রাজশাহী: ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে রেললাইনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের আগুন ও অবরোধের ঘটনায় আরও একটি মামলা হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের রাজশাহীর জ্যেষ্ঠ উপ-সহকারী প্রকৌশলী ভবেশ চন্দ্র রাজবংশী বাদী হয়ে রেলওয়ে থানায় মামলাটি করেছেন।
মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) সকালে রাজশাহী রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোপাল কুমার মামলার এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সোমবার (১৩ মার্চ) রাত ১১টার দিকে মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। এতে রেললাইনে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করা, রেললাইনের ৯২টি প্যান্ডল ক্লিপ খুলে নেওয়া, একটি স্টিল স্লিপার চুরি করা এবং একটি স্লিপার পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ এনেছে রেল কর্তৃপক্ষ। এছাড়া রেলওয়ের একটি গুমটি ঘরের জানালা ভাঙচুরেরও অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার আসামি প্রশ্নে ওসি বলেন, এজাহারে ২০০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন সেটি মামলার এজাহারে উল্লেখ নেই। বলা হয়েছে- অজ্ঞাতনামা ২০০ থেকে ৩০০ বিক্ষুব্ধ জনতা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। এখন কারা এসবের সঙ্গে জড়িত তা পুলিশ খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
এর আগে শনিবার (১১ মার্চ) রাবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারের ব্যবসায়ীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এর জের ধরে বিনোদপুর বাজারের দোকানপাট ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ব্যবসায়ীদের ইটপাটকেল ও পুলিশের টিয়ার সেল এবং রাবার বুলেটে শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক ও পুলিশসহ দুই শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। এক পর্যায়ে রাবি শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনে রেললাইন অবরোধ করেন। তার পরদিন (১২ মার্চ) রাতেও শিক্ষার্থীদের একটি অংশ রেললাইনে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে আবারও অবরোধ করেন। এজন্য পরপর দুই দিনই ৩-৪ ঘণ্টা করে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের নিয়মিত ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। এতে করে রেলের চরম সিডিউল বিপর্যয় হয়।
এর আগে সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অজ্ঞাতনামা ৫০০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে। এছাড়া সংঘর্ষ চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ বক্স ও পুলিশের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া এবং সাত পুলিশ সদস্যকে আহত করার অভিযোগে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলা হয়েছে।
এই মামলায়ও ২৫০ থেকে ৩০০ জন অজ্ঞাতনামা বিক্ষুব্ধ জনতাকে আসামি করা হয়েছে। ফলে সংঘর্ষের ঘটনায় এই নিয়ে এখন পর্যন্ত তিনটি মামলা দায়ের করা হলো।
এর মধ্যে দুইটি মতিহার থানায় এবং একটি রেলওয়ে থানায়।
এদিকে রাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ঘটনার দিন অগ্নিসংযোগ ও হামলার সঙ্গে বহিরাগত বিশেষ গোষ্ঠী জড়িত। পুরো বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য তদন্ত কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। এই তদন্ত কমিটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ঘটনা বিশ্লেষণ করে তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে রিপোর্ট দেবেন। এজন্য তিন সদস্যের কমিটি পুনর্গঠন করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট করা হয়েছে। সাতদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তারপর সেই অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া শিক্ষার্থী প্রতিনিধির সঙ্গেও বসা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২৩
এসএস/এসআইএস