ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

মর্ত্যের সুন্দরীতমা হিমেনা নাভাররেতে ...

আহমেদ জুয়েল | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১০

হিন্দি কবি মালিক মুহম্মদ জায়সির ‘পদুমাবৎ’ কিংবা মধ্যযুগের  সেরা  বাঙালি কবি আলাওলের ‘পদ্মাবতী’ কাব্যের নায়িকা পদ্মাবতীর রূপের বর্ণনা পড়ে আমরা দিশেহারা হই; তেমনি পৌরাণিক কাহিনীর স্বর্গীয় নর্তকী রম্ভা আর ঊর্বশীর রূপের বর্ণনায়ও হয়ে পড়ি রূপতৃষ্ণাতুর। সেই তৃষ্ণা আগেও ছিল, এখনও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে।

পদ্মাবতী আর রম্ভা-উর্বশীদের মতো এই আধুনিক যুগেও মর্ত্যের রূপসীদের তনুবিভঙ্গে আমরা মুগ্ধ হই, নয়ন জুড়াই আর ওদের নিজেদের করে বাহুপাশে পাবার লোভে হই কামনাকাতর।

আগের দিনে পৌরাণিক আর কিংবদন্তির সুন্দরীদের প্রতিযোগীতায় নামতে হতো না। তবে আধুনিক যুগে রূপ, গুণ আর ব্যক্তিত্বের ছটায় নিজেকে সুন্দরী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হয়। আর তাই প্রতি বছরই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সুন্দরী প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। আন্তর্জাতিকভাবে সবচেয়ে বড় দুটি প্রতিযোগিতার নাম মিস ওয়ার্ল্ড ও মিস ইউনিভার্স। গত ২৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয়ে গেল মিস ইউনিভার্স ২০১০। যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে অনুষ্ঠিত ওই প্রতিযোগিতায় ৮২ সুন্দরীকে পেছনে ফেলে জয়ের মুকুট পরেছেন মেক্সিকান সুন্দরী হিমেনা নাভাররেতে।

অথচ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে মিডিয়ার দৃষ্টি তার দিকে ততোটা ছিল না। শেষ ধাপে এসে সবাইকে চমকে দিয়ে ব্যক্তিত্ব আর বুদ্ধিমত্তায় তিনি ছিনিয়ে নেন জয়ের মুকুট। মিস ইউনিভার্স নির্বাচিত হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী সামাজিক ওয়েব সাইট টুইটার আর ফেসবুকে তার অযুত নিযুত ভক্ত-সমর্থক রীতিমতো হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। এই সুন্দরীতমাকে তড়িঘড়ি অভিনন্দন জানাতে ভুল করেননি মেক্সিকান প্রেসিডেন্ট ফিলিপে কালদেরন।

বিশ্ব সুন্দরীর এই খেতাব অর্জন করতে তাকে কম পরিশ্রম করতে হয়নি। দীর্ঘদিনের শ্রম আর মেধার চর্চায় তিনি একটু একটু করে এগিয়েছেন। প্রথমে নির্বাচিত হয়েছেন নিজ রাজ্যের সুন্দরী হিসেবে। তারপর নিজের দেশের আর তারপর ...।
আসুন তাহলে জেনে নিই এই মেক্সিকান শ্যামাঙ্গী সুন্দরী ঊর্বশীর কিছু গোপন কথা।

ভালোবাসেন সংবেদনশীল পুরুষ
‘আমি পৃথিবীর সব পুরুষকে একটা উপদেশ দিতে চাই, সবাই সংবেদনশীল হোন, সুন্দর এবং চমৎকারভাবে আপনার আবেগ উপস্থাপন করুন। ’ প্রতিযোগিতার আগে মিস ইউনিভার্স অরগানাইজেশনের কাছে এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন মিস ইউনিভার্স মেক্সিকান সুন্দরী হিমেনা নাভাররেতে। কারণ তিনি সংবেদনশীল পুরুষ পছন্দ করেন। এরই মধ্যে তিনি নাকি তেমন এক পুরুষের সন্ধানও পেয়ে গেছেন। চার বছর আগ থেকেই মন দেওয়া নেওয়াও চলছে তার সঙ্গে। তার সেই ভাগ্যবান ছেলেবন্ধুর নাম পাবলো নিয়েতো।

শক্ত প্রশ্নের উত্তর ভালোই দিতে জানেন
সোমবার মিস ইউনিভার্স নির্বাচিত হওয়ার পর মন্তব্য চেয়ে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, অ্যারিজোনার সাম্প্রতিক অভিবাসন আইন সম্পর্কে। হিমেনা দক্ষ কূটনীতিকের মতো কৌশলে সে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন, ‘প্রত্যেক দেশেরই বিধিবদ্ধ আইন প্রয়োগ করার অধিকার আছে। কিন্তু আমি আপনাকে বলব যে, মেক্সিকো এবং লাতিন আমেরিকার যারা যুক্তরাষ্ট্রে বাস করেন, তারা খুবই পরিশ্রমী মানুষ। তারা পরিশ্রমের মাধ্যমেই জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাতে চান। ’

