পাথরঘাটা (বরগুনা): দীর্ঘদিন পর বঙ্গোপসাগরে দস্যুদের তৎপরতা আবারও বেড়েছে। সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে দস্যুদের হামলার শিকার হয়েছেন জেলেরা।
র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় কয়েক বছর ধরে বঙ্গোপসাগরে দস্যুমুক্ত থাকলেও আবার হামলার ঘটনা ঘটায় জেলেদের মধ্যে আতঙ্ক শুরু হয়েছে। যার কারণে আবারও উপকূলের মৎস্যজীবীদের মধ্যে র্যাবের স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপনের দাবি নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
১৭ ফেরুয়ারি বরগুনার পাথরঘাটা থেকে ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে পায়রাবন্দর থেকে পশ্চিমে ভয়া এলাকায় এফবি ভাই ভাই ট্রলারে গভীর রাতে হামলা চালিয়ে রসদ সামগ্রী লুটে নেয় দস্যুরা। ট্রলারে থাকা ৯ জেলেকে কুপিয়ে, পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। এ সময় জীবন বাঁচাতে অপর ৯ জেলে সাগরে ঝাঁপ দেন। তিনদিন পর নিখোঁজ ৯ জেলের মধ্যে ৪ জেলেকে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করলেও চিকিৎসাধীন এক জেলের মৃত্যু হয়। এখন পর্যন্ত ৫ জেলের সন্ধান মেলেনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি এখনো উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে তারা।
দীর্ঘদিন পর সাগরে দস্যুদের তৎপরতা বাড়ায় উপকূলের জেলেরা মাছ শিকারে যেতে আতঙ্কে আছেন। অনেক জেলে ভয়ে, আতঙ্কে সাগরে মাছ ধরতে যাচ্ছেন না। সাগরে যারা ছিলেন অনেকে ঘাটে ফিরছেন বলেও জানা গেছে।
মৎস্যজীবীরা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে নির্বিঘ্নে সাগরে মাছ শিকার করেছেন জেলেরা। এখন আবারও দস্যুতা শুরু হওয়ায় জেলেদের মাঝে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তবে মৎস্যজীবীদের পক্ষ থেকে পাথরঘাটায় র্যাবের স্থায়ী ক্যাম্পের দাবি করে এলেও এখন পর্যন্ত তা হয়নি। তারা মনে করেন, দস্যু নির্মূলে উপকূলে র্যাবের স্থায়ী ক্যাম্পের বিকল্প নেই।
অন্যদিকে র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, সাগরে অস্থিরতা তৈরি করলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার জেলেদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় পাথরঘাটায় র্যাবের স্থায়ী ক্যাম্পের দাবি করায় আশ্বস্ত করেছিলেন র্যাব জিডি আবদুল্লাহ আল মামুন।
ওই সময় তিনি বলেছিলেন, ‘দস্যুতা করলে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া যাবে না। আমরা সুন্দরবন দস্যুমুক্ত করেছি। সমুদ্রও আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে, সমুদ্র ও উপকূলীয় অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে রাখবে র্যাব।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত হোমিওপ্যাথি ওষুধ দেওয়া হয়েছে। তার মানে এই নয় যে এলোপ্যাথি বন্ধ করে রেখেছি। এলোপ্যাথি কিন্তু পকেটে আছে। যার যে ব্যবস্থা দরকার আমরা সেই ব্যবস্থাই নেব।
উপকূলের জেলেদের অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা সাংবাদিক ও গবেষক শফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, দস্যু অধ্যুষিত এলাকা বলে পরিচিত উপকূলীয় উপজেলা পাথরঘাটায় র্যাবের স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে। এ দাবি এখন প্রাণের দাবি। তাছাড়া জেলেদের জীবনের নিরাপত্তা, সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতসহ দুর্যোগকালীন এবং দস্যুদের কবল থেকে উদ্ধার করতে দ্রুত উদ্ধার যান (হেলিকপ্টার) এখন সময়ের দাবি।
বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, বঙ্গোপসাগরে দস্যুদের অত্যাচার আবার শুরু হয়েছে। জেলেদের নিরাপত্তার জন্য সাগরে কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী ও উপকূলে নৌপুলিশের টহল জোরদার ও পাথরঘাটায় র্যাবের ক্যাম্প স্থাপন ও সুন্দরবন এলাকায় নৌবাহিনীর ঘাঁটি করার দাবি জানান তিনি।
র্যাব-৮ এর পটুয়াখালী কোম্পানি অধিনায়ক তুহিন রেজা বলেন, র্যাবের স্থায়ী ক্যাম্পের বিষয় আইনগত, জনবল এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বড় সিদ্ধান্তের বিষয় থাকে। এ অঞ্চলে একটি ঘটনা ঘটলে আমাদের দুটি নদী পার হয়ে যেতে হয়, ক্ষেত্রে পাথরঘাটায় একটি সাব ক্যাম্প হলে আমাদের জন্য এবং স্থানীয়দের জন্য ভালো হয়। ইতোমধ্যেই আমি সাব ক্যাম্পের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করেছি।
বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৩
আরএ