ঢাকা: দেশের ফুটবলের উন্নয়নে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) গণভবনে আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমন্ত্রী সান্তিয়াগো আন্দ্রেস ক্যাফিয়েরোকে সৌজন্য সাক্ষাৎ দেওয়ার সময় তিনি এই সহযোগিতা চান।
পরে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মেসির নাম এবং আর্জেন্টিনার ফুটবল বাংলাদেশের ঘরে ঘরে খুবই জনপ্রিয়। বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নয়নে আর্জেন্টিনা বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী পারস্পরিক সুবিধার জন্য বাংলাদেশ ও আর্জেন্টিনার মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনৈতিক, সামাজিক, ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও পর্যটনসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
আর্জেন্টিনার সঙ্গে যোগাযোগ জোরদারে তার সরকারের আগ্রহ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা বুয়েনস আইরেসের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে খুবই আগ্রহী।
তিনি বলেন, সহযোগিতা বাড়ানোর মাধ্যমে দুই দেশ আর্থসামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে তাদের জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, আর্জেন্টিনা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি উচ্চমানের ফার্মাসিউটিক্যালস, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য পণ্য কিনতে পারে। অন্যদিকে বাংলাদেশ আর্জেন্টিনা থেকে সয়াবিন, অ্যানিমেল ভেজিটেবল ফ্যাটস অ্যান্ড ওয়েল, তৈলবীজ, ফলমূল, দুগ্ধজাত পণ্য ও প্রাকৃতিক মধু আমদানি করে।
কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং শিল্পায়নের লক্ষ্যে সারা দেশে একশটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করার কথা উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ায় একটি বিপণনকেন্দ্র।
তিনি বলেন, তার সরকার শুধু দেশের মধ্যেই নয়, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গেও শক্তিশালী যোগাযোগ অবকাঠামো গড়ে তুলছে।
আর্জেন্টিনার মন্ত্রী সান্তিয়াগো আন্দ্রেস ক্যাফিয়েরো আশা প্রকাশ করেছেন, ঢাকায় আর্জেন্টিনার দূতাবাস পুনরায় খোলার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সহযোগিতা বাড়বে।
তিনি বলেন, ঢাকায় তার দূতাবাস পুনরায় চালু হওয়ায় আর্জেন্টিনা খুবই খুশি এবং এই লক্ষ্যে সহযোগিতা প্রদানের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
আর্জেন্টিনা প্রথম ১৯৭৪ সালে এখানে ঢাকায় তার দূতাবাস চালু করে, কিন্তু ১৯৭৮ সালে সামরিক জান্তার শাসনামলে তা বন্ধ করে দেয়।
সোমবার ঢাকার বনানীতে আর্জেন্টিনা দূতাবাস পুনরায় চালু করা হয়েছে।
বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনাকালে শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড-১৯ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে সারা বিশ্ব দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বিশ্বে খাদ্য দ্রব্যের দাম এবং মুদ্রাস্ফীতি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাওয়ায় শুধু বাংলাদেশ নয়, অনেক উন্নত দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্ধুপ্রতীম দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা ও সম্পর্ক বাড়ানোর মাধ্যমে জনগণের দুর্ভোগ লাঘব করা সম্ভব।
এ প্রসঙ্গে সফররত মন্ত্রী বলেন, যুদ্ধ ও কোভিড-১৯ মহামারির কারণে আর্জেন্টিনার জনগণও উচ্চ মুদ্রাস্ফীতিতে ভুগছে।
জলবায়ু পরিবর্তন প্রসঙ্গে তিনি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সম্মিলিতভাবে গ্লোবাল সাউথ ফোরামের সদস্য দেশগুলোর সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকার ও প্রশংসা করেন।
বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন দেখে তিনি মুগ্ধ।
এটি তার প্রথম বাংলাদেশ সফর উল্লেখ করে আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এত সুন্দর হবে তা কখনোই ভাবিনি।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পশ্চিম) সাব্বির আহমেদ চৌধুরী এবং বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত হুগো গোবি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৩
এমইউএম/আরএইচ