ঢাকা, বুধবার, ২৮ কার্তিক ১৪৩১, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লন্ডন

রোমে সমাহিত আবুল কালামের ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৮
রোমে সমাহিত আবুল কালামের ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক শামসুদ্দীন আবুল কালামের সমাধিস্থল (ছবি: সংগৃহিত)

বাংলার প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক শামসুদ্দীন আবুল কালামের ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী বুধবার (১০ জানুয়ারি)। ১৯৯৭ সালের ১০জানুয়ারি ইতালির রাজধানী রোমে নির্জন এক এপার্টমেন্টে জীবনাবসান ঘটে প্রচণ্ড আত্ম-অভিমানী মেধাবী এ বাঙালির। ১৯৫৯ সাল থেকে স্থায়ীভাবে বসবাস করছিলেন ইতালিতে। দেশটির ‘প্রথম বাংলাদেশি’ শামসুদ্দীন আবুল কালামের জন্ম ১৯২৬ সালে, বরিশালে।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় ইতালি থেকে ব্যাপক জনমত সৃষ্টি করে তিনি অসামান্য অবদান রেখেছিলেন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে। ১৯৫৯ থেকে ১৯৯৭ ইতালিতে সুদীর্ঘ ৩৮ বছরের প্রবাস জীবনের শেষ দিনগুলোতে নিঃসঙ্গতা গ্রাস করলেও দেশটির কর্মক্ষেত্রে ছিলো তার সফল পদচারণা।

সত্তরের দশকে শামসুদ্দীন আবুল কালাম কর্মরত ছিলেন রোমে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (ফাও) সদর দফতরে এবং স্থানীয় বাংলাদেশ দূতাবাসে। ইতালিয়ান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেও ছিলো তার পদচারণা। ইতালিতে আসার আগেই পঞ্চাশের দশকে প্রকাশিত হয় শামসুদ্দীন আবুল কালামের বেশ ক’টি বিখ্যাত উপন্যাস। বিখ্যাত এ কথাসাহিত্যিকের সবচাইতে সাড়াজাগানো উপন্যাস ‘কাশবনের কন্যা’ প্রকাশিত হয় ১৯৫৪ সালে। পরবর্তীতে পাঠকদের তৃষ্ণা মেটাতে আসে উপন্যাস- দুই মহল (১৯৫৫), কাঞ্চনমালা (১৯৫৬), জীবন কান্ড (১৯৫৬), জাইজঙ্গল (১৯৭৮), মনের মতো স্থান (১৯৮৫), সমুদ্রবাসর (১৯৮৬), যার সঙ্গে যার (১৯৮৬), নবান্ন (১৯৮৭) ও কাঞ্চনগ্রাম (১৯৮৭)। ভাষা আন্দোলনের বছর ১৯৫২ সালে প্রকাশিত হয় শামসুদ্দীন আবুল কালামের গল্প সংগ্রহ ‘অনেক দিনের আশা’। পরের বছর ‘ঢেউ’ ও ‘পথ জানা নেই’। দুই হৃদয়ের তীর (১৯৫৫) এবং সাহের বানু (১৯৫৭) এ বাঙালি গুণীজনেরই অমর সৃষ্টি।

১৯৫৯ সালে ইতালি পাড়ি জমাবার আগে সংসার জীবনে অবশ্য সুখি হতে পারেননি শামসুদ্দীন আবুল কালাম। কন্যা ক্যামেলিয়ার জন্মের পর স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে গেলে পরে ওই ভদ্রমহিলাকে বিয়ে করেন প্রখ্যাত অভিনেতা গোলাম মোস্তফা। নতুন সংসারে জন্ম হয় সুবর্ণার, যিনি পরবর্তিতে বাবার যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে সুবর্ণা মোস্তফা নামে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। সৎবোন ক্যামেলিয়া মোস্তফা কিছুদিন অভিনয় জগতে থাকলেও এক পর্যায়ে পাড়ি জমান বিদেশ বিভুঁইয়ে, বাবার পথ ধরে।

