নীলফামারী: নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ের শহর। এখানে রেলওয়ের রয়েছে ৮০০ একরের বেশি সম্পদ।
তবে এসব স্থাপনা উদ্ধারে কোনো জোরালো ভূমিকা নেই। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রেলের ৮০০ একর জমির মধ্যে ১১০ একরে ১৮৭০ সালে দেশের বৃহত্তম রেলওয়ে কারখানা গড়ে তোলা হয়। অবশিষ্ট জমির মধ্যে রয়েছে রেলওয়ের অন্যান্য স্থাপনা ও রেলওয়ে কর্মচারীদের জন্য বসতবাড়ি বা কোয়ার্টার। আর অব্যহৃত রয়েছে ৫৫ একর কৃষি জমি, ২১.৩৮ একর জলাশয়, এক একর বাণিজ্যিক হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া জমি। এছাড়া সেবা সংস্থাটির ২৫.২৫ একর জমি পৌরসভার আওতায় আছে। তবে স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত রেলওয়ের বাকি জমি বেদখল হয়ে গেছে। সম্প্রতি রেলওয়ের ভূমি ব্যবস্থাপনার কমপ্লায়েন্স নীতিরক্ষা প্রতিবেদনে সব মিলিয়ে ৪২৭ একর জমি অবৈধ দখলদারদের হাতে চলে যাওয়ার তথ্য উঠে আসে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ফিল্ড কানুনগো ৭ নম্বর কাচারি সৈয়দপুর কার্যালয়ের অধীনে বিমানবন্দর সংলগ্ন নিচু কলোনি নামক স্থানে কলোনি নির্মাণের জন্য ১৯.২৪০০ একর অধিগ্রহণ করা হয়। যা ৩২টি সিএস দাগে রেলওয়ের রেকর্ডভুক্ত। কিন্তু ২০১২ থেকে ২০২২ সালে সেই জমির ১৫.২১৮৩ একর ভূমি বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে রেকর্ড হয়েছে। এর ফলে লাইসেন্স ফি বাবদ বার্ষিক দুই কোটি ৫৪ লাখ টাকার ক্ষতি হচ্ছে।
এদিকে কমপ্লায়েন্স নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০০৬-এর নির্দেশনা পরিপালন না করা এবং অধিগ্রহণকৃত সব ভূমির স্বত্ব রেকর্ড সংরক্ষণ না করা, জমির সীমানা চিহ্নিত না করা, কৃষি, মৎস্য, বাণিজ্যিক প্রভৃতি জমির রেকর্ড সংরক্ষণ না করা এবং সব ধরনের জমির হিসাব রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ না করায় রেলের প্রকৃত জমির হিসাব সংরক্ষণে অনিয়ম হয়েছে।
এরই মধ্যে রেলওয়ের অধিগ্রহণ করা জমির মধ্যে ১৫.২১৮৩ একর জমি সিএস, এসএ, আরএস, বিএস জরিপের সময় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে রেকর্ডভুক্ত ও নামজারি হয়েছে। এর সঙ্গে স্থানীয় ভূমি অফিস ও রেলের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।
এলাকাবাসী জানান, প্রথমে টিনের বেড়া দিয়ে রেলের জায়গা দখলে নেওয়া হয়। তারপর গড়ে তোলা হয় বিশাল অট্টালিকা। এসব দেখার জন্য রেলের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও কর্মচারী থাকলেও তারা না দেখার ভান করেন। ফলে অনেক ক্ষেত্রে রেলের জায়গাসহ কোয়ার্টারও বেদখল হয়ে গেছে সৈয়দপুরে।
রেলওয়ের কারিগরি পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা ও সৈয়দপুর কারখানা শাখার সভাপতি হবিবর রহমান হাবিব বলেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ রেলভূমি সংরক্ষণে যথাযথ ব্যবস্থা নিলে অন্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে নামজারি করানো সম্ভব হতো না।
ফিল্ড কানুনগো ৭ নম্বর কাচারি সৈয়দপুর কার্যালয়ের কানুনগো জিয়াউল হক বলেন, জমি বেদখলের বিষয়ে রেলওয়ের পক্ষ থেকে অডিট বিভাগকে জানানো হয়েছে। রেলের ভূমি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে খতিয়ানভুক্ত হওয়ায় রেকর্ড সংশোধনী মামলা করার জন্য কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৩
এসআই