ঢাকা: বাংলাদেশের সংস্কৃতি আজ হুমকির সম্মুখীন উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ বলেছেন, আগে বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান এবং নাচের জন্য প্র্যাকটিস করা হতো বাংলা গানের। কিন্তু এখন প্র্যাকটিস করা হয় হিন্দি গান বা ইংলিশ গানের।
মঙ্গলবার (০৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর বনানীতে হোটেল শেরাটনে আয়োজিত ‘হুজ হু বাংলাদেশ-২০২২ অ্যাওয়ার্ড’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ।
তিনি বলেন, আমি এতক্ষণ ধরে অন্য গানের আওয়াজ পাচ্ছিলাম। সেটা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব হচ্ছিল। আমাদের এখানে উপস্থিত শ্রদ্ধাভাজন শিল্পীর রুনা লায়লার কেমন লাগছিল তা জানিনা। উনার পাশে বসে থেকে ওনার হয়ে আমার লজ্জা লাগছিল। তিনি অনেক আন্তর্জাতিক সম্মেলনাও পেয়েছেন। তিনি জাতীয় সম্মেলনায় ভূষিত হয়েছেন।
মন্ত্রী বলেন, আমি হুজ হু-কে ধন্যবাদ জানাই। গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে যারা দেশ গঠনের ক্ষেত্রে সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে দেশকে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সামাজিক যেসব কাজ কর্মের ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য সম্মানিত করে আসছেন।
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, এখানে আজ যাদের সম্মানিত করা হয়েছে তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে সবাই অবদান রেখেছেন। কেউ সঙ্গীতে, কেউ কৃষিতে, কেউ শিল্পে, কিংবা অন্যান্য ক্ষেত্রে। তাদের এই অবদানগুলো আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
তিনি বলেন, যেকোনো সম্মাননা মানুষকে কাজ করার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করেন। এই সম্মাননা অনুষ্ঠান অন্যদেরকেও কাজ করার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করে। কাজেই এ ধরনের অনুষ্ঠান দেশ ও সমাজের উন্নয়নের ক্ষেত্রে অবদান রাখে। প্রকৃতপক্ষে আমাদের পূর্বসূরী মুক্তিযোদ্ধারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমাদের দেশ রচনা করে গেছেন।
‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রের রূপান্তরিত করা। বঙ্গবন্ধুকে সাড়ে তিন বছরের মাথায় হত্যা করার কারণে বঙ্গবন্ধু তার সেই স্বপ্নটি পূরণ করে যেতে পারেনি। আপনারা হয়তো অনেকে জানেন, অনেকে জানেন না- বঙ্গবন্ধুকে যে বছর হত্যা করা হয়, সে বছর বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ। আমরা স্বাধীনতার ৫১ বছর পরও বঙ্গবন্ধুর সাড়ে ৯ শতাংশ অর্থনীতির প্রভৃতির হার আমরা এখনো ছুঁতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা ৮ শতাংশের বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পেরেছি। ’ যোগ করেন তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সব প্রতিকূলতাকে মোকাবেলা করে- যে দেশ ঘনবসতিপূর্ণ দেশ, যে দেশে ঝড়-জলোচ্ছাস বন্যার দেশ, যে দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের দেশ, সেই দেশ বিশ্ব খাদ্য সংস্থাকে অবাক করে দিয়ে আজকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি দেশ। আয়তনের দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৯২তম। সবজি উৎপাদনে পৃথিবীর চতুর্থ, ধান উৎপাদনে পৃথিবীর তৃতীয়, মিঠাপানিতে মাছ উৎপাদনে পৃথিবীর তৃতীয়, আলু উৎপাদনে পৃথিবীর সপ্তম। পৃথিবীতে অবাক করে দিয়ে কাজগুলো সম্ভবপর হয়েছে বাংলাদেশের উদ্যাগক্তা ও কৃষি উদ্যোক্তাদের কারণে। তাদের এই উদ্যোগ উত্তরণের পথে অনুপ্রেরনা জোগায়। দেশে আরও উদ্যোক্তা বেরিয়ে আসবে বলে আমি আশা করি।
অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হুজ হু বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী নাজিনুর রহিম। আরও উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক, কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ। এছাড়াও হুজ হুর কর্মকর্তারাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য, সাংবাদিকতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ১২জন গুণী ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানসহ মোট ১৩ জনকে ‘হুজ হু’ বাংলাদেশ-২০২২ অ্যাওয়ার্ড।
অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন- শিক্ষায় সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, শিল্প ও সংস্কৃতিতে রুনা লায়লা, সাংবাদিকতায় ইহসানুল করিম, শিল্প ও সাহিত্যে ড. অগাস্টিন ক্রুজ, সামাজিক কর্মকাণ্ডে সমাজ সেবক কাজী রফিকুল আলম, ক্রীড়ায় সাবরিনা সুলতানা, কৃষিতে লায়ন কহিনুর কামাল, শিল্প-বাণিজ্যে এস.এস গ্রুপের স্বত্তাধিকারী মু. আবু সাদেক, উদ্যোক্তায় স্ট্যান্ডার্ড ফিনিস অয়েল কোম্পানির ম্যানেজিং পার্টনার সুলাইমান এস আযানী, নারী উদ্যোক্তায় নাসিমা আক্তার নিশা, পেশাজীবি বিভাগে প্রফেসর ড. মো. শরফুদ্দিন আহমেদ, আজীবন সম্মাননা শিল্পি রফিকুন নবী এবং প্রাতিষ্ঠানিক সম্মাননা দেওয়া হয় কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটকে (সিটিটিসি)।
হুজ হু ১৮৪৯ সাল থেকে যুক্তরাজ্যসহ সারা বিশ্বের অনুসরণীয় গুণীজনদের অ্যাওয়ার্ড প্রদান ও সংক্ষিপ্ত জীবনী প্রকাশ করে আসছে। এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে ৩৩ হাজার গুণীজনের সংক্ষিপ্ত জীবনী প্রকাশ করেছে হুজ হু। প্রতি ২ বছর অন্তর ‘হুজ হু বাংলাদেশ’ অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০২৩
এসজেএ/এসএ