ঢাকা: মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম একজন ওমান প্রবাসী। দেশটির একটি রেস্টুরেন্টে চাকরি করেন।
সুনামগঞ্জ ফেরত গিয়ে আবার ঢাকা আসা তার জন্য কঠিন ছিল। তাই পরিচিত কয়েকজনকে ফোন করেন থাকার জায়গা খুঁজতে। খবর পান প্রবাসী যাত্রীদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ‘বঙ্গবন্ধু ওয়েজ আর্নার্স সেন্টার’ করা হয়েছে। ফ্লাইটের কাগজপত্র দেখিয়ে তারা সেখানে থাকতে পারেন। পরে সেন্টারের ওয়েবসাইট থেকে নম্বর জোগাড় করে রিসিপশনে কথা বলেন জাহাঙ্গীর। সেখান থেকে তাকে ঠিকানা দেওয়া হয়, জিজ্ঞেস করা হয় তাকে নিতে যেতে গাড়ি পাঠাতে হবে কিনা?
কিন্তু বিমানবন্দর থেকে বঙ্গবন্ধু ওয়েজ আর্নার্স সেন্টারের দূরত্ব মাত্র ৬ কিলোমিটার। জাহাঙ্গীর আলম গুগল ম্যাপে লোকেশন বুঝে নিয়ে রিসিপশনে জানালেন, তিনি একাই যেতে পারবেন। পরে বিমানবন্দর স্টেশন থেকে মাত্র ৬০ টাকায় অটোরিকশা ভাড়া করে তিনি আর্নার্স সেন্টারে যান। রিসিপশনে পাসপোর্ট, বিমানের টিকিট ও অন্যান্য কাগজপত্র দেখিয়ে সিট নেন। দু’দিনে তার খরচ হয় মাত্র ৪০০ টাকা। ছয় বেলা খাবার বাবদ খরচ করেন ৬৪০ টাকা। সবকিছু মিলিয়ে তার মোট খরচ হয় ১ হাজার ৪০ টাকা।
এত অল্প খরচে রাজধানীতে দু’দিন থাকা অনেকটা কল্পনাতীত। কিন্তু সরকারের এ উদ্যোগে প্রবাসীদের কষ্ট লাঘব হয়েছে, তাই খুব সন্তুষ্ট জাহাঙ্গীর। সরকারের এমন উদ্যোগ কীভাবে দেখছেন জাহাঙ্গীর আলম? জানতে চাইলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমি প্রথমবার যখন বিদেশ যাই, তিনদিন হোটেলে ছিলাম। আমার প্রায় দশ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল। কিন্তু এখানে খরচ অনেক কম। সেন্টারটিও নতুন; পরিবেশ খুব ভালো, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। স্টাফদের আচার-আচরণও খুব ভালো, যা অন্য অনেক হোটেলে পাওয়া যায় না।
বঙ্গবন্ধু ওয়েজ আর্নার্স সেন্টারে যে থাকা যায় এ সম্পর্কে অনেকেই জানে না। এর প্রচার বাড়াতে পারলে খুব ভালো হবে। গ্রামের মানুষ যারা বিদেশ যাওয়ার আগে ঢাকা এসে থাকার জায়গা নিয়ে সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য এ সেন্টার খুবই প্রয়োজনীয়। দেশব্যাপী এ সেন্টারটি নিয়ে প্রচারণা চালালে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষরাও উপকৃত হবে।
সরেজমিনে খিলক্ষেতের লঞ্জনীপাড়ার বরুয়ায় নির্মিত বঙ্গবন্ধু ওয়েজ আর্নার্স সেন্টার ঘুরে দেখে বাংলানিউজ। দেখা যায় সেন্টারের ভেতরের নিরিবিলি পরিবেশ। নীরব জায়গাটির চারদিকে সবুজের সমারোহ। মনে হবে যেন রিসোর্টে আসা হয়েছে। প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪০ কাঠা জমির ওপর গড়ে উঠেছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাযুক্ত ডরমিটরি। এতেই থাকার সুযোগ পান বিদেশগামী বা প্রবাসফেরত লোকজন। শনিবার (১১ মার্চ) সেন্টারে গিয়ে মাত্র ছয়জন বিদেশগামীকে দেখা যায়।
বর্তমানে এ সেন্টারে ৪০ জন পুরুষ ও নয়জন নারীর থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। তিন বেলা খাবার মূল্য ৩২০ টাকা। সকালের নাস্তা ৬০ টাকা দুপুর ও রাতের খাবার মেলে ১৩০ টাকায়। যদিও এসব খাবার বাইরে থেকে আনা হয়। কিন্তু খাবার রান্নার জন্য সেন্টারের রয়েছে নিজস্ব ক্যান্টিন। বর্তমানে লোকজন কম হওয়ায় ঘটা করে ক্যান্টিনের কার্যক্রম শুরু হয়নি। এসব তথ্য জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু ওয়েজ আর্নার্স সেন্টারের তত্ত্বাবধায়ক সহকারী মো. আতিকুর রহমান।
