পোশাক শ্রমিকদের গানের প্রতিযোগিতা ‘গর্ব’ খেতাব বিজয়ী রোকসানা খাতুন এসেছিলেন বাংলানিউজ অফিসে। তার সঙ্গে ছিলেন প্রতিযোগিতার দুই রানার আপ পাভেল রহমান ও রাজীবুল ইসলাম।
বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা পোশাক শ্রমিকদের সঙ্গীত প্রতিভাকে খুঁজে বের করতে বিজিএমএইএ এবং গানচিলের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো রিয়েলিটি শো ‘গর্ব’। গত বছরের ২৩ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এ ইভেন্টের চুড়ান্ত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় গত ১৯ মার্চ শনিবার সন্ধ্যায় হোটেল সোনারগাঁওয়ের গ্রিনহাউসে। ‘গর্ব’-এর খেতাব বিজয়ী রোকসানা প্রথম পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন ১০ লাখ টাকা প্রথম রানার-আপ পাভেল রহমানকে ৬ লাখ টাকা ও দ্বিতীয় রানার-আপ রাজীবুল ইসলামকে ৪ লাখ টাকা পুরস্কার পান।
‘গর্ব’ ইভেন্টের খেতাব বিজয়ী রোকসানা খাতুন ডিবিএল গ্রুপে সিনিয়র অপারেটর হিসেবে কর্মরত আছেন। তার গ্রামের বাড়ি রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার আনন্দগ্রামে। বাবার নাম মো: আইযূব আলী ও মায়ের নাম মোছা: আবেদা বেগম। পুরস্কার পাওয়ার অনুভূতির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমি এখনো একধরণের ঘোরের মধ্যে আছি। গান একমুহূর্তে পাল্টে দিয়েছে আমার সাধারণ জীবন। স্বপ্নের মতো মনে হয় সবকিছূ। রোকসানা জানান, ছোটবেলা থেকে গান শুনতে তার ভালো লাগে। কিন্তু নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়ে হওয়ায় গান শেখা সম্ভব হয়ে উঠে নি। তবে গুন গুন করে গাইতেন পছন্দের গান। সবাই বেশ প্রশংসা করতো গানের। ডিবিএল গ্রুপে অপারেটর হিসেবে চাকরি নেওয়ার পর তার গান শুনে কর্মকতারা তাকে অফিসের পর একজন ওস্তাদজির কাছে গান শেখাতে পাঠান। এই নিয়ে তার সংসারে শুরু হয় ঝামেলা। রোকসানার স্বামী গান-বাজনা শিখতে নিষেধ করে। কিন্তু নিজের ছোটবেলা স্বপ্নপূরণের সূযোগ রোকসানা ছাড়তে রাজি হয় না। এই নিয়ে কলহের একপর্যায়ে স্বামী কিছুদিনের জন্য তাকে ছেড়ে আলাদা থাকা শুরু করে। এরপর ‘গর্ব’ প্রতিযোগিতায় যখন রোকসানা সেরা ১০-এ উঠে আসে, তখনই তার স্বামী ভুল বুঝতে পারে এবং তার পাশে এসে দাঁড়ায়। তবে রোকসানা স্বপ্নেও ভাবেন নি যে, প্রতিযোগিতায় তিনি সবার সেরা হাবেন।
পুরস্কার পাওয়া ১০ লাখ টাকা দিয়ে কী করবেন ? উত্তরে রোকসানা বললেন, আমি দুই সন্তানের মা। আমার বড় ছেলে আরিফ, বয়স ৭ আর ছোট ছেলে আবির, বয়স ৯ মাস। আমি এ টাকায় আমার বাচ্চাদের ভবিষ্যত গড়তে চাই। নিজের ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা জানিয়ে রোকসানা বললেন, অনেকেই আমাকে বলছে তোমার আর চাকরি না করলেও তো চলে। কিন্তু আমি চাকরি চালিয়ে যাবো। আগের মতোই কষ্ট করে চলবো। এ টাকাটা আমি আমার সন্তানদের জন্য সঞ্চয়ে রাখতে চাই। আর চাই গান গাইতে। গান আজকে আমাকে যে সন্মান এনে দিয়েছে তার মর্যাদা আমি রাখতে চাই।
প্রথম রানার-আপ পাভেল রহমান হট ড্রেস লিমিটেডে প্যাকিং অপারেটর পদে কর্মরত আছেন। তার গ্রামের বাড়ি মাগুরা জেলার শত্রুজিতপুরে। বাবার নাম মো: আব্দুল আলী বিশ্বাস ও মায়েম নাম রহিমা বেগম। নিজের এই সাফল্যের পুরো কৃতিত্বটা তিনি স্ত্রী মুন্নীকে দিতে চান। এ বিষয়ে পাভেল বললেন, ছোটবেলায় অল্প কিছুদিন গান শিখেছিলাম। কিন্তু গরিব ঘরের ছেলে হাওয়ায় গান শেখা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় নি। কর্মজীবনে ঢোকার পর গান গাওয়া ভুলেই গিয়েছিলাম। বিয়ের পর স্ত্রী ধরলো, তাকে প্রতিদিন গান শোনাতে হবে। তাকে শোনানোর জন্যই নতুন নতুন গান শিখতে শুরু করি। পাভেল জানালেন, পুরস্কারের টাকা দিয়ে কী করবেন এখনো ঠিক করেন নি। পুরো টাকাটাই তিনি স্ত্রীর হাতে তুলে দিতে চান।
দ্বিতীয় রানার-আপ রাজীবুল ইসলাম চৈতি গ্রুপে স্যাম্পল সুপারভাইজার পদে কর্মরত আছেন। তার গ্রামের বাড়ি বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার মধ্যভূতেরদিয়া গ্রামে। বাবার নাম মো: নূরুল ইসলাম ও মায়ের নাম মাহেনূর ইসলাম। রাজীব জানালেন, তার বাবা গান গাইতেন। বাবার কাছেই গান শিখেছেন খুব ছোটবেলা থেকে। গান গেয়ে পেয়েছেন বহু পুরস্কার। চাকরি নেবার পর কাজের মধ্যে গুন গুন করে গান গাওয়ার কারণে তাকে একাধিকবার চাকরিও হারাতে হয়েছে। রাজীব বললেন, আমি বিশ্বাস করি আমার জন্ম হয়েছে গানের জন্য। পুরস্কারের টাকাটা আমি গানের পেছনেই খরচ করতে চাই।
বাংলাদেশ সময় ১৯৪৫, মার্চ ২১, ২০১১