দিনাজপুর: বাংলাদেশের বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির প্রাণীগুলোর মধ্যে নীলগাই অন্যতম। উত্তরের জেলা দিনাজপুরে এক সময় প্রাণীটির বিচরণ থাকলেও বর্তমানে তা শুধুই স্মৃতি।
দিনাজপুর বিরল উপজেলার ৮ নম্বর ধর্মপুর ইউনিয়নের শালবনে আগে বানর, খোরগোশ, নীলগাই, বনরুইসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির দেখা মিলতো। এখন সামান্য কিছ পাখি ছাড়া অন্যান্য প্রাণীদের দেখা যায় না। সম্প্রতি সীমান্ত ঘেঁষা প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে পালিয়ে আসা একটি বিলুপ্ত প্রজাতির নীলগাই আশ্রয় নিয়েছে এই বনে। গত কয়েকদিন থেকেই ধর্মপুর বীটের শালবনের বিভিন্ন জায়াগায় নীলগাইটিকে চলাফেরা করতে ও ঘাস খেতে দেখা গেছে। নীলগাইটি বন্য পরিবেশে নিরাপদ রাখতে সাধারণ জনগণকে সচেতনার পাশাপাশি নজরদারিতে রেখেছে বন বিভাগ।
জানা গেছে, গত শনিবার (১১ মার্চ) সকালে বনের শুকনো পাতা সংগ্রহ করতে গিয়ে বনের মধ্যে নীলগাইটি দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে তারা বন বিভাগকে খবর দেন। নীলগাইটি বর্তমানে ধর্মপুর ইউনিয়নের সাতদাগ, রানীপুর, কৈকুড়ি, পোলইছাপা, কামদেবপুরসহ আশেপাশের শালবনে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, শালবনে শুকনো পাতা আনতে গিয়ে নীলগাইটি দেখতে পাই। প্রাণীটি বনের মধ্যে ছুটাছুটি করছিল। পরে বনের ফাকা জায়গায় ধানক্ষেতের আশেপাশে ঘাস খাচ্ছিল। মানুষ দেখে নীলগাইটি দুরে দুরে চলে যাচ্ছে। কখনও রানীপুর, কখনও সাতদাগ, আবার কখনও কৈকুড়িসহ বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যাচ্ছে এটিকে।
ধর্মপুর বন বীটের রানীপুর পিপির ইনচার্জ রতন চন্দ্র রায় বলেন, গত তিন দিন থেকে আমরা নীলগাইটি দেখেছি। এই প্রাণীটি কেউ যেন ধরার চেষ্টা না করে এ জন্য আমরা সবাইকে সতর্ক করেছি। পাশাপাশি আমরা যারা বনকর্মীরা আছি সবাই প্রাণীটির ওপর নজর রেখেছি। দিনরাত চেষ্টা করছি নীলগাইটি যেন কোনো ক্ষতি না হয়। এটি একটি নারী নীলগাই।
এ বিষয়ে ধর্মপুর বনের বীট কর্মকর্তা মহসীন আলী বলেন, শনিবার (১১ মার্চ) সকালে স্থানীয়দের ফোনের মাধ্যমে ধর্মপুর শালবনে একটি নীলগাই আসার খবর পাই। ধারণা করা হচ্ছে পাশে থাকা ভারতের সীমান্ত পেরিয়ে এটি বাংলাদেশে এসেছে। স্থানীয় উৎসুক জনতা নীলগাইটি দেখতে ভিড় করছেন। এটি অনেক শান্ত ও নীরিহ প্রাণী। যেন কেউ না আটক করে বা শিকার করে এ জন্য আমরা এলাকার মসজিদের মাইকিং করা হয়েছে। নীলগাইটির বিষয়ে আমরা উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে অবগত করেছি। আমরা প্রাণীটিকে আটক করার চেষ্টাও করছি না। আমরা চাই বনের প্রাণীটি সুন্দরভাবে বনেই থাকুক।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ১৬ মার্চ ভারত সীমান্ত পেরিয়ে বিরল উপজেলার ধর্মপুরের কামদেবপুরে একটি নীলগাই এসেছিল। সেটি পরবর্তীতে জনতার ধাওয়ার কারণে স্ট্রোক করে মারা যায়। এর আগে ২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারি নঁওগার মান্দা উপজেলায় একটি পুরুষ নীলগাই ও একই বছরের ১৭ এপ্রিল নঁওগার পত্নীতলার কালুপাড়া সীমান্ত থেকে আরও একটি নীলগাই উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ঠাঁকুরগাও সদর উপজেলার পটুয়া গ্রাম থেকে সর্বপ্রথম একটি নারী নীলগাই উদ্ধার করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২৩
এফআর