বরিশাল: ভারতের মিডিয়ায় বাংলাদেশ নিয়ে প্রতিনিয়ত অপপ্রচার চলছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি জানিয়েছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ভারতের মিডিয়ায় (রিপাবলিক বাংলা) যে মন্তব্য করা হয়েছে, তার প্রতিবাদ সরকার জানাবে।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে বরিশাল জেলা পুলিশ লাইন্সের ড্রিল শেডে বরিশাল বিভাগের আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা এ কথা জানান।
তিনি বলেন, দেশের অন্য সব স্থানের চেয়ে বরিশালের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভালো। যদিও মাঝে মাঝে রাস্তা ব্লক করে ফেলা হয়, তবে এটি রোধে সবাইকে চেষ্টা করতে হবে। আর রাস্তা ব্লক না করে দাবি-দাওয়া সঠিক চ্যানেলে প্লেস করা সবচেয়ে ভালো উপায়।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আমার সঙ্গে এখানে ছাত্র প্রতিনিধিরা রয়েছে, তাদের আমি সহায়তা করার জন্য বলেছি। রাস্তা ব্লক করে যাতে জনগণকে ভোগান্তির মধ্যে না ফেলা হয় সেদিকে সবাই খেয়াল রাখবেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমাদের বাহিনীগুলোকে জনবান্ধব করে গড়ে তুলতে হবে। জনবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে আমাদের চেষ্টা-পদক্ষেপ নিয়ে এখানে (মতবিনিময় সভায়) আলোচনা হয়েছে। আমাদের বাহিনীরও অনেক সমস্যা রয়েছে-যেমন গাড়ি, অর্থসহ নানান লজিস্টিক সমস্যা রয়েছে, সেগুলো যেমন উন্নতি কীভাবে করা যায়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও কীভাবে উন্নতি করা যায়, এ ব্যাপারেও আলোচনা করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম নিয়ে মন্তব্যের জন্য আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানানো হবে
গত ১২ নভেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কথিত গণমাধ্যম ‘রিপাবলিক বাংলা’র ইউটিউব চ্যানেলে ‘চট্টগ্রাম আলাদা রাষ্ট্র হবে? মাউন্টব্যাটেন- নেহেরুর ভুল ঠিক করার সময় এসেছে? ভারতের হস্তক্ষেপ জরুরি?’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রচার হয়। যেখানে উপস্থাপক ময়ূখ রঞ্জন ঘোষকে বেজায় উত্তেজিত কণ্ঠে বলতে শোনা যায়, ‘চট্টগ্রাম স্ট্র্যাটিজিক্যালি (কৌশলগতভাবে) বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরামসহ উত্তর-পূর্ব ভারত লাগোয়া যে অঞ্চল রয়েছে তাহলো চট্টগ্রাম। উত্তরপূর্ব ভারতের এই মুহূর্তে কোনো সমুদ্রপথ নেই। আসাম বা ত্রিপুরায় ভারতীয় পণ্য পরিবহনে অনেক অর্থ ব্যয় হয়। অনেকটা পথ ঘুরে যেতে হয় এসব পণ্য। তাই চট্টগ্রাম যদি ভারতের হয়ে যায় তবে এই পথ অনেকটা কমে যাবে। ’
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই প্রতিবাদ জানানো হবে, আর প্রতিবাদের বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানাবে। কারণ অন্য দেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ পাঠায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ ঘটনায় স্ট্রং একটি প্রটেস্ট লেটার (কড়া প্রতিবাদলিপি) তাদের (ভারতকে) দেওয়ার জন্য বলা হবে।
তিনি বলেন, শুধু এই একটা বিষয় নয়- ভারতীয় গণমাধ্যম ডেইলি আমাদের সম্পর্কে অপপ্রচার করছে, এ ব্যাপারে আপনারা সবসময় সজাগ থাকবেন। তারা মিথ্যা রিপোর্ট ডেইলি দিয়ে যাচ্ছে, তারা যাতে মিথ্যে রিপোর্ট না দেয় সেজন্য আমি আপনাদের সহযোগিতা চাচ্ছি।
সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আপনারা সত্য রিপোর্ট দেন, আমরা যদি কোনো ভুল করি, আপনারা বলেন আমরা সেটা র্যাক্টিফাই (সংশোধন) করবো। আমার ভেতরে কোনো রকম দুর্নীতি থাকলে, আপনারা বলুন আমার উত্তর দিতে দ্বিধা নেই। কিন্তু কোনো মিথ্যা রিপোর্ট আপনারা দেবেন না, কারণ মিথ্যা বিষয়টি একটা সময় প্রকাশ পাবেই।
