ঢাকা: কূটনীতিতে অনেক সংবেদনশীল ইস্যু থাকে। সেসব বিষয় কূটনীতিকদের দেখতে হয়।
রোববার (১৯ মার্চ) ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ডিক্যাব) রজতজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে এ পরামর্শ দেন অতিথিরা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ৫২ বছরের ভ্রমণে প্রায় ত্রিশ বছর কেটেছে সামরিক শাসকের দ্বারা। সামরিক শাসকের লেবাস বা গণতন্ত্রের লেবাসে তারা শাসন করেছেন। ৩২ বছরের মধ্যে বিশ বছর বাদ দিলে এটা খুবই স্বল্প সময়।
কূটনীতি নিয়ে কাজ করা গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, আপনাদের কাজের ৩৬৫ দিন বিভিন্ন ইস্যু থাকবে। এর মধ্যে বছরে কিছু উচ্চ পর্যায়ের সংবেদনশীল ইস্যু থাকবে, যেগুলো আপনারা জানলেও সিদ্ধান্ত নিতে হবে প্রকাশ করবেন কি করবেন না। একটা ভালো উদ্যোগ কখন প্রকাশ্যে আনতে হবে সেটির ওপর নির্ভর করে সেই উদ্যোগের সফলতা।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, কূটনীতিতে ব্যক্তি স্বার্থ বলে কিছুই নেই। বাংলাদেশ বর্তমানে যে অবস্থায় আছে, সেই জায়গায় দেশের অবস্থানকে ঠিক রেখে আমাদের মূলনীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ বিষয়টিকে ঠিক রেখে কাজ করে যেতে হবে।
কূটনীতি, আঞ্চলিক রাজনীতি, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন ইস্যু বিবেচনায় বিশ্লেষণধর্মী বা গবেষণাধর্মী লেখার অভাব রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্যাটিজিক স্টাডিজে (বিআইআইএস) ডিক্যাবের আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেন, কূটনীতিতে অনেক সংবেদনশীল ইস্যু থাকে। সেসব বিষয় কূটনীতিকদের দেখতে হয়। এক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থটা দেখতে হয়। এ বিষয়ে গণমাধ্যমের ভূমিকা দরকার। গণমাধ্যমকেও জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় রাখতে হবে।
ডিক্যাবের রজতজয়ন্তী উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনও। যুক্তরাজ্যে অবস্থান করা মন্ত্রী এক ভিডিও বার্তায় বলেন, গণমাধ্যমকে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে ভূমিকা পালন করতে হবে। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে গণমাধ্যমের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে।
অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, একজন সাংবাদিক চাইলেও এখন আর সাধারণ মানুষকে হালকা করে নেওয়ার সুযোগ নেই। কেননা, প্রযুক্তির কারণে যে কেউ চাইলে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। আর এ কারণে সংবাদমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা খুব জরুরি। সাংবাদিকদের পড়াশোনা করতে হবে। দেখে শুনে বুঝে লিখতে হবে, যাতে করে মানুষের কাছে সেই গ্রহণযোগ্যতা থাকে।
সাবেক এ রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের ৫২ বছরের ভ্রমণে একটি পূর্ণাঙ্গ ন্যারেটিভ তৈরি হয়নি। যার কারণে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ সম্পর্কে ধারাবাহিকতা হয়নি। কারণ, একেক সরকার এসে এক ন্যারেটিভ তৈরি করে। এই যে শূন্যস্থান, এটা পূরণ করার জন্য গণমাধ্যম এবং কূটনীতিকদের ভূমিকা রাখতে হবে।
ভোরের কাগজের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, বর্তমানে সাংবাদিকদের বড় চ্যালেঞ্জ এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। এখানে অনেক তথ্য ঘুরছে। দিন দিন বিভিন্ন ধরণের চ্যালেঞ্জ বাড়ছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে সাংবাদিকদের বুদ্ধিভিত্তিক চর্চা বাড়াতে হবে।
প্যানেল আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মীর মোস্তাফিজুর রহমান ও শেখ শাহরিয়ার জামান।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ডিক্যাবের সভাপতি রেজাউল করিম লোটাস ও সাধারণ সম্পাদক ইমরুল কায়েস। সংগঠনের সাবেক সভাপতি রাহীদ এজাজ ও পান্থ রহমান অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০২৩
টিআর/এমজে