ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

পাহাড়ে ১৭ ঘর পোড়ানোর ঘটনায় বেনজীরের নাম কেন আলোচনায়?

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪
পাহাড়ে ১৭ ঘর পোড়ানোর ঘটনায় বেনজীরের নাম কেন আলোচনায়? পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ

বড়দিনের আগের রাতে (২৪ ডিসেম্বর) বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে ত্রিপুরাদের ১৭টি বসতি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় উঠে এসেছে ‘এসপি বাগান’ নামে একটি ফলের বাগানের নাম। আর বাগান সংশ্লিষ্টতায় আলোচনায় এসেছে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের নাম।

বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এই বাগানের জমি দখলকে কেন্দ্র করেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে সন্দেহ করছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে। আর কথিত আছে, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের নাম করে কয়েক বছর আগে ওই বাগানটি গড়ে তোলা হয়।

সরই ইউনিয়নের আট নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মো. জামাল উদ্দিন বিবিসিকে এ তথ্য দেন।  

বাগানের নাম এসপি বাগান কেন?- এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়েই মূলত বেনজির আহমেদের নাম উঠে আসে।

মো. জামাল উদ্দিন জানানা, বান্দরবানে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের সম্পত্তি আছে গত বছর এমন খবর প্রকাশের পর তৎকালীন উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে ‘এসপি বাগানে’ খোঁজখবর নিতে যাই। সেখানে দেখভালের দায়িত্বে থাকা ইব্রাহিমকে প্রশ্ন করলে তিনি সে সময় জানান, বাগানটি বেনজীর আহমেদের কী না তা নিশ্চিত নন তিনি। তবে কোনো এক জেলার এসপি তাকে বাগান দেখভালে নিয়োগ দিয়েছেন বলে জানান তিনি। আর সে কারণেই সেটি এসপি বাগান নামেই পরিচিতি পায়।

তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই টংগঝিরি এলাকার শেষপ্রান্তের ওই জমিতে ত্রিপুরাদেরই বসবাস করে আসতে দেখছি। ১০ থেকে ১২ বছর আগে সেখানে বাগানটি গড়ে ওঠে। মূলত আমগাছ লাগানো হয়েছিল সেখানে।

পাহাড়ে আগুনে পুড়লো বসতঘর

ওয়ার্ডের মেম্বার মো. জামাল উদ্দিনের বক্তব্যের পর অনুসন্ধানে এখনবধি সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ‘এসপি বাগানের’ স্বত্বাধিকারী কিনা তা নিশ্চিত করা যায়নি।

জানা গেছে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার তালিকাভুক্ত আসামিদের সঙ্গে সেই ইব্রাহিমও রয়েছেন।

এসপি বাগানের ওই জমিটি সরকারি খাস জমি বলে জানিয়েছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুপায়ণ দেব।

তিনি বলেন, ‘সরকারি খাস জমিতে ত্রিপুরারা চাষবাস করতেন। পরবর্তীতে দশ বছর ধরে এসপি বাগান নামে জায়গাগুলো দখল করে রাখছিল। কিন্তু কাগজপত্র নাই। এগুলো খাস জমিই। সাত-আট মাস আগে বেনজীর আহমেদকে নিয়ে যখন খবরাখবর ছড়াতে থাকে তখন ইব্রাহীম নামের ওই কেয়ারটেকার এসপি বাগান ছেড়ে চলে যান। সেই সুযোগে ত্রিপুরা পরিবারগুলো জমির দখল নেওয়ার পাল্টা চেষ্টা চালায় এবং ঘর তোলে। ’ 

মূলত দখলের জন্যই নতুন ঘরগুলো তোলা হয়েছিল বলে জানান এই ভূমি কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, মামলা হয়েছে এবং চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইনানুগভাবে বিষয়টি এগোবে।

বেনজীর আহমেদ প্রসঙ্গে স্থানীয়দের কাছ থেকে তেমন কোনো কিছু শুনেছেন কি না বা কোনো অভিযোগ পেয়েছেন কি না জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘না, তবে আমরা দেখছি। ’

মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে পাড়াবাসী পাশের টংগঝিরি পাড়ায় বড়দিন উপলক্ষে প্রার্থনা করতে গেলে দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুনে লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি পূর্ব বেতছড়া পাড়ার ১৭টি কাঁচা বসতঘর সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যায়, এতে প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানায়, গত তিন মাস পূর্বে লামা উপজেলা ও পাশের আলীকদম উপজেলা থেকে ১৯টি ত্রিপুরা পরিবার উপজেলার সরই ইউনিয়নে বসতি শুরু করেন। পাড়ার নাম দেন পূর্ব বেতছড়া পাড়া। ওই পাড়ায় পুলিশের সাবেক আইজিপি পলাতক বেনজির আহমেদের একটি বাগান বাড়ি ছিল, যা এসপির বাগান নামে পরিচিত। বেনজির আহমেদের সেই জায়গায় বিভিন্ন এলাকা থেকে বেশ কিছু ত্রিপুরা পরিবার গিয়ে ছোট ছোট কাঁচা জুমঘর করে বসবাস শুরু করেন। ওই জায়গার দখল কর্তৃত্ব নিয়ে ত্রিপুরা সম্প্রদায় নিজেদের মধ্য দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।

এ বিষয়ে পাড়ার বাসিন্দা গুংগা মনি ত্রিপুরা জানান, গত একমাস আগে স্টিফেন ত্রিপুরাসহ বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী গ্রুপ তৈরি করে দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্রের ভয়ভীতি দেখিয়ে মোট অঙ্কের অর্থ দাবি করেন, দাবিকৃত অর্থ না দিলে পাড়াবাসীকে হুমকিও দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা হুমকি দাতাদের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি করি, মূলত তারাই সুযোগ বুঝে আমাদের পাড়ার ১৭টি বসতঘরে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়। ঘটনার সময় পাড়ার লোকজন ঘরে না থাকায় কোনো মালামাল রক্ষা পায়নি, ১৭টি ঘর সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো এখন নিঃস্ব।

এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত স্টিফেন বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।

ঘটনার পর মামলায় গ্রেপ্তার চারজনের মধ্যে ইব্রাহীম ছাড়া বাকি তিনজন হলেন - পূর্ব বেতছড়া পাড়ার বাসিন্দা স্টিফেন ত্রিপুরা (৫০), মইশৈ ম্যা ত্রিপুরা (৪৮), টংগঝিরি পাড়ার বাসিন্দা জোয়াতিং ত্রিপুরা (৫২)।

আসামিদের গ্রেপ্তারের পর ঘটনার বিষয়ে বান্দরবান পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হোছাইন মোহাম্মদ রায়হান কাজেমী জানান, চার আসামিকে ধরা হয়েছে। বাকি আসামিদের ধরার চেষ্টা চলছে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্নভাবে অপপ্রচার চলছে। তবে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের কয়েকটি পরিবার এ এলাকায় নতুনভাবে বসতি গড়েছেন। এতে স্থানীয় ত্রিপুরাদের দুটি পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। এর জেরেই অগ্নিকাণ্ড হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে গত ১২ জুন আদালতের পক্ষ থেকে নির্দেশ জারি করা হয়। তার মধ্যে বান্দরবানের সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নে ২৫ একর জমি ছিল। আদালতের নির্দেশের পর ওই ৪ জুলাই ওই সম্পত্তি নিজেদের তত্ত্বাবধানে নেয় জেলা প্রশাসন।

বেনজীর, তার স্ত্রী ও তিন মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রধান কার্যালয়ে তলব করে দুদক। কিন্তু দুদক কার্যালয়ে হাজির হননি বেনজীর বা তার পরিবারের কেউ।

একটি সূত্র বলছে, দেশে ছেড়ে পালিয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক। গত ৪ মে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে স্ত্রী ও তিন মেয়েকে নিয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন বেনজীর।  

বাংলাদেশ সময়: ০০৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪
এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।