লন্ডন: অবশেষে ব্রিটেনের দলীয় নেতাদের সাক্ষাত দিলেন লন্ডন সফররত বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। আর এ সাক্ষাতপর্বে নেতাদের কাছে তিনি জানতে চেয়েছেন ব্রিটেনে প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থার খবর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুক্তরাজ্য বিএনপির একটি সূত্র বৈঠকের বিস্তারিত তথ্য জানায় বাংলানিউজকে।
লন্ডন আসার তিনদিন পার হলেও দলীয় চেয়ারপার্সনের সাক্ষাত না পাওয়া নেতাকর্মীদের হতাশা অনেকটা প্রকাশ্যই হয়ে উঠছিলো। ঠিক তখনই শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় রাতে ছেলে তারেক রহমানের কিংস্টোনের বাসার পাশের একটি বাড়িতে যুক্তরাজ্য বিএনপির সহ সভাপতিদের সঙ্গে এ বৈঠক করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
সূত্রের তথ্য মতে, যুক্তরাজ্য বিএনপির সহ সভাপতি মঞ্জুরুস সামাদ চৌধুরী মামুন, আনোয়ার হোসেন খোকন, শেখ শামসুদ্দীন শামীম, ব্যারিস্টার কামরুজ্জামান, প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন, আব্দুল হামিদ চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ, লুৎফুর রহমান ও আখতার হোসেন ছাড়াও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক, সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদ, উপদেষ্টা শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুস ও তারেক রহমানের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার এম এ সালাম বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে দলের দুর্দিনে আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা রাখায় প্রবাসী দলীয় নেতাদের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চলমান সংগ্রামে আপনাদের এ ভূমিকা অব্যাহত রাখতে হবে।
বর্তমান সরকারের কাছে দেশ আজ জিম্মি- এমন অভিযোগ করে বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, গুম, হত্যা, রাহাজানি আজ দেশে নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বিরোধী দলীয় কর্মীদের গুম করা হচ্ছে, ‘মিথ্যে মামলায়’ বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের নিক্ষেপ করা হচ্ছে কারাগারে।
ব্রিটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকাকে দেওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্য সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদের জুজুর ভয় দেখিয়ে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চায়। দেশে জঙ্গি তৎপরতার সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো সরকারের পরিকল্পিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দেশের বিভিন্ন দু:সময়ে প্রবাসীদের ভূমিকার কথা স্মরণ করে বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, আজকে বাংলাদেশের এই ক্রান্তিলগ্নে দেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায়ে বর্তমান ‘অবৈধ’ সরকারকে বাধ্য করতে প্রতিটি প্রবাসীকে যার যার স্থান থেকে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ থেকে ব্রিটিশ ভিসা সেকশন দিল্লিতে সরিয়ে নেওয়ার কথা উল্লেখ করে ভিসা সেকশন ঢাকায় ফিরিয়ে আনতে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে ক্যাম্পেইন করতে দলীয় প্রবাসী নেতাদের পরামর্শ দেন খালেদা।
তিনি বলেন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই যে এই ‘অবৈধ’ সরকার ব্যর্থ, তার আরেকটি প্রমাণ, ব্রিটিশ ভিসা সেকশন দিল্লিতে সরিয়ে নেওয়া।
নাম বিভ্রাটের কারণে গোলাম রব্বানী নামের যুক্তরাজ্য বিএনপির আরেকজন সহ সভাপতি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না। গোলাম রব্বানী নামের দু’জন নেতা নতুন কমিটিতে সহ সভাপতি পদের দাবিদার থাকায় এ বিভ্রাটের সূত্রপাত। এ নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ তারেক রহমান পর্যন্ত গড়ালেও এখনও তার কোনো সুরাহা হয়নি।
স্থানীয় বিএনপি সহ সভাপতিদের সঙ্গে বৈঠকের আগে বর্তমানে লন্ডন সফররত বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুল আউয়াল মিন্টু ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গেও বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। তবে ওই বৈঠকে কি আলোচনা হয়েছে তা জানাতে পারেনি সূত্র।
দুই উপদেষ্টার সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠকেও তার ছেলে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৫
এএসআর