ রফিক সড়কে নেমে পড়েন আইনজীবী মাহাবুবুল ইসলাম। গলায় প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে তিনি প্রতিবাদ করেন।  
প্ল্যাকার্ডে তিনি লেখেন, ‘ঘুষের চেয়ে ভিক্ষা উত্তম। করলাম প্রতিবাদ, হইলাম বহিষ্কার। আমাকে ভিক্ষা দিন। ’

আইনজীবী মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, ‘ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় আমাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। আদালতের বিচারকরা অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কথায় প্রভাবিত হয়ে হয়রানি করছেন। যেখানে প্রতিদিন ঘুষের কারবার চলে, এর বিরুদ্ধে কথা বললে নাকি বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। এই দেশের নাগরিক হয়ে আমরা আর কত অপরাধ সহ্য করব। ’

>>আরও পড়ুন: দুর্নীতির প্রতিবাদকারী মানিকগঞ্জের সেই আইনজীবীর পক্ষে রিট 

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০২২
ইএস/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।