ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

ভাপাপিঠা ও শীতবস্ত্রের গল্প

রেজাউর রহমান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০১৩
ভাপাপিঠা ও শীতবস্ত্রের গল্প

ছোটবেলায় পড়তাম, বসন্ত নাকি ঋতুর রাজা। কিন্তু আমার কাছে এই কথাটা কখনই সত্যি মনে হয় নাই।

আমি কোনোভাবেই খুঁজে পাই না, কীভাবে শীতের মত সুন্দর আরামদায়ক একটা ঋতুকে পেছনে ফেলে বসন্ত রাজা হতে পারে!

যাই হোক, পাঠকেরা হয়তো বা বুঝে গিয়েছেন এতক্ষণে যে আমার মতে শীত-ই হচ্ছে ঋতুর মহারাজ। কেনোই বা তা হবে না, শীতের মত এমন সৌন্দর্য কি আর কোনো সময় দেখা যায়? শুধুই বা সৌন্দর্যের কথা আসবে কেন, আরও অনেক প্রভাবক রয়েছে এই শীতকালের যা এই সময়টাকে করেছে আমার চোখে অনিন্দ সুন্দর।

সময়ের সাথে অনেক কিছুর পরিবর্তন হলেও শীতের সময়ের সেই আবেগ, কিছু নির্দিষ্ট কাজ, কিছু ভাললাগা এসব যেন বদলায়নি একদমই, শুধু বদলেছে সময়টা। আমার কথার সত্যতা নিয়ে হয়তোবা আপনার মনে প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে, কিন্তু বিশ্বাস করেন আপনার জীবনেও শীত বয়ে আনে এক অনাবিল আনন্দ।

একটু মনে করে দেখুন, আপনার ছোটবেলা হয়তোবা কেটেছে কোনো এক মফস্বল শহরে, অথবা এই বাংলাদেশেরই কোনো গ্রামে। এক শীতের রাতে হয়তো বাবা মায়ের কাছে আবদার করেছেন পরদিন খেজুরের রস খাবেন। আপনাকে সকাল বেলা আপনার বাবা মা তুলতুলে লেপের নিচ থেকে উঠিয়ে দারুণ স্বাদের সেই খেজুরের রসের গ্লাস ধরিয়ে দিয়েছেন হাতে। সেটা পান করার পর দিয়েছেন আরেক দফা ঘুম, নরম বিছানায় লেপ মুড়ি দিয়ে সেই ঘুমের  ভালোলাগা তো আর বছরের অন্য সময় পাওয়া যায় না! এই একটি মাত্র কারণে হলেও শীতকে তো সেরা ঋতু বলাই যায়!

স্কুলে যাওয়ার একটা ঝামেলা যদিও ছিল, কিন্তু মাথা থেকে পা পর্যন্ত গরম কাপড়ে মুড়িয়ে শীতটাই বেশি উপভোগ্য হয়ে উঠত। আরেকটু বড়বেলায় তো আপনি চা কফি পান করতে শিখে গেছেন, আর এর সাথে শীতের ঠাণ্ডাকে আরও বেশি উপভোগও করছেন।

এই তো, আমাদের অনেকেরই শীতের দিনে রিক্সায় করে যেতে যেতে ভাপাপিঠা খাওয়ার অভ্যেস আছে। রিক্সাওয়ালাকেও পিঠা খাওয়ার সঙ্গী করে নেন কেউ কেউ। রিক্সাওয়ালাকে এই একটি পিঠা দিতে পেরে আবার আমাদের মনে খনিকের চিন্তা চলে আসে, দিনের শুরুতেই একটা ভাল কাজ করলাম, বেশ ফুরফুরে লাগে। আর রিক্সাওয়ালা ভাইও পিঠা খেতে খেতে অনেক কিছু চিন্তা করতে থাকে। বাড়ি তার রংপুর। গতমাসে বাড়ি থেকে আসার সময় দেখে আসছে শীতের অবস্থা ভাল না। তার ২টা ছোট বাচ্চার শীতের কোনো কাপড় নাই। পরিবারে আরও আছে স্ত্রী ও বৃদ্ধা মা । তাদেরও শীত নিবারণের একমাত্র সম্বল চুলার পাশে বসে আগুনের তাপ নেওয়া, সেই চুলায় যদিও নিয়মিত আগুন জ্বলে না, জ্বলবেই বা কি করে, ঘরে চাল যে বাড়ন্ত। এসব চিন্তা খেলা করে যায় রিক্সাওয়ালার মাথায়, আর মনে মনে ভাবে সে তো রাজার হালে ঢাকা শহরে পিঠা খাচ্ছে আর তার বাচ্চরা হয়তোবা ভাতের ক্ষুদায় কাঁদছে। এই পিঠা যেন তার গলা দিয়ে এখন আর নামতে চায় না।

প্রিয় পাঠক, ওপরে উল্লিখিত রিক্সাওয়ালার তাও একটা কর্ম আছে, কিন্তু আমাদের এই দেশটার অনেক প্রত্যন্ত এলাকাতে এমন অনেক মানুষ আছে যাদের কোনো কাজের সুযোগ নেই, এই শীতে পরার মত কোনো পোশাক নেই। আপনার-আমার কাছে শীত আসে আনন্দ হয়ে আর তাদের কাছে আসে জগদ্বল পাথর হয়ে। মনে এখন প্রশ্ন জাগে, শীতের বিলাসিতা কি আমাদের জন্য? যে দেশের সিংহভাগ মানুষ মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারে না, আমি কি করে কফির মগে চুমুক দিয়ে শীতের ‘ঠাণ্ডা’ উদযাপন করি?

বন্ধুরা, প্রতি বছরের মতো এবারও বাংলানিউজের, আর্তমানবতার সেবায় পরিচালিত বাংলানিউজ সোসাল সার্ভিস(বিএনএসএস)-উদ্যোগ নিয়েছে, শীতার্তদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণের। আমাদের সঙ্গে আছে হোপ বাংলাদেশ আর আছেন আপনারা, আমাদের অগণিত পাঠক বন্ধুরা।

আপনাদের সহায়তায়, আপনাদের সঙ্গে নিয়ে এবার আমরা প্রতিটি দরিদ্র, ‍অসহায় মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চাই অন্তত একটি শীতের কাপড়।  

যোগাযোগ: শারমীনা ইসলাম
আহ্বায়ক(বিএনএসএস)
০১৯৩৭১৯৯৩৭৬ mail id: help.bnss24@gmail.com

লেখক: রেজাউর রহমান(ছাত্র, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়)
ছবি: ফখরুল ইসলাম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।