বনানীর ৮ নম্বর রোডের ৮৫ নম্বর বাড়িতে আড্ডা দেওয়া শুরু সেই ১৯৯৬ সাল থেকে। অধিকাংশই তখন স্কুলে পড়ছে।
একবার তারা চিন্তা করল সবাই মিলে একটা ম্যাগাজিন বের করবে। মোবিন কবিতা লেখে। সব করে ফেলতে পারবে। অনেকের সাথে যোগাযোগও আছে। সমস্যা নেই। আড্ডায় সবাই ভরসা পায়। কিন্তু একটু এগিয়েই দেখে সেখানে তো টাকার প্রয়োজন। কীভাবে সেই টাকা আসবে? উত্তর ছিল না তখন। তাই অপেক্ষার প্রহর শুধু বেড়েই চলে। দেখতে দেখতে কলেজও শেষ হয়ে যায়। কিন্তু আড্ডা বন্ধ হচ্ছে না। ২০০৬ সালের দিকে হুট করে চিন্তা করা হলো একটা রি-ইউনিয়ন করা হবে। এখন তো সবাই অনেক বড়। রি-ইউনিয়ন করার জন্য স্কুলের অন্য বন্ধুদের ডাকা হলো। এই দশ-এগারো জনের বন্ধুকে দেখে সবাই ভরসা পেল। সবাই বলল, হ্যাঁ আমরা সাথে আছি। শুরু হলো কাজ। সব বড় ভাইদের কাছে ধরনা দিল। তাদের সহযোগিতা নিয়ে কাজ চলতে থাকল। কিন্তু সফলতা মিলবে তো, সবাই অনুষ্ঠান পছন্দ করবে তো, সবাই আসবে তো—এমন সব ভাবনাও এসে তাদের ঘিরে ধরল।
সব বাজে ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়ে যেন ইতিহাসই হলে রইল সেই অনুষ্ঠান। প্রথমবারের মতো বনানী বিদ্যানিকেতনে এক অসাধারণ অনুষ্ঠান আয়োজন করার কৃতিত্ব তাদেরই। আড্ডা থেকে অন্তত একটা সফলতা তো মিলল! কিছু একটা তো হলো। কিন্তু শান্তি মিলছে না। সারাক্ষণ তারা ভাবে, আরো কিছু করতে হবে।
২০০৬ সালের দিকে হঠাৎ বনানীর সেই বাড়িটির নিচতলা খালি হলো। বাড়ির মালিকের ছেলে বনি। বন্ধুরা ওকে বলল, চল্, এখানেই কিছু একটা করি। কিন্তু কী করবি? বনির প্রশ্ন। কী করি-কী করি করে কয়েকটা দিন পার হতে না হতেই নিচ-তলা ভাড়া হয়ে গেল। সবার মন খারাপ। একটা কিছু তো হতোই যদি পেয়ে যেতাম। এরপর দু বছর পর ২০০৮ সালে আবার নিচ-তলা খালি হলো। এবার আর চিন্তা নয়। আলোচনা নয়। চিন্তা ছাড়াই নিচ তলা ভাড়া নিয়ে নেওয়া হলো। জুয়েলের কথায়, কী করব সেটা পরে চিন্তা করব। আগে বাসাটা নিয়ে ফেলি।
এবার বৈঠকের পর বৈঠক। কী করা যায়, যা একসাথে লাভজনক কিছু আবার মানুষের উপকারেও আসবে। হঠাৎ মাথায় এল, বেঁচে থাকতে হলে তো খাদ্যের প্রয়োজন সবার আগে। কিন্তু মানসম্মত খাবার দেয় কজন? জুয়েল বলছিল, এক আড্ডা শেষে রেস্টুরেন্টে সবাই গেলাম রাতের খাবার খেতে। গিয়ে দেখি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মেজাজ গেল খারাপ হয়ে। তখন মুখ ফসকে বলে ফেললাম, নিজের একটা রেস্টুরেন্টে থাকলে আজকে ঐখানেই খেয়ে নিতাম। ক্নিক করে গেল কথাটা। সবার মাথায় ঢুকে গেল। যাহ্, হয়ে যাবে খাবারের দোকান। মানসম্মত, রুচিশীল খাবার পরিবেশক হিসেবে দাঁড় করানো হবে। সব বন্ধুরা সায় মিলল। ইনভেস্টমেন্টের ব্যাপার আছে এই ব্যবসায়।
সবাই তো এখন চাকরি বা ব্যবসা করে। ভয়ের কিছু নেই। যে যা পারে সেটাই দেবে। সাথে নেওয়া হলো দুই বড় ভাইকেও। ১২ জনের একটি দল হয়ে গেল। শুরু হলো ইন্টেরিয়রের কাজ। সাজানো গোছানো। সবদিক থেকে পারফেক্ট হতে হবে। মোবিন বুদ্ধি দিল, ছোট্ট একটা পরিসরে গ্যালারি হলে মন্দ হয় না। যেমন কথা তেমন কাজ। বন্ধুদের মাঝে ইউনিটি ভালো। তাই সমস্যা নেই। হয়ে গেল ছোট্ট গ্যালারি। খাবারের মেনু তৈরির কাজে লেগে গেল কয়েকজন।
তবে বাদ যাচ্ছে নামটি। কী হবে নাম? মতি বলল, ভালো নাম হতে হবে। আর যাতে আমাদের স্বপ্নের সাথে মিল থাকে। এই বাড়িটিতেই তো সম্পর্ক গড়ে ওঠা, এই বাড়িটিতে স্বপ্ন দেখা। আবার এ বাড়িতেই স্বপ্নের শুরু। বাড়িটিকেই ইতিহাস করে দেওয়া হোক। তাই নাম হলো : লয়টার ডি ৮৫। লয়টার মানে রেস্টুরেন্ট। আর ডি হলো ব্লক নম্বর ডি। বাড়ি নম্বর ৮৫। যৌবনে দেখা স্বপ্ন যদি সফল করার চেষ্টা করা হয় তাহলে হবে না কেন? সেটাই যেন দেখিয়ে দিলেন ১২ জন তরুণ।
খাবারের মানের দিক থেকে অনেক উন্নত লয়টার ডি৮৫। মানের জন্যই আমরা একটু দাম রাখি। এমনই বললেন টিপু। একটি কক্ষে আছে এলসিডি মনিটরের বিগ স্ক্রিন। সর্বক্ষণ সবাই এসে খেতে খেতে টিভি দেখে। মনোরম পরিবেশে বেড়ে ওঠা এই রেস্টুরেন্টে রাতের বেলা সব বন্ধু এসে হাজির হয়। কেউ অফিস করে, কেউ ব্যবসায়িক কাজ সেরে। এসে দেখে জায়গা নেই। সবাই খাচ্ছে। আড্ডা দিচ্ছে। তখন শান্তির একটা নিশ্বাস ছাড়ে সবাই। এমনই তো চেয়েছিল সবাই। খাবারের মান নিয়ে কথা বলতে গেলে সবাই বলে উঠেন- দেখুন, আমরা শুধু ব্যবসা করব বলে লয়টার ডি ৮৫ করিনি। আমরা চেয়েছি ভালো কিছু করতে। আমরা মানুষকে ভালো মানের খাবার পরিবেশন করব, এটাই আমাদের লক্ষ্য।
ঠিকানা: লয়টার ডি ৮৫, বাড়ি ৮৫, রোড ৮, ব্লক ডি, বনানী, ঢাকা। খোলা থাকে : প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ১১টা। ফোন : ০১৯১৯৮৩৩১২৯।
বাংলাদেশ সময় ১৯১৮, মার্চ ৩১, ২০১১