অবাক হয়ে ভাবি, এমনটি তো কখনোই শুনিনি। কখনো এ রকম তথ্য পাইনি।
অথচ বাংলাদেশে ২ বা ৩ ডিগ্রিতে তাপমাত্রা নেমে গেলেও স্টুটগার্টে তাপমাত্রা +৫-এর নীচে নামেনি। যদিও ডিসেম্বরে হালকা তুষারপাত হয়েছে, তথাপি আবহাওয়া মোটামুটি সহনীয়। ইউরোপের প্রেক্ষাপটে এই রকম তাপমাত্রাকে কেউ তীব্র শীত বলেন না। মোটামুটি একটা সহনীয় অবস্থাতেই আছে আবহাওয়া। যদিও চট করে তাপমাত্রা মাইনাসে চলে যেতে পারে। ধবল তুষারে ঢেকে যেতে পারে চারপাশ। শীতে কোনও একটা সময়ে তেমন হওয়ার সম্ভাবনা থাকেই। তথাপি শীতের বিরুদ্ধে এদেশের প্রস্তুতিটাও বেশ জোরালো আর মজবুত।
শীত এখানে যত তীব্রই হোক, সেটাকে মোকাবেলা করার চমৎকার ব্যবস্থা রয়েছে। ঘরগুলো এয়ার টাইট ও হিটিং সিস্টেমের আওতায় থাকায় ঘরের মধ্যে বাইরের বাতাস বা শীতের প্রকোপ প্রবেশ করতে পারে না। স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালতও আবহাওয়ার সমস্যাগুলোকে মাথায় রেখে নির্মিত হয়েছে। ফলে বিরূপ আবহাওয়া এদেশের মানুষের জীবন ও স্বাভাবিক কাজ-কর্মে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে না।
ইউরোপের নাগরিক সুরক্ষা ও আবাসন নিরাপত্তার মধ্যে আমি বাংলাদেশের শীতের জন্য উদ্বেগ বোধ করি। এখানে বাংলাদেশ কমিউনিটির সকলেই দেশের শীত নিয়ে চিন্তিত। সামাজিক নেটওয়ার্কে, আড্ডা, আলোচনাতেই এখন দেশের রাজনীতি নয়, শীত ও আবহাওয়ার বিষয়টিই প্রধান আলোচ্য বিষয়। সকলেই প্রায়-প্রতিদিন দেশের মা, বাবা, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ফোনে আবহাওয়ার খবরটি সবার আগে নিচ্ছেন।
বিশেষত আমি ভাবি গ্রাম-বাংলার কথা। কারণ আমি জন্ম নিয়েছি গোপালগঞ্জে, বড় হয়েছি ফরিদপুর শহরে। বৃহত্তর ফরিদপুরের পদ্মা আর মধুমতির দু’পাশের গ্রাম আর চরাঞ্চলগুলো সুদূর প্রবাসেও আমার স্মৃতিতে উজ্জ্বল। মাঠের পর মাঠ প্রসারিত প্রকৃতির চারপাশেই বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের বাস। তাদের জীবনে শীতের তীব্রতর আক্রমণ খুবই কঠিন একটি বিষয়। ভাবলেই আমি ব্যথিত বোধ করি।
শীতের দেশে শীতকে ঠেকানোর নানা রকম ব্যবস্থা থাকলেও বাংলাদেশে সেসব নেই। টিনের বা কুঁড়ে ঘরে জীর্ণ কাঠামো ভেদ করে হু হু শীতের দাপট মানুষগুলো আচ্ছন্ন করবে। তাদের বসবাসের পদ্ধতিতে শীতকে প্রতিরোধ করার কোনও ব্যবস্থা নেই। হয়ত মানুষ ভাবেও নি যে এতো শীত পড়বে। কিংবা শক্ত-পোক্ত বাড়ি-ঘর করার সামর্থ্যও সকলের নেই।
বিষয়টি নিয়ে প্রতিদিনই জার্মানিপ্রবাসী বাংলাদেশ কমিউনিটিতে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। সবাই এই শীতের কঠিন সময়ে দেশবাসীর পাশে দাঁড়াতে চান। আগেও বন্যা বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বিশ্বের নানা দেশের বাংলাদেশিদের মতো জার্মানিপ্রবাসীরাও সাধ্যমতো সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন। এবারও তেমন উদ্যোগ আশা করা হচ্ছে।
মানুষ মানুষের জন্য, এই চিরায়ত কথাটি আমরা যেন কথনোই ভুলে না যাই। আমরা যেন দূর প্রবাসের দীর্ঘ দূরত্বকে ছিন্ন করে প্রীতি ও ভালোবাসার উষ্ণতায় দেশবাসীর পাশে দাঁড়াতে পারি। দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ানোর একাত্মতার মাঝেই আমরা পেতে পারি আমাদের প্রিয় দেশ ও দেশবাসীর প্রতি আমাদের কর্তব্য পালনের সুযোগ।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৮
এমপি/জেএম