ঢাকা, বুধবার, ২৭ কার্তিক ১৪৩১, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ফরিদপুরে ইটভাটায় দেদার পুড়ছে কাঠ-খড়ি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২৩
ফরিদপুরে ইটভাটায় দেদার পুড়ছে কাঠ-খড়ি

ফরিদপুর: ফরিদপুরে বেশিরভাগ ইটভাটায় দেদারসে কাঠ-খড়ি পোড়ানো হলেও নেওয়া হচ্ছে না কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ। আবার এসব ইটভাটায় অভিযান পরিচালনার জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা এবং ম্যাজিস্ট্রেট পাচ্ছে না পরিবেশ অধিদপ্তর।

এমনটাই জানিয়েছেন ফরিদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সাইফুল ইসলাম। এমনকি কয়েকদিন আগে অভিযান পরিচালনাকালে বিভিন্ন জায়গায় বাধা ও লাঞ্ছণার শিকার হতে হয়েছে তাকে।

জানা গেছে, জেলায় মোট ৯৯টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি ইটভাটাকে নবায়ন দিয়েছে ফরিদপুর পরিবেশ অধিদপ্তর। বাকিগুলো ত্রুটিপূর্ণ ও অবৈধ থাকায় নবায়ন দেওয়া হয়নি।

ফরিদপুর সদর উপজেলার একাধিক ইটভাটা ঘুরে দেখা যায়, অবাধে পোড়ানো হচ্ছে গাছের কাঠ। এর মধ্যে কানাইপুর ইউনিয়নের ছোনপঁচা এলাকায় তাজুল ইসলাম স্বত্ত্বাধিকারী হাক্কানী ইটভাটা, বাহিরদিয়া এলাকায় অবস্থিত এনামুল তারেক মিয়া স্বত্ত্বাধিকারী ফ্যনকো ব্রিক্স ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিআই) ইটভাটায় বিপুল পরিমাণ লাকড়ি (কাঠ) দেখা যায়।

বোয়ালমারী উপজেলার সাবেক মেয়র আব্দুস শুকুর শেখের রাজ ব্রিক্স ইটভাটায় বিপুল কাঠ মজুদ থাকতে দেখা গেছে। তিনি কাউকেই তোয়াক্কা করেন না বলে জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক। গত কয়েকদিন আগে সেখানে অভিযান পরিচালনাকালে তিনি লাঞ্ছনার শিকার হোন। ওইদিন ভাটার চিমনি ভেঙে দেওয়া হয়। কিন্তু তার কয়েকদিনের মধ্যে ভাটা চালু করে পুনরায় দেদারসে কাঠ পুড়িয়ে যাচ্ছেন আব্দুস শুকুর শেখ। এছাড়া এ উপজেলার হাসামদিয়া এলাকায় অবস্থিত বন্যা ব্রিক্স এ বিপুল পরিমাণ কাঠ সংরক্ষণে এবং পোড়াতে দেখা যায়।

এ বিষয়ে ফরিদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সাইফুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি ফরিদপুর প্রশাসনের ওপর দায় চাপিয়ে দেন। এমনকি পাশ্ববর্তী রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাকে বাধা দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের কাছে ম্যাজিস্ট্রেট চাইলে কোনো সাড়া পাই না। উল্টা আমরা ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে অভিযান পরিচালনা করলে তারা অসন্তুষ্ট হন। এমনকি কয়েকদিন আগে জেলা সমন্বয় সভায় বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেছেন, আমরা অভিযানে গেলে তারা কোনো সহযোগিতা করবে না। এরকম হলে আমরা অভিযান পরিচালনা করবো কিভাবে!

তিনি আরও বলেন, ফরিদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণে তিনটি জেলা আছে। এর মধ্যে গত ২২ ডিসেম্বর মাদারীপুর সদরের পাঁচখোলা এলাকায় অভিযান পরিচালনাকালে আক্রমণের শিকার হয়েছি। রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দিতে অভিযান পরিচালনার সময় ইউএনও নিজেই ফোন দিয়ে বলেছেন- ভাটায় হাত দেওয়া যাবে না।

তবে তিনি অবাধে কাঠ পোড়ানোর বিষয়ে বলেন, যেসব ইটভাটায় লাকড়ি পোড়ানো হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে ইতোমধ্যে কয়েকটিতে অভিযান পরিচালনা করেছি। যেসব ভাটায় লাকড়ি পেয়েছি, সেসব ইটভাটায় জরিমানা করা হয়েছে। এখন প্রশাসনের সহযোগিতা পেলে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

এদিকে ভাটার মালিকদের দাবি, কয়লার অনেক দাম এবং পর্যাপ্ত পাওয়া যায় না। যে কারণে বাধ্য হয়ে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। এছাড়া গত ২ বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে আমরা ব্যবসায় লস খাই। এ জন্য বাধ্য হয়েই কাঠ পোড়াচ্ছি।

ফরিদপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, গত ২৮ ডিসেম্বর ফরিদপুরে পাঁচটি ইটভাটায় অভিযান পরিচারনা করে সাড়ে ১১ লাখ টাকা জরিমানা আদায় ও দুইটি ইটভাটা আংশিক ভেঙে ফেলা হয়। এ সময় মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনাকালে অবৈধভাবে ইটভাটা পরিচালনা না করা এবং ইট প্রস্তুতে অবৈধভাবে মাটি ও কাঠের ব্যবহার না করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। ভবিষ্যতেও অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে এ ধরনের মোবাইল কোর্ট পরিচালনা অব্যাহত থাকবে বলেও জানানো হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২৩
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।