ঢাকা: বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। আর কেউ এ পদে মনোনয়ন জমা না দেওয়ায় রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার নামই ঘোষণা করা হবে।
২০১৮ সালেও একক বৈধ প্রার্থী হওয়ায় মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষিত হয়েছিলেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় ছিল বিকেল চারটা পর্যন্ত। আর কেউ এ সময়ের মধ্যে মনোনয়ন জমা না দেওয়ায় মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ছিলেন একক প্রার্থী। এক্ষেত্রে সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) মনোনয়ন বাছাইয়ে বৈধ হলে জেলা ও দায়রা জজ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক এ সদস্যকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন। ঘোষণা দেবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মোহাম্মদ জাহাংগীর আলম জানান, রাষ্ট্রপতি পদে দুটি আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এ দুটি আবেদন সোমবার দুপুর ১টা হতে বাছাই করা হবে। বাছাইয়ের পরে যেটি টিকবে নির্বাচনী কর্তা সেটি গণমাধ্যমে জানাবেন।
তিনি বলেন, একই ব্যক্তি একই নামে দুটি মনোনয়নপত্রেই প্রস্তাবক (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের) ও সমর্থক (আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. হাছান মাহমুদ) হয়েছেন।
প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকলে নির্বাচনের প্রক্রিয়া কী হবে জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, আমরা বাছাইয়ের পরে বৈধ মনোনয়ন হিসেবে যেটি আসবে, তার নাম ঘোষণা করব। আইনানুগভাবে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ তারিখে আমরা চূড়ান্ত ঘোষণা করবো কে বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হলেন। তবে যেহেতু প্রার্থী একজন, তারই দুটি মনোনয়ন ফরম জমা হয়েছে; সুতরাং, সোমবার বাছাইয়ের সময় যদি আবেদন দুটি টিকে যায়, কালই চূড়ান্ত হয়ে যাবে।
একক পদপ্রার্থী হওয়ায় ভোটাভুটির প্রয়োজন নেই। সে ক্ষেত্রে কি প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হবে জানতে চাইলে মোহাম্মদ জাহাংগীর আলম বলেন, একটি (রাষ্ট্রপতি) পদে যদি একজন মাত্র পদপ্রার্থী থাকে এবং সেটা বাছাইয়ে চূড়ান্তভাবে মনোনীত হয় তাহলে সেটিই চূড়ান্ত ঘোষিত হয়। বাছাইয়ে না টিকলে সেটা আইন অনুযায়ী পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ তিনটি মনোনয়ন জমা দিতে পারবেন। কেননা, প্রস্তাবকারী-সমর্থনকারী ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি হতে পারে। যদি রাষ্ট্রপতি পদে একাধিক ব্যক্তি প্রার্থী হন; সেখানে এক ব্যক্তি দুজনের প্রস্তাবকারী হতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে বাছাইয়ের প্রয়োজন অবশ্যই আছে। যিনি প্রস্তাবকারী ও যিনি সমর্থনকারী তার সমস্ত তথ্য-উপাত্ত আইন অনুযায়ী আমাদের দেখতে হবে।
স্বাধীনতার পর মোট একুশ মেয়াদে ১৭ ব্যক্তি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। আর রাষ্ট্রপতি আইন-১৯৯১ প্রণীত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত একবারই (১৯৯১ সালে) নির্বাচন হয়েছে। এরপর ক্ষমতাসীন দলের দেওয়া প্রার্থীরাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতাই নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বিএনপি আব্দুর রহমান বিশ্বাসকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দিয়েছিল। আর সেই সময়কার প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরী। নির্বাচনে আব্দুর রহমান বিশ্বাস জয়ী হন।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি ভোটের দিন রেখে গত ২৫ জানুয়ারি এবারের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ‘নির্বাচনী কর্তা’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র যাচাই হবে আগামীকাল সোমবার। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় আগামী মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি)। জাতীয় সংসদ ভবনে ভোট গ্রহণ হওয়ার কথা ছিল রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। কিন্তু একাধিক প্রার্থী না থাকায় ভোট হবে না।
সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর তার পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারেন। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল কার্যভার গ্রহণ করেন। সে মোতাবেক তার দায়িত্বের পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৩ এপ্রিল।
এ মেয়াদ শেষ হওয়ায় পদটি শূণ্য হলে নির্দিষ্ট তারিখের পর ৯০ থেকে ষাট দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিধান রয়েছে। সংবিধানের এসব বিধানের আলোকে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় গণনা শুরু হয়েছে গত ২৪ জানুয়ারি। আর ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
২০১৮ সালে সর্বশেষ এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল সে বছর ২৫ জানুয়ারি। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ছিল ৫ ফেব্রুয়ারি, মনোনয়নপত্র বাছাই ছিল ৭ ফেব্রুয়ারি। আর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় ছিল ১০ ফেব্রুয়ারি। ভোট হওয়ার কথা ছিল ১৮ ফেব্রুয়ারি। ২২ দিনের মধ্যে পুরো কার্যক্রম শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইসি। কিন্তু মো. আবদুল হামিদ একক প্রার্থী হওয়ায় তিনিই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের জন্য সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে একজন করে প্রস্তাবক ও সমর্থক হতে হয়। আর সংসদ সদস্যরা নির্বাচনের ভোটার। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল। ফলে দলর সংসদ সদস্যরা যাকে সমর্থন দিচ্ছেন, তিনিই হচ্ছেন ২২তম রাষ্ট্রপতি।
আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা মো. জিল্লুর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় অসুস্থ হয়ে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিতে গেলে ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ থেকে মো. আবদুল হামিদ ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। সে বছর ২০ মার্চ রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান মৃত্যুবরণ করলে সেদিন থেকেই অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন মো. আবদুল হামিদ। পরবর্তীতে ২২ এপ্রিল তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন তিনি এবং ২৪ এপ্রিল ২১ তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ বাক্য পাঠ করেন। সংবিধান অনুযায়ী, দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হওয়ায় তিনি আর এ পদে প্রার্থী হতে পারবেন না। এখন তার স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন বিচারপতি মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।
>> দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু!
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৩
ইইউডি/এমজে