বরিশাল: বরিশালে পল্লি চিকিৎসককে শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনার চার মাস অতিবাহিত হলেও কোনো ক্লুই বের করতে পারেনি পুলিশ।
পরিবারের দাবি, জমি সংক্রান্ত বিরোধ নয়তো, সঙ্গে থাকা নগদ টাকা ছিনিয়ে নিতেই তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।
যদিও পুলিশ বলছে, আসামিদের গ্রেফতারে কাজ করছেন তারা।
বিভিন্ন সূত্র ও আশেপাশের সিসি টিভির ফুটেজ অনুযায়ী, গত ৭ অক্টোবর রাত ১২টা ৪০ মিনিটে বরিশাল নগরের গড়িয়ারপার এলাকা থেকে নিজ মালিকানাধীন ফার্মেসি খান মেডিক্যাল হল বন্ধ করে কাশিপুরের বাসার উদ্দেশ্যে ভ্যানযোগে রওনা হন পল্লি চিকিৎসক আব্দুর রহমান খান (৬০)। ১২টা ৪৫ মিনিটে সারাহ পেট্রোল পাম্প অতিক্রম করে বাড়ির সামনে পৌঁছান ওই পল্লি চিকিৎসক। ১২টা ৪৮ মিনিটে আব্দুর রহমান খানকে তার বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে সারাহ পাম্পের সামনে দিয়ে ফিরতে দেখা যায় ভ্যান চালক মতি মিয়াকে।
এর ১৫ মিনিট পর দুই যুবককে তড়িঘড়ি করে আব্দুর রহমানের বাড়ির দিক থেকে একই দিকে আসতে দেখা যায় সিসিটিভি ফুটেজে।
পরিবারের ধারণা, ওই ১৫ মিনিটের মধ্যেই হত্যা করা হয়েছে আব্দুর রহমান খানকে। হয়তো ওই দুই যুবকই হত্যা করেছে তাকে।
ওই রাতে (৭ অক্টোবর) আব্দুর রহমান খানকে বাসার সামনে নামিয়ে দেওয়া ভ্যান চালক মতি মিয়া জানান, আব্দুর রহমানকে নামিয়ে দিয়ে আমি চলে আসি। পরের দিন জানতে পারি আব্দুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে।
নিহত পল্লি চিকিৎসকের ছোট ছেলে আব্দুল্লাহ রহমান রাওহা জানান, ওই রাতে নির্ধারিত সময়ে বাড়িতে না ফেরায় বাবাকে একাধিকবার ফোন দিয়েও কোনো সাড়া পাননি। পরবর্তীতে ভোরবেলা খুঁজতে বের হন তারা।
তিনি বলেন, বাড়ির বাইরে বের হতেই প্রথমে বাবার জুতো এবং একটু সামনে এগিয়ে বাবাকে গাছের সঙ্গে হেলান দেওয়া অবস্থায় দেখতে পাই। সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে মাকে ডাক দেই। এরপর সবাই মিলে ধরে বাড়ির মধ্যে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নিশ্চিত হই বাবা আর নেই।
তিনি বলেন, বাবা ফার্মেসি বন্ধ করে বাড়ি ফেরার সময় প্রতিদিন ক্যাশ বাক্সের টাকা সঙ্গে করে নিয়ে আসতেন। তবে যখন তাকে আমরা গাছের সঙ্গে হেলান দেওয়া অবস্থায় দেখতে পাই, তখন তার পকেট উল্টানো ছিলো। এছাড়া তার সঙ্গে কোনো টাকা-পয়সাও পাওয়া যায়নি। এখন কী কারণে বাবাকে হত্যা করা হয়েছে, সেটা পরিষ্কার বুঝতে পারছি না আমরা।
এ ঘটনায় আব্দুর রহমান খানের বড় ছেলে মারজানুর রহমান বাদী হয়ে বরিশালের এয়ারপোর্ট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মারজানুর রহমান বলেন, আমরা প্রথম থেকেই সন্দেহ করে আসছি যে, বাবাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। এখন ময়নাতদন্তের রিপোর্টেও শ্বাসরোধ করে হত্যার বিষয়টি উঠে এসেছে। তবে ঘটনার চার মাস পার হয়ে গেলেও হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।
তিনি আরও বলেন, বাবার পকেটে দোকান থেকে বাসায় আসার সময় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা থাকতো। তিনি যেহেতু নামকরা পল্লি চিকিৎসক ছিলেন, তাই তার কাছে আসা রোগির সংখ্যাও ছিলো অনেক। যে কারণে বাসায় ফিরতে সাড়ে ১২টা বা একটা বাজতো।
বাদী মারজানুর রহমান বলেন, মরদেহ উদ্ধারের সময় বাবার কাছে দোকানের ক্যাশের টাকা পাওয়া যায়নি। তাই আমরা মূলত দুটি কারণ সন্দেহ করছি। আমাদের সঙ্গে পাশের লোকজনের জমিজমা নিয়ে বিরোধ ছিল। আবার টাকা ছিনিয়ে নিতেও হত্যা করা হতে পারে বাবাকে।
এদিকে হত্যাকারীদের দ্রুত শনাক্ত ও গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান নিহতের স্ত্রী নাজলী রহমান। তিনি বিলাপ করতে করতে বলেন, একটা মানুষকে তার বাসার সামনে হত্যা করা হলো। কি কারণে হত্যা করা হলো, কারা করলো- কিছুই জানতে পারলাম না। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
মরদেহ উদ্ধারের সময় তার নাকে মুখে রক্তের দাগসহ শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায় বলেও জানান তিনি।
এদিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের এয়ারপোর্ট থানা পুলিশের পরিদর্শক লোকমান হোসেন বলেন, হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চলমান। বিষয়টি অধিকতর গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার বিএম আশরাফুল্লাহ তাহের বলেন, নিজ বাসার সামনে থেকে আব্দুর রহমানের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা তদন্তে ও আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ কাজ করছে। পাশাপাশি তদন্তকারী কর্মকর্তাকেও এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এসেছে। তাতে হত্যাকাণ্ড উল্লেখ রয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য কাজ করছে পুলিশ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৩
এমএস