নড়াইল: নড়াইলে গত দুইদিন ধরে সার নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। চায়ের দোকান, আড্ডায় চলছে পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি-তর্ক।
ঘটনার শুরু সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টার দিকে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে স্থানীয় কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী ও স্থানীয় জনতা মিলে মুচিরপোল এলাকা থেকে ৪৪০ বস্তা সারসহ একটি ট্রাক আটকের মধ্যে দিয়ে।
এর পর মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ভোর রাতে পাচারকালে আরও দুটি ট্রাকসহ মোট ৯৪৫ বস্তা সার আটক করে নড়াইল সদর থানা ও লোহাগড়া থানা পুলিশ।
সারসহ ট্রাক জব্দ করার সত্যতা বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন নড়াইল জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাদিরা খাতুন।
এ বিষয় খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জব্দকৃত ট্রাক যশোর-ট-১১-৪১৫৮ থেকে ৪৪০ বস্তা (২২ টন) টিএসপি সার, যশোর-ট-১১-৩৪২৪ ট্রাক থেকে ৪০০ বস্তা (২০ টন) ইউরিয়া সার এবং যশোর-ট-১১-৩৫৪৮ ট্রাক থেকে ১০৫ বস্তা (৫.২৫ টন) টিএসপি সারসহ প্রতিটি বস্তা ৫০ কেজি একক পরিমাপের মোট ৯৪৫ বস্তায় ৪৭.২৫ টন সার জব্দ করা হয়েছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে স্থানীয় কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী ও স্থানীয়রা সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৭ টার দিকে শহরের মুচিরপোল এলাকায় সার পাচার হচ্ছে এমন সন্দেহে ৪১৫৮ সিরিয়ালের ট্রাকটি আটকান। এসময় চালক মিজানুরের কাছে উপস্থিত সবাই জানতে চান সার কোথায় যাবে? চালক জানান ৪৪০ বস্তা সারবাহী ট্রাকটি কোথায় যাবে তার সঠিক জানা নাই। তার অসংলগ্ন প্রশ্নোত্তরে সন্দেহ হলে থানা পুলিশে খবর দেন গণমাধ্যম কর্মীরা।
পুলিশের উপস্থিতিতে নড়াইলের প্রভাবশালী সার ডিলার অলোক কুণ্ডু এসে সারের মালিকানা দাবি করেন। এসময় তিনি বলেন, ট্রাকভর্তি সার মাইজপাড়া এবং কালিয়া উপজেলায় যাবে। মালিকানা মূলে সারের কাগজপত্র পুলিশ দেখতে চাইলে তিনি কিছু সারের চালান দেখান, যেখানে নড়াইল বিএডিসি উপ সহকারী পরিচালক সুভাষ চন্দ্র সরকার স্বাক্ষরিত চালানে মিলন কান্তি সাহা ও তপন দত্ত নামের ব্যক্তিদের নামীয় মালিকানা দেখা যায়।
মালিকানা গড়মিল, মাইজপাড়া সড়কে না গিয়ে অন্য রাস্তায় ট্রাকসহ অসংলগ্ন প্রশ্নোত্তরের কারণে রাত সাড়ে ১১টার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান, সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান, বিএডিসি উপ সহকারী পরিচালক সুভাষ চন্দ্র সরকার, গণমাধ্যমকর্মী এবং উপস্থিত জনতার সামনে সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) সেলিম আহম্মেদ ট্রাকসহ সার পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
পরে ৪৪০ বস্তা সার বোঝাই ট্রাক পুলিশ হেফাজতে নিলেও চালান বিবরণীতে মোট ৭১৫ বস্তার হিসাব দেখা যায়। গণমাধ্যম কর্মীদের জিজ্ঞাসায় বাকি ২৭৫ বস্তা সার সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ওই রাতেই জেলা পুলিশ ২৭৫ বস্তা সারবাহী ট্রাকের সন্ধানে তল্লাশি অভিযান চালায়। মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ভোর রাতের দিকে লোহাগড়া উপজেলার কলেজ পাড়া এলাকার ফরিদ শেখের গোডাউনের সামনে থেকে ৪৪০ বস্তা ইউরিয়া সার ও ১০৫ বস্তা টিএসপি সারবাহী দুটি ট্রাককে আটক করে লোহাগড়া থানা পুলিশ। পরে লোহাগড়ায় আটক ট্রাকসহ সার নড়াইল পুলিশ ফাঁড়ি হেফাজতে রাখা হয়।
এদিকে সার আটকের পর মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টার দিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান স্বাক্ষরিত পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া চিঠি পাওয়া গেছে। চিঠিতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জুবায়ের হোসেন চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিকে আগামী ৫ মার্চ ২০২৩, তারিখের মধ্যে সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) নড়াইলের উপ-সহকারী পরিচালক (সার) সুবাস চন্দ্র সরকার এসব বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
জেলা সার বীজ মনিটরিং কমিটির সদস্য সচীব ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দীপক কুমার রায় মোবাইলে বাংলানিউজকে জানান, সার পাচার বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের রিপোর্ট পেলে বিস্তারিত জানা যাবে এটা কালোবাজারে পাচার হচ্ছিল কিনা।
এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাদিরা খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, সার চালানের কাগজপত্রের ত্রুটি, মালিকানার অসংগতিসহ বেশ কিছু কারণে তিনটি ট্রাকসহ ৯৪৫ বস্তা সার পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। রাতের আঁধারে সার পাচার করা হচ্ছিল নাকি ডিলার মালিকদের বৈধতা সাপেক্ষে সঠিক স্থানে সার পরিবহন করা হচ্ছে এসব বিষয়সহ সব দিক গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৮ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০২৩
আরএ