১৫ থেকেই শুরু ...
৫ ফুট সাড়ে ৮ ইঞ্চির ২২ বছর বয়সী এই তরুণীর বয়স যখন ১৫, তখন থেকেই তিনি মডেলিংয়ের সঙ্গে জড়িত। তিনি নিজেকে প্রকৃতিপ্রেমী হিসেবেই তুলে ধরেন। নৌকা এবং মোটরসাইকেল নিয়ে গতির ভ্রমণ তার খুবই প্রিয় বিষয়। ৭ বছর ধরে মডেলিংয়ের দুনিয়ায় তিনি পুরোপুরি ব্যস্ত। ক্যাটওয়াকের বড় বড় আসরে তার লাস্যময় উপস্থিতি মিস ইউনিভার্স নির্বাচিত হওয়ার বহু আগেই তাকে তারকা বানিয়ে দিয়েছিল। সর্বশেষ তিনি ডিজাইনার ম্যাকারিও হিমেনেথের আয়োজনে গত বছর মেক্সিকো ফ্যাশন উইকে অংশ নেন।

দেশ, মানুষ আর উপাধির প্রতি ভালোবাসা
হিমেনা নাভাররেতে মানবতাবাদী আর দেশপ্রেমী। মিস ইউনিভার্স নির্বাচিত হওয়ার পর আবেগে আপ্লুত হয়ে তাই তিনি বলেছেন, সুন্দরীর মুকুট নয়, কাঁধে ঝোলানো কাপড়টাই তার কাছে সবচেয়ে বড় পুরস্কার। কারণ ওটাতে মেক্সিকোর নাম লেখা আছে। তাছাড়া তিনি বলেন, আমার দেশকে উপস্থাপন করতে পেরে আমি খুবই গর্বিত এবং এটা আমার জন্য খুবই সম্মানের বলে মনে করি। তিনি চান সারা দুনিয়ার মানুষ তার দেশ এবং দেশের মানুষ সম্পর্কে জানুক।


আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা আছে বলেই প্রতিযোগিতায় জয়ী হওয়ার পরপরই তিনি বলতে পেরেছেন, যতদিন মিস ইউনিভার্স থাকবেন ততদিন এইচআইভি/এইডস ও স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতার কাজ করে যাবেন।

সুন্দরী পুষ্টিবিদ!
আমি পুষ্টি বিষয়ে পড়াশোনা করছি। আর তাই সবাইকে বোঝাতে চাই, বাইরের সৌন্দর্যটাই বড় নয়, ভেতরের সুস্থতাই বড় ব্যাপারে। মেক্সিকোর আরেক সাবেক শ্যামাঙ্গী মিস ইউনভার্সের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আপনি যখন নিজের ভেতরটা সুস্থ ও সুন্দর মনে করবেন, তখন জানবেন আপনার অবয়বটাও দেখতে সুন্দর। ’

প্রেসিডেন্টের শুভেচ্ছা
২৩ আগস্ট মিস ইউনিভার্স নির্বাচিত হওয়ার পরপরই মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট কালদেরন হিমেনাকে অভিনন্দন জানান। প্রোিসডেন্ট তার টুইটার অ্যাকাউন্টে শুভেচ্ছা জানিয়ে লেখেন, ‘তার এই বিজয় মেক্সিকোর সব মানুষের জন্য গর্ব আর তৃপ্তির আনন্দ বয়ে এনেছে। ’

তাহার পরিচয় ...
বিশ্বের ৮২ সুন্দরীকে পেছনে ফেলে ২৩ আগস্ট চূড়ান্ত প্রতিযোগিতার বিজয় মুকুট ছিনিয়ে নেওয়া ২২ বছর বয়সী এই সুন্দরীর জন্মনাম হিমেনা নাভাররেতে রোসেত। জন্ম ১৯৮৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মেক্সিকোর হালিসকো রাজ্যের গুয়াদালাহারায়। ২০০৯ সালে তিনি মেক্সিকান সুন্দরী প্রতিযোগীতায় জয়ী হন। মা-বা দু’জনেই দন্ত-চিকিৎসক। তাদের দু’ সন্তান। তবে হিমেনা ছোট না বড় জানা যায়নি।

পুরস্কার
মিস ইউনিভার্স হিসেবে তিনি যে মুকুটটি পুরস্কার পেয়েছেন, তার ডিজাইনার ও প্রস্তুতকারক ডায়মন্ড লেক্সাস ল্যাব। সাদা সোনা দিয়ে বানানো ৪১৬ দশমিক ০৯ ক্যারেট ওজনের ওই মুকুটে খচিত আছে ১৩৭১টি মূল্যবান রতœপাথর। মুকুট ছাড়াও তিনি পাচ্ছেনÑ নিউইয়র্ক ফিল্ম একাডেমির এক বছরের বৃত্তি এবং বিনামূল্যে এক বছরের পোশাক, জুতা ও চুল সজ্জার বিভিন্ন উপকরণ।

বাংলাদেশ সময়: আগস্ট ২৫, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।