ঢাকা, সোমবার, ১৯ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অরক্ষিত রেলক্রসিং, দায় নেয় না কেউ

নিশাত বিজয়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০২৩
অরক্ষিত রেলক্রসিং, দায় নেয় না কেউ বুধবার রাতে রাজধানীর মালিবাগ রেলক্রসিংয়ে একটি বাসকে ধাক্কা দেয় ট্রেন। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: বুধবার রাতে রাজধানীর মালিবাগ রেলগেটে পঞ্চগড়গামী দ্রুতযান এক্সপ্রেসের সঙ্গে সোহাগ পরিবহনের একটি বাসের দুর্ঘটনা ঘটে। এর ফলে ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ প্রায় দুই ঘণ্টা বন্ধ থাকে।

এ দুর্ঘটনার মতো অধিকাংশ দুর্ঘটনারই কোনো দায় নেন না রেল কিংবা সড়ক বিভাগের দায়িত্বশীলরা। উদ্বেগের বিষয় হলো, দেশে ৮২ শতাংশ রেলক্রসিংই অনিরাপদ। বুধবারের দুর্ঘটনায় রেলক্রসিং ঘিরে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে রাজধানীবাসীর মধ্যে।

রাজধানীর রেলক্রসিংগুলোতে দেখা যায়, রেলক্রসিংয়ে রেল আসার আগে গেটকিপার সড়ক বন্ধ করলেও কেউ কেউ বাধা অতিক্রম করে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার করেন। আবার অনেক রেলক্রসিংয়ে পর্যাপ্ত গেটকিপার নেই।

বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) রাজধানীর খিলগাঁও, মালিবাগ ও কারওয়ান বাজার রেলক্রসিং এলাকার বিভিন্ন রেলক্রসিংয়ে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়।

রেলওয়ের ৪৮ শতাংশ ক্রসিং অবৈধ
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে, দেশের ২,৯৫৯ কিলোমিটার রেলপথে  ২,৮৫৬টি লেভেল ক্রসিং আছে। এর মধ্যে ১,৪৯৫টি বৈধ ও এক হাজার ৩৬১টি অবৈধ। প্রায় ৪৮ শতাংশ ক্রসিং অবৈধ।

এরমধ্যে পূর্বাঞ্চল রেলে মোট ১ হাজার ৩৭৭টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে, যার মধ্যে ৮১১টি অবৈধ। অন্যদিকে পশ্চিমাঞ্চলে মোট ১ হাজার ৪৭৯টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে ৫৫০টি অবৈধ।

৯৬১টি ক্রসিংয়ে কোনো গেটম্যান নেই। এরমধ্যে বৈধ লেভেল ক্রসিংগুলোর মধ্যে ৬৩২টিতে গেটকিপার নেই। সব মিলিয়ে দেশে ৮২ শতাংশ রেলক্রসিং অনিরাপদ।

অবৈধ লেভেল ক্রসিংগুলোর মধ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ৫১৬টি নির্মাণ করেছে। এছাড়া সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) ১১টি, ইউনিয়ন পরিষদ ৩৬৩টি, পৌরসভা ৭৯টি, সিটি করপোরেশন ৩৪টি, জেলা পরিষদ ১৩টি, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ৩টি, বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ১টি, জয়পুরহাট চিনিকল কর্তৃপক্ষ ১টি, ব্যক্তিপ্রতিষ্ঠান (বেসরকারি) ৩টি, অন্যান্য ৯২টি নির্মাণ করেছে।

আর ৩৩ টি লেভেল ক্রসিং কারা চালাচ্ছে সেটার কোনো তথ্য নেই রেলওয়ের কাছে। অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ে যেমন গেটকিপার নেই, নেই কোনো সুরক্ষা সরঞ্জামও।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, ঢাকায় প্রায় ৩৪টির মতো রেলক্রসিং রয়েছে, যেগুলোর জন্য শহরে প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। প্রতিটি ক্রসিংয়ের যানজট আশেপাশের এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়ে। আর মাঝেমধ্যেই এসব রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। এই পরিস্থিতিতে দুর্ঘটনা ও যানজট কমানোর জন্য আন্ডারপাস ও ওভারপাস করা প্রয়োজন। সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকে রেলের জন্য। কিন্তু এসব কাজের দিকে নজর নেই রেলেওয়ের।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, রেলক্রসিংয়ের দুর্ঘটনার জন্য অনেক সময় বেপরোয়া গাড়ির চালকেরও দায় থাকে। তাদের গাফিলতির জন্য এই দুর্ঘটনা ঘটে। রেল সহজে থামানো যায় না। কিন্তু বাস তো সহজে থামানো যায়। প্রায় সময় দেখা যায়, গেটকিপার রেল আসার সময় বাধা দিলেও অনেক চালক বাধা অতিক্রম করে চলে যেতে চায়। আর অনেক জায়গায় অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ের জন্য দুর্ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। তাই রেল কর্তৃপক্ষকের আরও বেশি তদারকি প্রয়োজন দুর্ঘটনা কমানোর জন্য।

১০০ গজের আশপাশে রেলক্রসিংয়ের এলাকায় কোনো দোকানপাট না করার পরামর্শ দিয়েছেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ সাইফুন নেওয়াজ। তিনি বলেন, এই দূরত্বের আশেপাশে কোনোভাবেই দোকানপাট বা কোনো স্থাপনা করতে দেওয়া যাবে না। কারণ যখন রেল আসে তখন যেন মানুষ বুঝতে পারে রেল আসছে।

একইসাথে রেল কর্তৃপক্ষকে অরক্ষিত রেলক্রসিংগুলোর দিকেও নজর দিতে হবে। সেগুলো খুঁজে বের করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা বাড়তেই থাকবে বলে মত এই যোগাযোগ বিশেষজ্ঞের।

রেল কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রেলের লোকবল কম। এত কম লোক দিয়ে পুরো রেলক্রসিং রক্ষা করা কঠিন হয়ে যায়। এর মধ্যে অনেক জায়গায় প্রভাবশালীরা রাস্তা দখল করে অবৈধ রেলক্রসিং নতুন করে তৈরি করে। সেগুলোর জন্য দুর্ঘটনা বাড়ছে। রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা রোধে রেল কর্তৃপক্ষ কাজ করছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০২৩
এনবি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।