রংপুর: তীব্র শীত আর হিমেল হাওয়ায় রংপুরে বিপর্যস্ত জনজীবন। দিনভর সূর্যের দেখা না পাওয়ায় শীতের তীব্রতা আরও বেড়েছে।
এরই মধ্যে মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) সকাল থেকে নগরীর জাহাজ কোম্পানি মোড়সহ আশেপাশের এলাকায় ঘুরছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন এক মা। তার একহাতে পাতলা কম্বলে মোড়ানো একটি শিশু। অপর হাতে আরেকটি কম্বল। শরীরে শীতের পোশাক নেই বললে চলে। তীব্র শীত ও হিমেল হাওয়ার মধ্যে শিশুটিকে নিয়ে ঘুরতে দেখে অনেকে প্রশ্ন করছিলের ওই নারীকে। কিন্তু কোনো জবাব মিলছিল না। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে উৎসুক জনতার ভিড়। এরই মধ্যে খবর পেয়ে ছুটে আসে পুলিশ। তীব্র ঠাণ্ডায় বাইরে থাকার কারণ জানতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন উদ্ভ্রান্ত মা।
এরপরই জানা যায় হৃদয় বিদারক এক কাহিনী! ওই মায়ের কোলের নবজাতকটি তারই নাড়িছেঁড়া ধন। তবে শিশুটি এখন বেঁচে নেই। এটা জানা সত্ত্বেও মৃত সন্তানের বেঁচে ওঠার অসীম আশায় তাকে কোলে নিয়ে দিনভর এদিক সেদিক ছুটছেন অবুঝ মা। এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা শুনে হতবিহব্বল হয়ে পড়েন উপস্থিত জনতা।
পুলিশ জানিয়েছে, মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীর বাড়ি রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার মধুপুর এলাকায়। প্রায় ১৭ দিন আগে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় ওই নবজাতকের জন্ম দেন তিনি। কয়েকদিন এদিক সেদিক ঘুরে সন্তানসহ বাড়ি যান তিনি। কিন্তু তার সৎ বাবা বিষয়টি মেনে নেয়নি। শিশুটিকে বিক্রি করে দিতে তাকে মারধর করেন। নির্যাতন সইতে না পেরে এক পর্যায়ে ফের রংপুর নগরীতে চলে আসেন। শিশু সন্তানকে নিয়ে দিনে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। রাতে খোলা আকাশের নিচে থেকেছেন। তীব্র ঠাণ্ডায় পোশাক-আশাক তেমন না থাকায় একপর্যায়ে শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। শিশুটির চিকিৎসার জন্য তাকে নিয়ে শুক্রবার সকালে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান তিনি। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন। বিষয়টি তাকে জানানো হলেও তিনি বিশ্বাস করেননি।
কোলের সন্তান নড়াচড়া না করলেও হাল ছাড়েননি তিনি। মৃত সন্তানকে বাঁচিয়ে তোলার আশায় নগরীর মাহিগঞ্জে এক কবিরাজের কাছে ছুটে যান। কিন্তু সেই কবিরাজ নিজেই অসুস্থ থাকায় তার দেখা পাননি। পরে মাহিগঞ্জ বাজার এলাকায় দিনভর মৃত সন্তানকে নিয়ে ঘুরতে থাকেন তিনি। রাতে তাকে দেখা যায় নগরীর মাহিগঞ্জ ভিসা অফিসের সামনে।
মাহিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান জানান, মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারী কোলে একটি শিশু নিয়ে ঘুরছিলেন। শিশুটি মৃত বলে জানা যায়। তবে শিশুটি মৃত কিনা তা পরীক্ষার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ধাপ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মাহমুদুল হাসান বলেন, শীতের মধ্যে খোলা আকাশের নীচে রাত কাটানোর ফলে ঠাণ্ডায় শিশুটি মারা যায়। অধিকতর নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতাল থেকে ওই নারী কাউকে কিছু না বলে কোথায় চলে গেছেন আমরা বলতে পারছি না। এখন তাকে খোঁজা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২৩
এনএস