তবে ইতালিতে আসেননি ক্যামেলিয়া, নিউইয়র্কের একটি রেস্টুরেন্টে কাজ নেন জীবিকার তাগিদে। ১৯৯৭ সালে শামসুদ্দীন আবুল কালামের মৃত্যুর সময় নিউইয়র্কেই অবস্থান করছিলেন ক্যামেলিয়া মোস্তফা। বৈধভাবে থাকার অনুমিত না থাকার কারণে আমেরিকা থেকে বের হতে পারেননি তখন তিনি।  

শামসুদ্দীন আবুল কালামের দুঃখজনক মৃত্যুর সময় ১৯৯৭ সালে আমি রাজধানী রোমে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুবাদে ওই সময়কার ঢাকার একটি শীর্ষ জাতীয় দৈনিকের ইতালি প্রতিনিধির দায়িত্বে থাকলেও তাৎক্ষণিকভাবে কিছুই জানতে পারিনি। যৌক্তিক কারণে তখন জানার সুযোগও ছিলো না আমাদের। প্রবীণ কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব লুৎফর রহমানসহ আমরা অবগত হই রোমে তাকে সমাহিত করার বেশ কিছুদিন পর লন্ডনের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে ঢাকার অন্য একটি দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হবার পর। রোম পৌর প্রশাসন কর্তৃক পরে আমাদের অবহিত করা হয়, শামসুদ্দীন আবুল কালাম তার নির্জন এপার্টমেন্টে মারা যাবার বেশ কয়েক ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল বহুতল ভবনের বাইরে থেকে জানালা ভেঙে মরদেহ উদ্ধার করে।

শামসুদ্দীন আবুল কালামের মরদেহ উদ্ধারের পর ডকুমেন্টে বা অন্য কোথাও ধর্মীয় পরিচয় না থাকায় এবং আত্মীয় বা নিকটজন কারো কোনো সন্ধান পুলিশ না পেয়ে ‘বেওয়ারিশ’ মরদেহ হিসেবে তাকে রোমের এক প্রান্তে ‘প্রিমাপর্তা’ এরিয়াতে জানাজা ছাড়াই খ্রিস্টান গোরস্থানে সমাহিত করা হয়। পাশেই মুসলিম গোরস্থান থাকলেও ‘রক্ত-সম্পর্কীয়’ নিকটজনের অনুমতি না পাওয়ায় আজো স্থানান্তর করা হয়ে ওঠেনি বাংলার এ প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিকের সমাধি। প্রবীণ কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব লুৎফর রহমান গত ২১ বছর ধরে যখনই সময় পেয়েছেন ছুটে গেছেন ‘প্রিমাপর্তা’ সমাধিক্ষেত্রে, করেছেন পরিচর্চা। নিউ ইয়র্কে এবং ঢাকায় ক্যামেলিয়াকে এ বিষয়ে বহুবার জানানো হলেও জন্মদাতা বাবার সমাধি সঠিক স্থানে স্থানান্তরের সামান্য ‘ক্লিয়ারেন্স’ দেওয়ার তাগিদ অনুভব করেননি তিনি। কারণে কয়েক বছর আগে ঢাকাতে ক্যামেলিয়াও চলে যান ‘না ফেরার দেশে’।

শামসুদ্দীন আবুল কালামের প্রতি ‘যারপরণাই’ উদাসীন রোমের বিশাল বাংলাদেশ কমিউনিটিও। বাংলাদেশ ভিত্তিক নোংরা রাজনীতি এবং জেলা-থানা ভিত্তিক আঞ্চলিকতার ভিলেজ পলিটিক্স চর্চায় পুরোদমে ব্যস্ত থাকার পরিণতিতে এখানকার বাংলাদেশ কমিউনিটি আজ অবধি ন্যূনতম সম্মান দেখায়নি ‘প্রিমাপর্তা’ সমাধিক্ষেত্রে চিরনিদ্রায় শায়িত বাংলার এ সোনার সন্তানের প্রতি। যে দূতাবাসে একদা তিনি কর্মরত ছিলেন, রোমের সেই বাংলাদেশ দূতাবাসেরও তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই শামসুদ্দীন আবুল কালামের স্মৃতির প্রতি সম্মান দেখিয়ে ভালো ও সৃষ্টিশীল কোনো উদ্যোগ নেবার। ঘুমন্ত কমিউনিটি ও দূতাবাসকে তাই জাগাতে হবে, কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?

বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৮
ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

লন্ডন এর সর্বশেষ