দিনাজপুর: দিনাজপুরে প্রতিদিনই বাড়ছে শীতের তীব্রতা। এমন সময় দরিদ্র্য শীতার্তদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ।
দিনাজপুরে বসুন্ধরা গ্রুপের দেওয়া তিন হাজার কম্বল শীতার্তদের মধ্যে বিতরণ করছে দৈনিক কালের কণ্ঠ শুভসংঘ।
বুধবার (১৮ জানুয়ারি) দিনাজপুরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ৯টায় তীব্র শীত উপেক্ষা করে জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার চিরিরবন্দর মডেল সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জড়ো হন শীতার্ত মানুষ।
কম্বল পেয়ে সত্তরোর্ধ্ব আলীমন বেওয়া বলেন, দিনাজপুরে ঠাণ্ডা অনেক। আর বয়স্ক মানুষের ঠাণ্ডা তো আরও বেশি। এবারের শীতে যে কম্বলটা পাইলাম, এটা দিয়ে শীতটা কেটে যাবে। রোগের সময় ওষুধ পাইলে যেমন উপকার হয়, শীতের মধ্যে কম্বলটাও তেমন উপকারী। আমরা গরিব মানুষ তো কম্বল কিনতে পারি না। বসুন্ধরা গ্রুপ আমাদের কম্বল দিছে। আল্লাহ তাদের ভালো করুক।
এরপর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার বঙ্গবন্ধু সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শীতার্তদের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়।
এরপর কম্বল বিতরণ টিম হাজির হয় জেলার ফুলবাড়ী উপজেলায়। ফুলবাড়ী বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুলমাঠে শীতার্তদের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়।
শহরের কাটাপাড়া এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধা সাবিয়া বেওয়া বলেন, বয়স্ক মানুষ আমি। ঠাণ্ডায় কষ্ট বেশি হয়। হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যায় শুধু। কাঁথা গায়ে দিলেও সহজে গরম ধরে না। কম্বল হলে একটু তাড়াতাড়ি গাও গরম হয়। কিন্তু কম্বল কেনার সাধ্য নাই। স্বামী হারিয়েছি ১৫ বছর আগে। আজ বসুন্ধরা গ্রুপের কম্বল পাইলাম। রাতের বেলা গায়ে় দিয়ে ঘুমাতে পারব। আগের মতো ঠাণ্ডা লাগবে না। যারা কম্বল দিল, আল্লাহ তাদের ভালো করুক।
সেখানে কম্বল পাওয়া বাবলু রায় বলেন, কয়লার খনি আন্দোলনে আমি আহত হই। তারপর থেকে আমার চলাফেরা হুইল চেয়ারে। কাজকামও করতে পারি না। কিন্তু শীত তো আর অভাব মানে না। আর কম্বলও কিনতে পারি না। বসুন্ধরা গ্রুপ আমাদের কম্বল দিল, আমাদের মতো গরিব মানুষের জন্য অনেক উপকার হলো।
পরে সেখানে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের দীর্ঘায়ু ও তার ব্যবসার সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
এরপর দুপুরে জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলা মডেল বহুমুখী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে কম্বল বিতরণ করা হয়। সেখানে কম্বল নিতে আসা নবাবগঞ্জ উপজেলা শহরের আম্বিয়া বেওয়া বলেন, সইন্ধার (সন্ধ্যা) পর থাকি রাইতত বেশি হিয়াল (ঠাণ্ডা) করে। হামার তো মোটা শাল নাই। পাতলা ক্যাথা (কাঁথা) গাওত দিয়া ঘুমাই। একধায় (এত সহজে) গরম ধরে না। কাঁপ থামে না। আইজকা যে কম্বলটা পানু, এইটা গাওত (গায়ে) দিয়া ঘুমাম আইজ থাকি। যারা কম্বল দিলি, আল্লাহ তামার (তাদের) ভালো করুক, তাদের ব্যবসা বাণিজ্যে বরকত দেউক (দিক)। আল্লাহ যুগ যুগ বাঁচাই রাখুক।
এরপর বিকেলে জেলার হাকিমপুর উপজেলার বাংলা হিলি পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে বসুন্ধরা গ্রুপের দেওয়া কম্বল বিতরণ করা হয়।
কম্বল নিয়ে যেতে যেতে ফুলেশ্বরী রায় বলেন, বয়স্ক মাইনসের হিয়াল (শীত) কাটেছে না। কয়েকটা ক্যাথা দিয়াও শীত শীত লাগে রাইতত। কি করিম, কম্বল কিনার মতন অবস্থা নাই। কিনি দিবার মতনও কেউ নাই।
কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে কালের কণ্ঠ শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, কর্ম ও পরিকল্পনা সম্পাদক মো. আবীর খান, কালের কণ্ঠের জেলা প্রতিনিধি এমদাদুল হক মিলন, হিলি প্রতিনিধি গোলাম মোস্তাফিজার রহমান মিলন, শুভসংঘের জেলা সভাপতি রাসেল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন পারভেজ, দপ্তর সম্পাদক ইয়াছির আরাফাত রাফি, কালের কণ্ঠের বিরামপুর প্রতিনিধি মাহাবুর রহমান, শুভসংঘের নবাবগঞ্জ শাখার উপদেষ্টা সুলতান মাহমুদ, বিভিন্ন উপজেলার শুভসংঘের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত দুইদিনে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় শীতার্তদের মধ্যে তিন হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২৩
এসআই