ভারতীয়দের মিথ্যা রিপোর্ট প্রচারের বিষয়টি এখন সবাই জানে মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, এখন এমন অবস্থা, তারা সত্য রিপোর্ট দিলে সেটাও সবাই বলবে মিথ্যা রিপোর্ট। আপনারা মিডিয়ার মাধ্যমে এর প্রতিবাদ করুন, আর আপনারাই এ ব্যাপারে আমাদের বড় শক্তি।
বরগুনার পুলিশ সুপার (এসপি) ইব্রাহিম খলিলের বড় ভাইয়ের পুলিশ প্রটোকল পাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বরগুনার এসপির বিষয়ে তদন্ত করে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুই-একদিন দেরি হচ্ছে হয়তো, তবে একটি ফরমাল ইনভেস্টিগেশন তো করতেই হবে। আর তাতে যদি তাকে দোষী পাওয়া যায়, অবশ্যই তার বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
সাগর-রুনি হত্যার বিচারের সুরাহা হবেই
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচারের বিষয়ে তিনি বলেন, এবারে অবশ্যই একটা সুরাহা হবে। এখানে ছয় মাসের সময় দেওয়া হয়েছে। আর আইজিপি সাহেবের নির্দেশে নতুন একটি টিমও করে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, পুলিশ বাহিনীর আস্থার একটি সংকট ছিল, আর এটা হঠাৎ করে ঠিক হয়ে যাবে না। কিন্তু আগের থেকে কিছুটা উন্নতি হয়েছে, আস্তে আস্তে আরও হবে। সবাইকে ধৈর্য্য ধরতে হবে। আর মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা সবার আগে জনসচেতনতা বাড়াতে পারেন।
নীরব চাঁদাবাজির বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, এ রকম কোনো বিষয় থাকলে এসপি, পুলিশ কমিশনার ও ডিআইজি সাহেবকে জানান। তারা ব্যবস্থা না নিলে আমাকে কিংবা আইজি সাহেবকে জানান, তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।
মাদকের বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, মাদক আমাদের বড় সমস্যা। বাহকরা ধরা পড়ছে বেশিরভাগ সময়, হোতাগুলো ধরা পড়ছে না। কিন্তু এবার বেশ কয়েকজন বড় বড় হোতা ধরা পড়েছে, বদি কিন্তু এবার জেলের ভেতর আছে। শুনলাম কক্সবাজার জেলে ওনাকে খুব আরামে রাখা হয়, তাই চট্টগ্রামে ট্রান্সফার করে নিয়ে আসা হয়েছে।
‘মাদক আমাদের দেশের বড় সমস্যা, এর সমাধান আমাদের সবাইকে মিলে করতে হবে। আপনাদের কাছে অনুরোধ মাদকের বিষয়ে তথ্য দেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর অ্যাকশনে না গেলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা অবশ্যই যাব। পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীকেও তথ্য দিতে পারেন। পেপারে আগে না দিয়ে এদের কাছে জানান, যদি তারা না ব্যবস্থা নেয় তাহলে পেপারে দিয়ে দেন। কিন্তু মাদকের সঙ্গে জড়িতদের ধরতে আমাদের সহযোগিতা করুন। মিডিয়ায় আগে দিলে তারা সজাগ হয়ে যায়, তাই আমরা চাই ঘুমিয়ে থাকা অবস্থাতেই তাদের ধরে ফেলতে। ’
মামলার বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, এখন অনেক মামলা হচ্ছে, অনেক নির্দোষ লোককে আসামি করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে আপনাদের সজাগ হতে হবে। আমি বাহিনী প্রধানদেরও বলেছি, যারা এ ধরনের মামলা করবে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। আগে পুলিশ বাদী হয়ে অনেক আসামি করতো, কিন্তু এখন পুলিশ সেরকম কেস দেয় না। এখন দেয় সাধারণ মানুষ।
পুলিশপ্রধান (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম, র্যাবের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান, বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো রায়হান কাওছার, বরিশাল সেনানিবাসের ৭ পদাতিক ডিভিশনের ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিরুল আজিমসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০২৪
এমএস/এইচএ/