চাঁদপুর: পদ্মা, মেঘনা, ডাকাতিয়া ও ধনাগোদা নদীর উপকূলীয় জেলা চাঁদপুর। এক সময় এ জেলায় প্রায় ৯৫ ভাগ মানুষ আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করে আসছিল এবং আর্সেনিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যাও ছিল প্রায় ৮ হাজার।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বলছে, বর্তমানে চাঁদপুরের ৮ উপজেলার প্রায় ২৬ লাখ মানুষের মধ্যে ৭০ ভাগ মানুষের জন্য পানির উৎস আর্সেনিকমুক্ত ও নিরাপদ।
চাঁদপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের তথ্যে জানা গেছে, ১৯৯৩ সালে প্রথম চাঁদপুরে নলকূপে আর্সেনিক শনাক্ত হয়। এরপর জেলার ৮ উপজেলার অধিকাংশ নলকূপের পানিতে আর্সেনিক শনাক্ত হতে থাকে। ধারবাহিকতায় ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে জেলার সর্বত্র আর্সেনিকের থাবা। তবে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক থাকলেও এ অঞ্চলের মানুষের সচেতনতায় অনেকাংশই রক্ষা পেয়েছে বিশাল জনপদ। মানুষ নলকূপের পানি পান করা থেকে বিরত থাকা ও বিকল্প বিশুদ্ধ খাবার পানি পান করায় এ সমস্যা থেকে রক্ষা পায়।
চাঁদপুরে আর্সেনিক রোগে আক্রান্ত এবং নিরাপদ পানি ব্যবহারের ওপর জনসচেতনতামূলক কাজ করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন চাঁদপুর কমিউনিটি ডেভেলেপমেন্ট সংস্থা। এই সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক সেলিম পাটওয়ারী বাংলানিউজকে বলেন, ২০০৪ সালে সরকারের আর্সেনিক মিটিগেশন প্রকল্পের আওতায় আমরা পাড়া মহল্লায় জনসচেতনতামূলক কাজ করেছি। বিশেষ করে আমাদের মাঠ পর্যায়ের সমীক্ষায় আর্সেনিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যাও কমে এসেছে। এখন এই ধরনের কোনো প্রকল্প নেই। যে কারণে পরিসংখ্যানও বলতে পারছি না। তবে সরকার এখন সচেতনতার চাইতে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থার ওপর বেশি জোর দিয়েছে।
চাঁদপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা তাহমিন আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, আর্সেনিকে আক্রান্ত রোগী এখন চাঁদপুর জেলায় নেই। এই সংক্রান্ত কোনো রিপোর্ট উপজেলা থেকেও জেলায় আসে না। এক সময় শাহরাস্তি উপজেলায় অনেক রোগী ছিল। চিকিৎসা দেওয়ার পর তারা সবাই এখন সুস্থ।
চাঁদপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু মুসা মোহাম্মদ ফয়সাল বাংলানিউজকে বলেন, চাঁদপুর জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়মিত গভীর নলকূপ স্থাপন ও পৌর এলাকায় পাম্প হাউজ এবং ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানি শোধনাগার নির্মাণ করার মাধ্যমে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আমাদের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ৭০ ভাগ মানুষ আর্সেনিকমুক্ত নিরাপদ পানির আওতায় এসেছে। এই সংখ্যাটি আরও বেশি হতে পারে। তবে সেই তথ্য আমাদের কাছে নেই।
তিনি আরও বলেন, সরকারের প্রত্যেক আর্থিক বছরে জেলায় বরাদ্দকৃত গভীর নলকূপ বসানো হচ্ছে। এছাড়াও অনেকে ব্যক্তিগত খরচে গভীর নলকূপ বসিয়েছেন। সেই সংখ্যাটি আমাদের জানানো হয় না। কিংবা তাদের পানিতে আর্সেনিক আছে কিনা তাও নিশ্চিত হয় না পরীক্ষা না করায়।
এছাড়াও আমরা প্রত্যেক উপজেলায় নলকূপের পানিতে আর্সেনিক আছে কিনা তা নিয়মিত পরীক্ষা করে আসছি এবং একটি অ্যাপের মাধ্যমে উপজেলা কর্মকর্তাগণ আমাদের তথ্য দিচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০২৩
আরএ