ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

জাতীয় মহাসড়কে যুক্ত হলো বান্দরবান

কৌশিক দাশ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২৩
জাতীয় মহাসড়কে যুক্ত হলো বান্দরবান

বান্দরবান: নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হয়েছে বান্দরবান-কেরানীহাট জাতীয় মহাসড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পের কাজ। ২৬৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের তত্বাবধানে এ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করেছে সেনাবাহিনীর ২০ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন।

আর এর মাধ্যমে জাতীয় মহাসড়কে যুক্ত হলো পর্যটন নগরী খ্যাত পার্বত্য জেলা বান্দরবান।

বান্দরবানে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম কেরানীহাট-বান্দরবান সড়ক। পর্যটন শহর হওয়ায় প্রতিদিন হাজার হাজার দেশি বিদেশি পর্যটকসহ স্থানীয়রা যাতায়াতের জন্য সড়কটি ব্যবহার করেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে জেলার একমাত্র সড়কটি আঁকা বাঁকা ঢালু ও সরু হওয়ায় প্রায়ই ঘটতো নানা ধরনের দুর্ঘটনা। শুধু তাই নয়, সড়কের বিভিন্ন স্থানে নিচু হওয়ার কারণে বর্ষা মৌসুমে কয়েকদিন বৃষ্টি হলে রাস্তার বিভিন্ন অংশ তলিয়ে যেত। আর এর ফলে সারাদেশের সঙ্গে বান্দরবানের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত। এতে চরম দুর্ভোগে পড়তেন পর্যটকসহ স্থানীয়রা।

এমন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সড়কটির যথাযথ মান, প্রশস্তকরণ ও উন্নতীকরণ করে জাতীয় মহাসড়কে রুপান্তর করতে কাজ শুরু করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের অধীনে ২০ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন। প্রকল্পের আওতায় দীর্ঘ ২৩ কিলোমিটার কেরানীহাট- বান্দরবান সড়কটি জাতীয় মহাসড়কে উন্নীত করায় এখন লাঘব হবে দীর্ঘদিনের ভোগান্তি। সেই সঙ্গে উন্নত হবে স্থানীয়দের জীবনমান ও হ্রাস পাবে সড়ক দুর্ঘটনা এমনটাই প্রত্যাশা করছেন স্থানীয়রা।

বান্দরবান বাসস্টেশন এলাকার বাসিন্দা মো. আরমান বলেন, বান্দরবান-কেরানীহাট জাতীয় মহাসড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। খুব সুন্দর ও প্রশস্ত নতুন এ সড়কটি দেখে স্থানীয় ও পর্যটকরা খুবই বিমোহিত। আগে এ সড়কের অনেক স্থানে ভাঙা ছিল ও উচু নিচু আকাঁবাকা ছিল। কিন্তু এখন এ সড়কটি অনেক বড় হয়েছে এবং প্রশস্ত হয়েছে।

বান্দরবান চট্টগ্রাম সড়কের বাস চালক মো. জসীম বলেন, বান্দরবান সড়কে এখন বাস চালানো আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়ে গেছে। সড়কের মান ভালো হয়েছে ও বেশিরভাগ স্থানে সড়কের পাশে সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া রোড ডিভাইডার থাকায় দুর্ঘটনা অনেকটাই কমে আসবে।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৩ অক্টোবর কেরানীহাট-বান্দরবান জাতীয় মহাসড়ক যথাযথ মান, প্রশস্ততা ও উচ্চতায় উন্নীতকরণ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদিত হয়। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্বাবধানে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দেওয়া হয়। পরে তারা প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ের আগেই (১৫ ডিসেম্বর ২০২২) সফলভাবে সম্পন্ন করে।

প্রকল্পের আওতায় ২১টি ব্রিজ, ১৫টি কালভার্ট, ২১ কিলোমিটার ড্রেনেজ নিস্কাশন অবকাঠামো তৈরিসহ সড়ক প্রশস্তকরণ কাজের গুনগত মান বজায় রেখে কাজ শেষ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের কর্মকর্তারা।

কেরানীহাট-বান্দরবান জাতীয় মহাসড়ক যথাযথ মান, প্রশস্ততা ও উচ্চতায় উন্নীতকরণ প্রকল্প এর প্রকল্প কর্মকর্তা (২০ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন) মেজর মো. শাহ সাদমান রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ২৬৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের কাজটি সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। আগে এই সড়কটির গড় প্রশস্থতা ছিল মাত্র ৫ দশমিক ৫৮ মিটার। এছাড়া বিভিন্ন যানবাহন এবং পণ্যবাহী বাহনের চাপ অনুযায়ী সড়কটির প্রশস্ততা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। প্রশস্থতা কম থাকায় ঝুঁকি নিয়ে উভয়মুখী যানবাহন চলাচল করতে হতো। ফলে সড়কটিতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটতো। এছাড়া সড়কটি নিচু হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলের পানিতে রাস্তার বিভিন্ন অংশ তলিয়ে যেত। এতে করে বান্দরবানের সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তো। পরে প্রকল্পটির কাজ পেয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই সেটি শেষ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

এদিকে সড়ক বিভাগ বান্দরবান এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোসলেহ্উদ্দীন চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, একনেকে অনুমোদনের পর ২০১৯ সালে শুরু হয় বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কটি জাতীয় মহাসড়ক উন্নীতকরনের কাজ। সেনাবাহিনীর অক্লান্ত পরিশ্রমে সড়কটির কাজ শেষ হয়েছে। শীঘ্রই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে সড়কটির উদ্বোধন করবেন। সড়কটি জাতীয় মহাসড়কে উন্নীত হওয়ায় ফলে এখন নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি পর্যটন শিল্পের আরও প্রসার ঘটবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২৩
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।