ঢাকা: গণমানুষের স্বার্থে সাংবাদিকতার নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রয়াত সাংবাদিক মানিক সাহা। তিনি সবসময় রাষ্ট্র, সমাজ ও জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতেন।
রোববার (১৫ জানুয়ারি) পরিকল্পিত বোমা হামলায় নিহত মানিক সাহার ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মৃতিচারণ সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।
ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এই স্মৃতিচারণ সভার আয়োজন করে ‘সাংবাদিক মানিক সাহার সুহৃদবৃন্দ’।
স্মৃতিচারণ সভায় মানিক সাহা হত্যার পরিকল্পনাকারীদের চিহ্নিত করে ন্যায় বিচার নিশ্চিতের দাবি জানান সাংবাদিক নেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আশীষ কুমার দে’র সভাপতিত্বে স্মৃতিচারণ সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি ওমর ফারুক, মহাসচিব দীপ আজাদ ও সাবেক মহাসচিব আব্দুল জলিল ভূঁইয়া, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল নিউজ২৪ এর নির্বাহী সম্পাদক রাহুল রাহা, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাবেক সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, সহ-সভাপতি মানিক লাল ঘোষ, ডিআরইউর সহ-সভাপতি দীপু সরোয়ার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ ও জনকল্যাণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ, ক্রাইম রিপোর্টারর্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ প্রমুখ।
স্মৃতিচারণ সভায় মানিক সাহার জীবন ও কর্ম সম্পর্কে নানান স্মৃতি তুলে ধরে সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, দেশের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং আইনের শাসন, ন্যায় বিচার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন হওয়া প্রয়োজন। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলদেশ গড়তে এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হাব। কারণ মানিক সাহা সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সব সময় স্বোচ্চার ছিলেন। বৈষম্য ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন।
মানিক সাহাসহ অন্য সকল সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে বিশেষ সেল গঠনের দাবি জানিয়ে সাংবাদিক নেতা ওমর ফারুক বলেন, সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের মাধ্যমে স্বাধীন সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্থ করা হচ্ছে। হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা তদেন্ত সরকার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে আবেদন-নিবেদন করেও কোনো কাজ হয়নি। তাই সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ে মানিক সাহার মতো সাহস ও দূঢতা নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে মূল্যবোধ জাগ্রত করার প্রতি গুরুত্বারোপ করে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, শিল্প-সংস্কৃতি, পরিবেশ ও জাতীয় সম্পদ রক্ষায় সহাসী ভূমিকা রেখেছেন মানিক সাহা। তিনি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাই তার হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে পারে।
এ সময় মানিক সাহা হত্যার পরিকল্পনাকারী, পৃষ্ঠপোষক ও অর্থদাতাদের চিহ্নিত করার দাবি জানান শ্যামল দত্ত। পাশাপাশি নতুন প্রজন্মকে মানিক সাহার চেতনায় গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
স্মৃতিচারণ সভার শুরুতে মানিক সাহার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরাবতা পালন করা হয়। এর আগে মানিক সাহার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
২০০৪ সালের ১৫ জানুয়ারি দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবের সামনে দুর্বৃত্তদের বোমা হামলায় নিহত হন নির্ভীক সাংবাদিক, পরিবেশ ও মানবাধিকার কর্মী, শিক্ষানুরাগী, বীর মুক্তিযোদ্ধা মানিক সাহা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২৩
এসসি/এসএ