হবিগঞ্জ: একটুখানি হওয়া দিলেই ঘর নড়বড় করে, তারি তলে আসমানীরা থাকে বছর ভরে’—পঙতিটি পল্লী কবি জসীম উদদীনের আসমানী কবিতার। জরাজীর্ণ ঘরে রসুলপুর গ্রামের অতি সাধারণ রহিমদ্দি ও আসমানী বেগমদের অনাদরের জীবন ফুটে উঠেছিল যে কবিতায়।
আসমানী কবিতা পাঠ করলে কল্পনায় ভেসে ওঠে অনাদৃত একটি পরিবারের কয়েকজন সদস্যের জীবন। যে রকম হাজারো জীবন যাপিত হচ্ছে দেশের আনাচে-কানাচে।
তাদেরই একজন কামাল রবিদাস। একটুখানি হাওয়া দিলেই কামালের ঘরটি নড়বড় করে, অল্প বৃষ্টিতে পানি গড়িয়ে পড়ে। কামাল সেখানে বাস করেন মা-মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে। ঘরটি লাখাই উপজেলার বুল্লা বাজার সংলগ্ন ঋষি পল্লীতে অবস্থিত।
সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, আনুমানিক ১০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৫ ফুট প্রস্থের জরাজীর্ণ ঘরটিতে বসে খুঁটিনাটি কাজ করছিলেন কামালের তরুণী স্ত্রী। পাশে ছোট শিশু ও কামালের মা। একসঙ্গে সবার ছবি তুলতে চাইলে কামাল একটু নাখোশ হন। বলে ওঠেন, ‘সরকার আমরার খবর নেয় না, আফনে ছবি তুইল্যা কিতা করতাইন’।
ঘরটির ভেতরে অনেকগুলো গর্ত। ইঁদুরের খোড়া মাটির স্তুপ স্থানে স্থানে। চালের উপরে টিনগুলোতে অসংখ্য ফুটো, জং ধরা। বাঁশ আর টিন দিয়ে তারকাটায় লাগানো জোড়াগুলো খুলে গেছে। ঘরে নেই কোনো দরজা।
অনেক চেষ্টার পর কথা বলতে সম্মত হন কামাল। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি জানান, সামান্য বৃষ্টি হলে ঘরজুড়ে পানি পড়ে। বাতাস আসলেই তারা আতঙ্কে থাকেন; এই বুঝি ঘরটি পড়ে গেল। অনেকবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধির দ্বারস্থ হলেও কেউ কোনো সহায়তা করেননি।
তিনি বুল্লা বাজারে দিনভর মানুষের জুতা মেরামত করে দুই থেকে তিনশ’ টাকা আয় করেন। যা দিয়ে প্রতিদিনকার বাজার খরচই হয় না। এ টাকা থেকে ঘরটি মেরামতের কোনো সুযোগই নেই। চলতি শীতে তাঁর ছোট্ট শিশু ও বৃদ্ধ মা অনেক কষ্ট করছেন। তাদের একটি শীতের কাপড়ও কিনে দেওয়ার সামর্থ্য নেই।
ঘরটি তার বাবা কানু রবিদাস বানিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি মারা গিয়েছেন। এরপর সংসারের দায়িত্ব পড়ে কামালের কাঁধে। গেল বন্যায় ঘরটি একেবারেই নড়বড়ে হয়ে গেছে। বন্যার পর কোনো সরকারি সহায়তাও পাননি। ঘরের জায়গাটুকু ছাড়া আর কোনো সম্পত্তি নেই। আয়ের টাকা দিয়ে তিনি ঘরটি মেরামত করতে পারছেন না। এ জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০২৩
আরএ