রাজশাহী: সারা দেশের মধ্যে আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে।
বুধবার (১১ জানুয়ারি) সকাল ৭টায় রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ এক লাফে তাপমাত্রা ২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় নেমে গেছে। সামান্য বিরতি দিয়ে বর্তমানে রাজশাহীর ওপর দিয়ে চলা মৃদু শৈত্যপ্রবাহ এবার মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে রূপ নিল। এর আগে গত ৮ জানুয়ারি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে এসেছিল ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এরপর আবারও তাপমাত্রা বাড়ে। এর পরদিন ৯ জানুয়ারি রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সাধারণ দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে বলা হয়- মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে বলা হয়- মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। আর তাপমাত্রা ৬ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে তাকে অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। সেই হিসেবে রাজশাহীসহ আশপাশের অঞ্চলের ওপর দিয়ে আজ মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকতে পারে।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবহাওয়াবিদ কামাল উদ্দিন জানান, রাজশাহীর ওপর দিয়ে মূলত গত ১৬ ডিসেম্বর পর থেকে এই নিয়ে তিনটি মৃদু একটি মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে ১৬ ডিসেম্বর রাজশাহীতে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এরপর তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে দুই অংকের ঘরে ওঠে। প্রথম দফার মৃদু শৈত্যপ্রবাহ কেটে যাওয়ার পর গত ২৯ ডিসেম্বর ছিল ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে রোদ ওঠায় দ্বিতীয় দফার এই মৃদু শৈত্যপ্রবাহ কাটে পরদিনই। ৩০ ডিসেম্বর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে ঢাকা আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা জানান, আজ রাজশাহীতে ও ঈশ্বরদীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি রাজশাহীর সর্বনিম্ন এবং সারা দেশের মধ্যেও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। বর্তমানে রাজশাহী ও আশপাশের অঞ্চলের ওপর দিয়ে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানান আবহাওয়া অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা।
সামান্য বিরতি দিয়ে রাজশাহীর ওপর দিয়ে আবারও শৈত্যপ্রবাহ শুরুর পর বুধবার ভোরে ঘন কুয়াশায় মুড়ি দিয়েছিল পদ্মাপাড়ের রাজশাহী। বেলা পৌনে ১১টার দিকে সূর্যের মুখ দেখা গেছে। তবে ভোর থেকে বয়ে চলা বাতাসে কাবু হয়ে পড়েছে পথে-প্রান্তরে থাকা ছিন্নমূল মানুষগুলো। বর্তমানে সূর্যের মুখ দেখা গেলেও রোদের উত্তাপ শীতার্ত মানুষগুলোর গায়ে লাগছে না। হাড় কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।
মূলত গাছপালা বেশি থাকায় শহর-নগরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে এখন শীতের কাঁপুনি বেশি অনুভূত হচ্ছে। তাই গ্রামাঞ্চলের অনেক মানুষের জন্য এই শীতের তীব্রতা বয়ে এনেছে বাড়তি কষ্ট ও দুর্ভোগ। হিমেল বাতাস আর তীব্র শীতে নাকাল হয়ে পড়েছে উত্তর জনপদের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
আজ সকাল থেকেই খেটে খাওয়া দিনমজুর ও শ্রমজীবী মানুষগুলো পড়েন বিপাকে। হঠাৎ করে আবারও শীতের প্রকোপ বাড়ায় কোল্ড ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। শীত যতই বাড়ছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে শীতজনিত রোগীর সংখ্য ততই বাড়ছে। শিশু ও বয়স্করাই অন্যদের চেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, শীতজনিত কারণে রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। বর্তমানে নবজাতক শিশুরা বেশি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন বয়সের শিশু ও বয়স্করাও শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে সেবা নিতে আসছেন। এই শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকলে শিশু ও বয়স্কদের প্রতি বিশেষ নজর রাখার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।
বাংলাদেশ সময়: ১২২২ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০২৩
এসএস/এসআইএস