চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) প্রধান আসামি করে মামলার আবেদন করেছেন হামলার শিকার ওই উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী।
মঙ্গলবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের শিবগঞ্জ আমলী আদালতে উপস্থিত হয়ে মামলার আবেদন করেন সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী।
আদালতের একটি সূত্র জানায়, মঙ্গলবার বিকেলে আকস্মিকভাবে হামলার শিকার সাব-রেজিস্ট্রার মো. ইউসুফ আলী একটি মাইক্রোবাসে আদালতে প্রবেশ করে ১৪৩/৪৪৭/৪৪৮/৪২৭/৩২৩/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৩৩২/৩৫৩/৩৮০/১০৯/ ৫০৬(২) ধারায় ৪ জনকে আসামি করে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। এর পরপরই লাপাত্তা হয়ে যান তিনি। এর আগে শিবগঞ্জ থানায় একই ঘটনায় শিবগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয়ের মোহরার মামুনুর রশিদ বাদী হয়ে অজ্ঞাত ১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।
অন্য আসামিরা হলেন- চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার রাজারামপুর এলাকার আলাউদ্দিনের মেয়ে সালে নূর বেগম এ্যানি, শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা ইউনিয়নের নিশিপাড়া গ্রামের আল আমিন জুয়েল ও সদর উপজেলার বাখেরআলী বিশ্বনাথপুর গ্রামের মর্ত্তুজা আলীর ছেলে তমাস উদ্দিন।
মামলার বাদী বগুড়ার শাহজাহানপুর উপজেলার গন্ডগ্রাম গ্রামের মৃত ইমদাদুল হকের ছেলে সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী মামলার আবেদনে উল্লেখ করেন, গত ১০ জানুয়ারি বিকেল ৩টা ১০ মিনিটের দিকে সাব-রেজিস্ট্রারের এজলাস ও খাস কামরায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হায়াতের নির্দেশনায় ও তার হুকুমে হামলা হয়। এসময় সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়।
মামলার আবেদনে সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী আরও উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন দুপুর ২টা ৫০ মিনিটের দিকে ইউএনও আবুল হায়াত মামলার দুই নাম্বার আসামি সালেনুর বেগম এ্যানিকে সঙ্গে নিয়ে অফিসে এসে অবসরপ্রাপ্ত অফিস সহায়ক মৃত তালেব আলীর পেনশনের কাগজপত্রের ছাড়পত্র দিতে বলেন। কিন্তু এর সপক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে অনুরোধ করলে ইউএনও অকথ্য ভাষায় কথা বলেন। বিষয়টি জেলা রেজিস্টারকে জানাতে হাতে ফোন নিলে তা কেড়ে নেন এবং কলার ধরে কিল-ঘুষি মারেন ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন ইউএনও।
ইউসুফ আলী মামলার আবেদনে জানান, মারধর করে ইউএনও চলে যাওয়ার পরেও সেই নারীকে সঠিক কাগজপত্র না থাকায় ফিরিয়ে দিলে ইউএনওর আনসার বাহিনী অফিসে এসে সব সেবাগ্রহীতাদের তাড়িয়ে দেয়। পরে ইউএনওর নির্দেশে লাঠি লোহার রড ও পাইপ দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। হামলার পরদিন ১১ জানুয়ারি শিবগঞ্জ থানায় ইউএনও আবুল হায়াতের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে গেলে মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানানো হয় বলে অভিযোগ করেন সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী।
বাদীর আইনজীবী ব্যারিস্টার মনিরুজ্জামান আসাদ বলেন, বাদী নিজে আদালতে উপস্থিত হয়ে মামলার আবেদন করেছেন। বিচারক বাদীর সব ঘটনা ও অভিযোগ শুনেছেন। আমরা আশা করছি, আদালতে সঠিক বিচার পাব। এসময় আদালতে সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলীর পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে কথা বলতে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হায়াতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়েছে কিনা তা তিনি অবগত নন।
অন্যদিকে শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চৌধুরী জোবায়ের আহমেদ ঘটনার পরদিন থানায় মামলা না নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকেই আহত সাব-রেজিস্ট্রার এলাকায় নেই। সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী থানায় আসেননি। তবে থানায় তার পক্ষে একটি মামলা দেওয়া হলে সেটি গ্রহণ করা হয়েছে এবং আসামিও গ্রেফতার করা হয়েছে।
এদিকে মামলার তৃতীয় আসামি আল আমিন জুয়েল জানান, শিবগঞ্জ সাব রেজিস্টারকে হয়রানির শিকার কিছু ব্যক্তি ঘিরে রেখেছে এমন সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসা থেকে এসে জানতে পারেন সাব-রেজিস্ট্রার আহত হয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। পরে তিনি স্থানীয়দের সঙ্গে সাব রেজিস্টারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন আন্দোলনে যুক্ত হওয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ বিষয়গুলো শেয়ার করায় তাকে আসামি করা হয়ে থাকতে পারে। তার অভিযোগ তাদের পৈত্রিক জমি পাকা নারায়ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়কে বিক্রির জন্য রেজিস্ট্রি করতে এসে হয়রানির শিকার হতে হয়। একপর্যায়ে প্রকৃত খরচ ৬ হাজার ৯৮৫ টাকার পরিবর্তে ২৪ হাজার টাকা দিলে ওই জমির রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়।
মামলার বিষয়ে একাধিকবার সাব রেজিস্টার ইউসুফ আলীর মোবাইল ফোনে ফোন করা হলেও ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে শেষ খবর লেখা পর্যন্ত অভিযোগটির ব্যাপারে কোনো আদেশ দেননি আদালত।
প্রসঙ্গত, নিজ কার্যালয়ে হামলার পর আহত সাব রেজিস্টারকে প্রথমে শিবগঞ্জ পরে রাজশাহী এবং সব শেষ বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অন্যদিকে ঘটনার পরদিন ১১ জানুয়ারি রাতে মোহরার মামুন অর রশিদ বাদী হয়ে ১২ জন অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে শিবগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন। এ ঘটনায় শিবগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের মহরার সাজিরুল ইসলাম, আলফাজ উদ্দিন ও রোজবুল হককে গ্রেফতার করে পুলিশ।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২৩
আরএ