ঢাকা, শনিবার, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘ও আল্লাহ, আমার কলিজা পুড়ে যাইতেছে’

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২২
‘ও আল্লাহ, আমার কলিজা পুড়ে যাইতেছে’

ঢাকা: ‘হায় রে কি হলো, তুই আমার কথা চিন্তা করলি না। ’ ‘ও আল্লাহ, আমার কলিজা পুড়ে যাইতেছে।

’ 

একমাত্র শিশু কন্যা নাইমা আক্তারকে (৬) হারিয়ে তার মা রাবেয়া আক্তারকে আর্তনাদ করে কথাগুলো বলে বিলাপ করতে দেখা যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। পরক্ষণেই তিনি হয়ে পড়ছিলেন বাকরুদ্ধ।

মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে ঢাকার দোহার পশ্চিম নারিশা গ্রামে বাসার সামনে খেলা করার সময় কেটে রাখা গাছের গুড়ি (গাছের খন্ডিত অংশ) কাঁধে করে অন্য মানুষ নিয়ে যাওয়ার সময় শিশু নাইমা আক্তারের উপরে পড়ে যায়। এতে গুরুতর আহত অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে তার মা রাবেয়া আক্তার, মামা মিরাজ হোসেনসহ অন্যান্য আত্মীয়রা তাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ৭ নম্বর রুমে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ডাক্তার শিশুটিকে মৃত ঘোষণারর সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের সবাই চিৎকার করে বুকফাটা আর্তনাদ করতে থাকে। ট্রলির উপরে থাকা নাইমার মরদেহ ধরে  মামা মিরাজ এ সময় বলতে থাকেন, ‘তুই আমাদের ছেড়ে এভাবে চলে যেতে পারিস না। তুই আমার একমাত্র আদরের ভাগনি, তোকে আমি চকলেট কিনে দিবো, তোকে আমি কেক কিনে দিবো তুই আমার কথা জবাব দে। ’

এ সময় শিশুটির মা বাকরুদ্ধ হয়ে যান। আবার হঠাৎ হঠাৎ একমাত্র শিশুকন্যা বুকের ধন নাইমার মরদেহ ধরে, বুকফাটা আর্তনাদ করতে থাকেন।  

হাসপাতালে উপস্থিত নাইমার আত্মীয়-স্বজনরা সবাই কেঁদে কেঁদে সন্তানহারা মাকে স্বান্তনা দিতে দেখা যায়। আত্মীয়-স্বজনরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে থাকে- বাসার সামনে অন্যান্য শিশুদের সঙ্গে খেলা করছিল নাইমা। কেটে রাখা গাছের গুড়ি অন্যান্যরা কাঁধে তুলে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন সেখান দিয়ে দৌড় দিয়ে যাওয়ার সময় গুড়ি নাইমার মাথায় পড়ে।
ঢাকা জেলার দোহার থানার পশ্চিম নারিশা গ্রামের ওমর ফারুকের দুই ছেলে এক মেয়ের মধ্যে দ্বিতীয় ছিল নাইমা। স্থানীয় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্লেতে পড়াশোনা করত নাইমা।

ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) বাচ্চু মিয়া জানান, নিয়ম অনুযায়ী শিশুটির মরদেহ হাসপাতালের লাশ ঘরে রাখা হয়েছে। এই মৃত্যুর ব্যাপারে যদি কোন অভিযোগ না থাকে তাহলে পরিবারের পক্ষ থেকে একটি আবেদন করলে শাহবাগ থানা সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগ করে তদন্ত শেষে ময়নাতদন্তে ছাড়া পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২২
এজেডএস/এসএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