তিনি আরও জানান, সেন্টারে এখন ৯ জন স্টাফ কাজ করেন। সহকারী পরিচালক ও ডেপুটি ডিরেক্টর, পাঁচ পরিচ্ছন্নতাকর্মী; একজন কম্পিউটার অপারেটর ও তত্ত্বাবধায়কের সহকারী হিসেবে একজন কাজ করছেন। এয়ারপোর্ট থেকে যাত্রী নিয়ে আসার জন্য রয়েছে তাদের একটি মাইক্রোবাস। এতে দু’জন গাড়ি চালক হিসেবে কাজ করেন। সেন্টারে যাত্রীদের বিনোদনের জন্য ব্যাডমিন্টন, ফুটবল, ক্যারাম ও ক্রিকেট খেলার ব্যবস্থা আছে।
জানা গেছে, দৈনিক মাত্র ২০০ টাকার বিনিময়ে যেকোনো প্রবাসী সর্বোচ্চ দু’দিন এ সেন্টারে রাতযাপন করতে পারবেন। সঙ্গে থাকতে হবে বিদেশ যাওয়ার সবধরনের বৈধ কাগজপত্র। কিন্তু সরকারের এমন চমৎকার আয়োজনের পরও প্রচারণার অভাবে সেন্টারটি সম্পর্কে অনেকেই জানে না। বিমানবন্দরের আশপাশের লোকজনও এ সম্পর্কে জানে না! দেশের মানুষকে এ সেন্টার সম্পর্কে জানাতে প্রচারণা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন খোদ বিদেশ যাত্রীরাই।
বঙ্গবন্ধু ওয়েজ আর্নার্স সেন্টারে আসাদের জন্য রয়েছে রেজিস্ট্রার খাতা। সেটি থেকে জানা যায়, সেন্টারে ৪৯ জন থাকার মতো ব্যবস্থা আছে। এখন পর্যন্ত ৩০ যাত্রী একসঙ্গে এ সেন্টারে রাত যাপন করেছেন। প্রতিদিন গড়ে ৮-১০ জন এ সেন্টারে আসেন। চলতি মাসে এখন পর্যন্ত ৯২ জন গেস্ট এ সেন্টারে থেকেছেন।
এ বিষয়ে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের প্রশাসন শাখার সহকারী পরিচালক মো. নাজমুল হক বাংলানিউজকে বলেন, প্রচারণা নির্ভর করে মিডিয়ার ওপর। এর প্রচারের জন্য বিভিন্ন দিবসে আমরা অনেক মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দিয়েছি। সামনে আরও দেব। এছাড়া সেন্টারের প্রচারের জন্য আমরা অনেক স্টিকার বানাচ্ছি। যা দেশের সবগুলো জেলায় সরকারি অফিস এবং বিমানবন্দরে লাগিয়ে দেব। সব জেলা অফিসে আমরা লিফলেট দিয়েছি। এছাড়া বিমানবন্দর থেকে সেন্টার পর্যন্ত নির্দেশিকা লাগানো হবে।
তিনি আরও বলেন, আগামীতে এ সেন্টারে লোকসংখ্যা যদি বাড়ে তাহলে ৪২ কোটি টাকা ব্যয় করে ৩০০ শয্যার একটি ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। ভবনটি পাশের একটি জমিতে নির্মাণ করা হবে।
এ অর্থবছরে এ ব্যাপারে পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছিল। তবে এবার এটি পাস হয়নি। আশা করছি আগামী অর্থ বছরে পরিকল্পনাটি পাস হবে।
বঙ্গবন্ধু ওয়েজ আর্নার্স সেন্টারে থাকতে বুকিংসহ সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করা যাবে ০১৩১০৩৫০৫৫৫ ও ০১৭৫৪৭১৫৭২০ নম্বরে। যাত্রীদের সরাসরি বা অনলাইনে আবেদন করার সঙ্গে ১০০ টাকা ফি দিতে হবে। অনলাইনে আবেদনের ঠিকানা http://bwec.wewb.gov.bd/wewb-centre/booking/search। সেন্টারে যাওয়ার জন্য নামতে হবে বিমানবন্দর স্টেশনের পাশের কাওলা বাসস্ট্যান্ডে বা খিলক্ষেত বাস স্ট্যান্ডে। এরপর রাস্তার পূর্ব পাশ থেকে রিকশা বা ইজিবাইকে করে সেন্টারে যেতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২৩
ইএসএস/এমজে