একটি বেসরকারি এয়ারলাইন্সে টিকিট কেটে রাতের ফ্লাইটে ঢাকা থেকে ঘণ্টা চারেকের জার্নি শেষে মালয়েশিয়ার স্থানীয় সময় ভোররাতে পৌঁছালেন কুয়ালালামপুর ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে। বাচ্চারা তখন বেশ ক্লান্ত।
কোনো কথাই শুনলেন না তিনি। অগত্যা হয়ে গেলেন ইমিগ্রেশন অফিসে। কিন্তু সেখানে গিয়ে যা দেখলেন তা আরও ভয়ংকর। পুরো অফিস ঠাসা লোকজনে। শোনা গেলো একটি ফ্লাইটের সবাইকে সরাসরি পাঠানো হয়েছে সেখানে। বসা দূরের কথা, দাঁড়ানোরও জায়গা নেই। কক্ষের ৯০ শতাংশ মানুষই বাংলাদেশি। কিছু রয়েছে ভারতীয় ও ইন্দোনেশিয়ান।
ছোট সন্তানদের নিয়ে আরও বিপাকে পড়লেন রকিবুল। পাসপোর্ট জমা দিয়ে ঘণ্টা তিনেক পর এলো তার সিরিয়াল। ইমিগ্রেশন অফিসার কয়েকটি গৎবাঁধা প্রশ্ন করে অনুমতি দিলেন। মধ্যে হলো শুধু হয়রানি।
কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টে এটি নিত্যদিনের চিত্র। বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেখলেই ইমিগ্রেশন থেকে পাঠানো হয় ইমিগ্রেশন অফিসে। সেখানে যাচাই-বাছাই পর্ব উৎরাতে পারলে তবেই মেলে মালয়েশিয়ায় ঢোকার ছাড়পত্র।
এখন প্রশ্ন হলো, ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বৈধ ভিসা নিয়ে মালয়েশিয়ায় যেতে গিয়ে এতো হয়রানির শিকার হতে হবে কেন? প্রশ্নের উত্তর পেতে ফিরে আসতে হবে গোঁড়ায়। অর্থাৎ, বাংলাদেশে মালয়েশিয়ান হাইকমিশনে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রবাসী অধ্যুষিত দেশটিতে যেতে পর্যটকদের ভিড়ও কম নয়। কিন্তু হাইকমিশন যখন ভিসা ইস্যু করছে তখন কেন আরও বেশি যাচাই-বাছাই করছে না। যাচাই-বাছাই কেন দেশটির ইমিগ্রেশনে গিয়ে করতে হবে।
আর পরিবারের সঙ্গে থাকা শিশু, বৃদ্ধ, শারীরিক প্রতিবন্ধিতার শিকার কোনো ব্যক্তিকেও ছাড় দেওয়া হয় না মালয়েশিয়ান ইমিগ্রেশনে। সন্দেহভাজন অনেক ট্যুরিস্টকে ইমিগ্রেশনে আটকে রেখে থাকা-খাওয়া কিংবা ছেড়ে দেওয়ার প্রলোভনে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে ডলার। এ অভিযোগ ভুরি ভুরি। দেশটিতে ঢোকার পরও শান্তি নেই। খাওয়ার জন্য হোটেল থেকে নিচে নামলেও সঙ্গে নিয়ে নামতে হয় পাসপোর্ট। কারণ যে কোনো সময় পুলিশ এসে পাসপোর্ট দেখতে চাইতে পারে। সেখানেও চলে টাকার খেলা।
ঢাকার হাইকমিশন টাকা নিয়ে অনেক অবৈধ ভিসা দিচ্ছে তার প্রমাণ মেলে কুয়ালালামপুর ইমিগ্রেশনে। আর গুটিকয়েক সেই ভিসার জন্য ভোগান্তি হচ্ছে পর্যটকদের। যারা নিছক ভ্রমণের উদ্দেশে মালয়েশিয়ায় যাচ্ছেন তাদের দোষ কোথায়। অনেকে কুয়ালালামপুর থেকে মালয়েশিয়ার অন্য প্রদেশ কিংবা পাশের কোনো দেশের কানেক্টিং প্লেনের অগ্রিম টিকিট কেটে রাখেন। এসব হয়রানিতে প্রায়ই পর্যটকরা মিস করছেন ফ্লাইট, যা তাদের আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার পাশাপাশি ভ্রমণ পরিকল্পনায়ও ব্যাপক ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে।
অবৈধভাবে অভিবাসী প্রবেশ করানোয় যে মালশিয়ান পুলিশ ও ইমিগ্রেশন পুলিশ জড়িত সেটা এখন আর ঢাকা নেই। এরইমধ্যে আটকও হয়েছেন কয়েকজন। এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশি একটি উচ্চ ক্ষমতার সিন্ডিকেটও।
কথা হলো, ভ্রমণ ভিসা যদি মালয়েশিয়ান সরকার সমস্যা মনে করে তাহলে এই ভিসা বন্ধ করছে না কেন। হয়রানির চেয়ে বন্ধ করা তো ভালো। কিন্তু সেটাও করছে না, কারণ সেখানে তাদের বাণিজ্য আছে, সেটা দেশে ঢুকতে পারুক বা না পারুক। এসব ঝামেলা এড়াতে বাংলাদেশিদেরই এখন রুখে দাঁড়ানোর সময় এসেছে। সবাই মিলে যদি ভ্রমণের জন্য মালয়েশিয়াকে বর্জন করা যায় তাহলে মিলবে সমস্যার সমাধান।
রকিবুল হাসানের মতো ভুক্তভোগীর ঘটনা গল্প নয়, বাস্তব। সেটা যে যখনই মালয়েশিয়া যাবেন তিনি টের পাবেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৮
এএ