খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বড়দিন আর সিলভেস্টার নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে আয়োজিত হবে নানা জমকালো অনুষ্ঠান। এ জন্য বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরের শুরু থেকেই পুরো মাসটা জুড়ে আকাশে-বাতাসে যেন আনন্দ আর খুশির বন্যা বয়ে যায়।
অনেক বছর বাস করে দেখেছি, খুবই আগ্রহ নিয়ে ইউরোপিয়ানরা অপেক্ষা করে বড়দিনকে স্বাগত জানাতে। জার্মান জাতি আবার এক ধাপ এগিয়ে। ডিসেম্বরের শুরুতেই নানা উদ্দোগের মাধ্যমে জানান দিচ্ছে, সামনেই বড়দিন। এদেশের মানুষ অপেক্ষার প্রহর গুনছে আর প্রস্তুতি নিচ্ছে বড়দিন ও নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে।
জার্মানিতে এখন ঘরের বাইরে পথে-ঘাটে বের হলেই চোখে পড়ে চারপাশের রাস্তা, দোকান-পাট, শপিং মল, প্রতিটি বাড়ি-ঘর আর গাছ-গাছালি নতুন করে বর্ণিল সাজে সজ্জিত হচ্ছে। বিভিন্ন সৌখিন কাগজে, আলোক সজ্জায় ও ঝাড়বাতিতে অপরূপ সেজেছে সবকিছু। এ যেন এক নতুন পৃথিবী। সবার চোখে-মুখে এখন আনন্দ আর হাসির ঝিলিক। দোকানে দোকানে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন রকমের আতশবাজি আর নতুন নতুন সৌখিন বাহারি মোড়কে মোড়া চকলেটের সম্ভার। দেখলে চোখের শান্তিতে মন ভরে যায়। বুড়ো সান্তাক্রুজ চকলেট ও উপহার নিয়ে শিশুদের কাছে আসবেন, এজন্য রোমাঞ্চিত হয়ে আছে ছোট্ট ছোট্ট ছেলেমেয়েরা।
জার্মানিতে উপহার বা গিফট দিতে খুব একটা অর্থ ব্যয় করার প্রয়োজন পড়ে না। অল্পতেই সবাই খুশি হয়। চকলেট আর ফুল, এসবই এদেশে অত্যন্ত ভাল ও সম্মানজনক উপহার। একগুচ্ছ ফুল আর এক প্যাকেট চকলেট পেলেই লোকজন মহা খুশি। ওরা দাম নয়, উপহারকে মূল্যায়ন করে আন্তরিকতা ও উষ্ণতা দিয়ে।
আমাদের দেশের ঈদ, পূজা-পার্বণের মত জার্মানির প্রতিটি শপিং মলেও এখন প্রতিদিনই উপচে পড়া মানুষের ঢল। তবে এখানে উৎসব এলে দ্রব্য সামগ্রী আর পোশাক-আশাকের দাম আকাশ ছুঁয়ে যায় না। দাম তো বাড়েই না, বরং বিভিন্ন দোকানে দোকানে চলে সেল আর সেল। সেল মানে দাম কমানো। মূল্যহ্রাসের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা অনুষ্ঠানরত মানুষদের সাহায্য করে। বাংলাদেশের মতো গলা-কাটা দাম হাঁকে না। কিংবা উৎসবের কারণে সুযোগ পেয়ে দাম বাড়িয়ে নেয় না। আমরা এবং অন্যান্য দেশ থেকে আগতরাও উৎসব উপলক্ষ্যে দেয়া সেল-এর জন্য অপেক্ষা করি। কম দামে পছন্দের জিনিস কিনতে পারার সুযোগ কে হাতছাড়া করে!
আরও দেখেছি, এদেশে সবাই অধীর আগ্রহে তাদের স্বজনদের সাথে মিলিত হবার লক্ষ্যে অপেক্ষা করে উৎসবের দিনগুলোর জন্য। বড়দিনের ছুটিকে কাজে লাগায় সামাজিক দায়িত্ব পালন ও বন্ধন দৃঢ় করার কাজে। এভাবেই উৎসব, আনন্দ ও সামাজিকতায় জীবন উপভোগ করে সাধারণ মানুষ।
বড়দিনের উৎসবের পাশাপাশি পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণ করতে মেতে থাকে সবাই।
অযুত সম্ভাবনার নতুন বছরকে বড়দিনের পরপরই নানা আয়োজনে কাছে টেনে নেয়া হয়। এর মধ্যে থার্টিফার্স্ট পালিত হয় বছরের শেষ দিনটির রাতে। শেষ হয় পরদিন 'হ্যাপি নিউ ইয়ার্স' জানিয়ে।
আশ্চর্য্যের বিষয়, কোনও অসভ্যতা অনুষ্ঠানগুলোকে কালিমা লিপ্ত করে না। মানুষ নিরাপত্তাহীনতায়ও আক্রান্ত হয় না। পরিবারের সবাইকে নিয়ে প্রাণ ভরে মিশে যায় একে অপরের সাথে। জার্মানিতে অনুষ্ঠানগুলোকে এক কথায় বলতে হয় মিলনমেলা এবং সম্প্রীতির প্রতীক।
কণা ইসলাম: জার্মান প্রবাসী লেখিকা ও সঙ্গীতশিল্পী।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০১৭
এমপি/জেডএম